চিকেন বনাম ডিম: কোনটি বেশি পুষ্টিকর? পুষ্টিবিদরা যা বলছেন

Nutritional comparison of chicken and eggs: চিকেন এবং ডিম - দুটিই প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই দুটি খাবারের মধ্যে কোনটি বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই…

Debolina Roy

 

Nutritional comparison of chicken and eggs: চিকেন এবং ডিম – দুটিই প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই দুটি খাবারের মধ্যে কোনটি বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর? এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই জাগে। আসুন জেনে নেওয়া যাক পুষ্টিবিদদের মতামত।

পুষ্টিবিদদের মতামত

কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার জানিয়েছেন, চিকেন এবং ডিম দুটিই অত্যন্ত উপকারী খাবার। এই দুই খাবারেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিনি আরও বলেন, “দুটি খাবারই শরীরের জন্য উপকারী, তবে কার কোন খাবার ‘সুট’ করছে, সেটাও দেখার বিষয়। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, ডিম না চিকেন কোনটা পাতে রাখবেন।” অন্য একজন পুষ্টিবিদ শ্রুতি কেলুস্কর জানিয়েছেন, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, “ন্যূনতম শারীরিক ক্রিয়াকলাপ চালানোর জন্য একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য কমপক্ষে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন।”

চিকেনের পুষ্টিগুণ

চিকেন একটি উচ্চ মানের প্রোটিনের উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

চিকেনের পুষ্টিগুণ:

  1. পেশী গঠনে সাহায্য করে: চিকেনের উচ্চ মানের প্রোটিন পেশী গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে।
  2. হাড় শক্তিশালী করে: এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  3. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিকেনে থাকা নিয়াসিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  4. মেটাবলিজম বাড়ায়: বি ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় চিকেন শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
  5. মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: এতে থাকা ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মেজাজ ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।

ডিমের পুষ্টিগুণ

ডিম একটি সুষম খাদ্য যা প্রোটিন ছাড়াও বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস।

ডিমের পুষ্টিগুণ:

  • উচ্চ মানের প্রোটিন
  • ভিটামিন ডি
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি২
  • ভিটামিন বি১২
  • ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড

ডিম খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:

  1. প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস: ১০০ গ্রাম ডিমে রয়েছে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন।
  2. হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়: প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে।
  3. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: ডিমে থাকা লুটিন ও জিয়াজ্যান্থিন চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
  4. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে: ডিমে থাকা কোলিন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
  5. গর্ভাবস্থায় উপকারী: ডিমে থাকা ফোলেট গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে সাহায্য করে।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

যদিও চিকেন এবং ডিম উভয়ই প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস, তবুও তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে:

  1. প্রোটিনের পরিমাণ: ১০০ গ্রাম চিকেনে প্রায় ৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে, অন্যদিকে ১০০ গ্রাম ডিমে থাকে প্রায় ১৩ গ্রাম প্রোটিন।
  2. ক্যালোরি: চিকেনে ডিমের তুলনায় কম ক্যালোরি থাকে। ১০০ গ্রাম চিকেনে প্রায় ১৬৫ ক্যালোরি থাকে, অন্যদিকে ১০০ গ্রাম ডিমে থাকে প্রায় ১৫৫ ক্যালোরি।
  3. ফ্যাট: ডিমে চিকেনের তুলনায় বেশি ফ্যাট থাকে। ১০০ গ্রাম ডিমে প্রায় ১১ গ্রাম ফ্যাট থাকে, অন্যদিকে ১০০ গ্রাম চিকেনে থাকে প্রায় ৩.৬ গ্রাম ফ্যাট।
  4. কোলেস্টেরল: ডিমের কুসুমে কিছুটা কোলেস্টেরল থাকে, যা চিকেনে নেই।
  5. ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ: ডিমে চিকেনের তুলনায় বেশি ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, এবং ফোলেট থাকে।
    Diabetes and Snacking: চাঞ্চল্যকর তথ্য! ডায়াবেটিস রোগীরা মুড়ি খেলে কী হবে জানলে আপনিও অবাক হবেন!

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

পুষ্টিবিদরা বলছেন, চিকেন এবং ডিম দুটিই স্বাস্থ্যকর খাবার এবং একটি সুষম খাদ্যতালিকায় উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন:

  1. পরিমিত খাওয়া: অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  2. বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যতালিকা: শুধুমাত্র একটি খাবারের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।
  3. প্রস্তুত প্রণালী: চিকেন সিদ্ধ করে খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়।
  4. ব্যক্তিগত প্রয়োজন: প্রত্যেকের শারীরিক প্রয়োজন ভিন্ন, তাই নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত।
  5. স্বাস্থ্যগত সমস্যা: যাদের কোলেস্টেরল বা অন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত।

চিকেন এবং ডিম উভয়ই পুষ্টিকর খাবার এবং একটি সুষম খাদ্যতালিকার অংশ হওয়া উচিত। তবে কোনটি বেশি উপকারী তা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক প্রয়োজন, স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং জীবনযাত্রার উপর। সর্বোপরি, একটি সুষম ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।