বাংলাদেশ প্রতিনিধি
১৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ

Chief Advisor Yunus Accused of Nepotism: বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইউনূস তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অনুগতদের সরকারের উচ্চপদে নিয়োগ দিচ্ছেন, যা নিয়ে দেশজুড়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই এই নতুন সরকারের মধুচন্দ্রিমা পর্ব শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে যে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে। অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সরকারের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর অনুগত ও ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দিচ্ছেন।
Bangladesh Government: শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বৃদ্ধি: ভারতের কূটনৈতিক চা

এই স্বজনপোষণের অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে দুইজন মহিলার নাম। প্রথমজন হলেন নূরজাহান বেগম, যিনি ইউনূসের একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। দ্বিতীয়জন হলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যাকে ‘সুন্দরী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তিনিও ইউনূসের একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বলে জানা গেছে। এই দুইজনকেই উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এই ধরনের স্বজনপোষণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। অতীতেও বিভিন্ন সরকার গঠনের সময় এই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ইউনূসের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ তিনি একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।

ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের সময় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, স্বল্প পরিমাণ ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এই ধারণা থেকেই জন্ম নেয় গ্রামীণ ব্যাংকের, যার জন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।কিন্তু ইউনূসের রাজনৈতিক জীবন মসৃণ ছিল না। তিনি বাংলাদেশে ১৭৪টি মামলার সম্মুখীন হয়েছিলেন, যার মধ্যে ১৭২টি ছিল দেওয়ানি মামলা। এই মামলাগুলি হয়েছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর, যখন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। অভিযোগগুলির মধ্যে ছিল শ্রম আইন লঙ্ঘন, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার। ইউনূস দাবি করেছিলেন যে এই মামলাগুলি রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত।

সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগেই ইউনূস একটি বড় স্বস্তি পেয়েছেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় তাঁর সাজাও বাতিল করা হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে, ইউনূসের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠা অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কিন্তু এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে: একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি কি দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পুরোনো ধারা অনুসরণ করবেন, নাকি একটি নতুন ও স্বচ্ছ পথ দেখাবেন?এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। যদি স্বজনপোষণের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি ইউনূসের ব্যক্তিগত সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কোটা আন্দোলনে ছাত্র মৃত্যুর পিছনে লুকানো সত্য যা জানলে আপনিও স্তম্ভিত

এছাড়াও, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।অন্যদিকে, যদি এই অভিযোগগুলি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি দেখাবে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও কুৎসা ও মিথ্যা প্রচারের একটি বড় সমস্যা রয়েছে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সুশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

যাই হোক, এই পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও বেশি পারদর্শী ও মেধাভিত্তিক হওয়া উচিত। এছাড়াও, মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যাতে তারা সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে পারে এবং জনগণকে সচেতন করতে পারে।

শেষ পর্যন্ত, এই ঘটনা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, কোনো ব্যক্তি যতই বিখ্যাত বা সম্মানিত হোন না কেন, তাঁর কার্যক্রম সবসময় জনগণের পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। গণতন্ত্রে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এবং প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে তাঁর সরকারের কাছ থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করার।বাংলাদেশের জনগণ এখন অপেক্ষা করছে দেখার জন্য যে ইউনূস এই অভিযোগের বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সুশাসনের দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধর্মের পথে গীতার আলো: জীবনবোধের অমৃত বাণী

ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন শেষ! ব্রিটিশ ফার্মের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে CESC

রাজনীতির মাঠ থেকে ওটিটি পর্দায়: সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর এখন ‘জিদ্দি গার্লস’-এর বিদ্রোহী চরিত্রে!

ভারতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ৩.৬১ শতাংশে নেমেছে: সবজির দাম কমায় জনগণের স্বস্তি

রেশন কার্ডে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার প্রস্তাব: কেন্দ্রের পথে রাজ্যের সমর্থন!

আইপিএলের ছক্কার রাজা কে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেখে নিন শীর্ষ দশের তালিকা

মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেট যাত্রার ইতি: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ের ঘোষণা

অষ্টম বেতন কমিশন: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা, হতাশার ছায়া!

ভারতের মাটিতে গোয়েন্দা বিশ্বের মহাজমায়েত: দোভালের নেতৃত্বে দিল্লিতে বৈঠক!

আলো কম? WhatsApp ভিডিও কলে যা করবেন, চমকে যাবেন!

১০

রবিবার থেকে চার জেলায় তাপপ্রবাহের দাপট, কবে মিলবে স্বস্তি

১১

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের শিক্ষার জয়যাত্রা: বাংলার প্রতিষ্ঠান কোথায় দাঁড়িয়ে?

১২

ফেসবুক পোস্ট লুকান: নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে রাখার কৌশল!

১৩

চন্দননগরে ফরাসি শাসনমুক্তির ৭৫ বছর: হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু

১৪

জিমেইলে ই-মেইল শিডিউল: গোপন ট্রিকটি জেনে নিন!

১৫

৫০ টি দোলের শুভেচ্ছা, প্রিয়জনের সাথে উৎসব আরো রঙিন হোক

১৬

স্মার্টফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরাবেন যেভাবে

১৭

ওভার থিংকিং ধরা পরে যে সাতটি আচরণে

১৮

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

১৯

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

২০
close