বাচ্চাদের কথা বলা শুরু: একটি অদ্ভুত যাত্রা

When do babies start to talk: শিশুর জীবনে কথা বলা শুরু করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অভিভাবকরা প্রায়শই উৎসুক থাকেন জানতে যে তাদের সন্তান কখন প্রথম শব্দ উচ্চারণ করবে। এই…

Debolina Roy

 

When do babies start to talk: শিশুর জীবনে কথা বলা শুরু করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অভিভাবকরা প্রায়শই উৎসুক থাকেন জানতে যে তাদের সন্তান কখন প্রথম শব্দ উচ্চারণ করবে। এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব শিশুদের কথা বলা শুরু করার বিভিন্ন পর্যায় এবং সময়কাল সম্পর্কে।

শিশুর ভাষা বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়

শিশুর ভাষা বিকাশ শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। যদিও তারা তখনও কথা বলতে পারে না, তবুও তারা নানাভাবে যোগাযোগ করতে শেখে। আসুন দেখে নেই শিশুর ভাষা বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়গুলি:

জন্ম থেকে ৩ মাস

এই সময়ে শিশুরা:

  • আনন্দ বা খুশি প্রকাশের ধ্বনি উচ্চারণ করে
  • কাউকে দেখে হাসে বা কাঁদে
  • পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে শান্ত হয়

৪ থেকে ৬ মাস

এই বয়সে শিশুরা:

৭ মাস থেকে ১ বছর

এই সময়কালে শিশুরা:

  • “বাবা-বা-বা”, “ডাডা-ডা-ডা” জাতীয় ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করে
  • “বাই-বাই”, “দাদা”, “মামা” ইত্যাদি একটি বা দুটি অর্থপূর্ণ শব্দ বলতে শেখে
  • সহজ নির্দেশ বুঝতে শুরু করে

শিশুর প্রথম শব্দ: একটি মাইলফলক মুহূর্ত

অধিকাংশ শিশু তাদের প্রথম অর্থপূর্ণ শব্দ উচ্চারণ করে ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে। এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময় যখন শিশু ধীরে ধীরে তার চারপাশের জগতকে শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে শেখে।তবে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি শিশুর বিকাশের গতি আলাদা। কিছু শিশু ১২ মাসেই স্পষ্ট শব্দ বলতে শুরু করে, আবার কেউ কেউ ১৮ মাস বা তারও পরে শুরু করতে পারে। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং চিন্তার কারণ নয়।

১ থেকে ২ বছর: শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির সময়

এই বয়সে শিশুদের ভাষা বিকাশে দ্রুত অগ্রগতি দেখা যায়:

  • প্রতি মাসে নতুন নতুন শব্দ শেখে
  • দুটি শব্দের সমন্বয়ে বাক্য গঠন করতে শেখে, যেমন “পানি খাব”, “মা আসো”
  • ১৮ মাসে কমপক্ষে ২০টি শব্দ বলতে পারে
  • ২ বছরে প্রায় ৫০টি শব্দ বলতে পারে

২ থেকে ৩ বছর: জটিল বাক্য গঠনের শুরু

এই সময়ে শিশুর ভাষা দক্ষতা আরও উন্নত হয়:

  • তিন বা চার শব্দের বাক্য বলতে পারে
  • নিজের নাম বলতে পারে
  • “আমি”, “তুমি” ইত্যাদি সর্বনাম ব্যবহার করতে শেখে
  • প্রশ্ন করতে শুরু করে

কখন উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত

যদিও প্রতিটি শিশুর বিকাশের গতি আলাদা, তবুও কিছু লক্ষণ আছে যা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • ১৫ মাস বয়সে: কমপক্ষে তিনটি অর্থপূর্ণ শব্দ বলতে না পারলে
  • ১৮ মাস বয়সে: বাবাকে “বাবা” এবং মাকে “মা” বলতে না পারলে
  • ২৪ মাস বয়সে: ২০-২৫টি শব্দ বলতে না পারলে
  • ৩০ মাস বয়সে: দুটি শব্দের সমন্বয়ে বাক্য বলতে না পারলে
  • ৩৬ মাস বয়সে: কোনো জিনিসের জন্য প্রশ্ন না করলে বা প্রশ্নের উত্তরে শুধু প্রশ্নটিই বারবার উচ্চারণ করলে

শিশুর ভাষা বিকাশে সহায়তা করার উপায়

অভিভাবকরা শিশুর ভাষা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন:

  1. নিয়মিত কথা বলুন: শিশুর সাথে প্রতিদিন কথা বলুন, এমনকি সে যখন উত্তর দিতে পারে না
  2. পড়ে শোনান: নিয়মিত গল্প পড়ে শোনানো শিশুর শব্দভাণ্ডার বাড়াতে সাহায্য করে
  3. গান গাওয়া: ছড়া ও গান শিশুর ভাষা শেখার প্রক্রিয়াকে আনন্দদায়ক করে তোলে
  4. খেলাধুলা: খেলার মাধ্যমে নতুন শব্দ শেখানো যায়
  5. ধৈর্য ধরুন: শিশুকে কথা বলার জন্য চাপ দেবেন না, তার নিজস্ব গতিতে শিখতে দিন

ভাষা বিকাশে বাধা: কারণ ও প্রতিকার

কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ভাষা বিকাশে বিলম্ব হতে পারে। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:

  1. শ্রবণশক্তির সমস্যা
  2. মুখগহ্বরের গঠনগত ত্রুটি
  3. অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার
  4. সাধারণ ভাষাগত বিকাশজনিত বিলম্ব

শীতে শিশুর স্নান: সাবধানতা ও সুরক্ষার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস

যদি আপনি আপনার শিশুর ভাষা বিকাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা স্পিচ থেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করুন। প্রাথমিক হস্তক্ষেপ অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়।

শিশুর কথা বলা শুরু করা তার জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দময় সময়। প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব গতিতে এই দক্ষতা অর্জন করে। অভিভাবক হিসেবে আপনার ভূমিকা হল ধৈর্য ধরে তাকে উৎসাহিত করা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া। মনে রাখবেন, শিশুর ভাষা বিকাশ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা জন্মের পর থেকেই শুরু হয় এবং বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। আপনার ভালোবাসা, যত্ন ও সহযোগিতা আপনার শিশুকে এই যাত্রায় সফল হতে সাহায্য করবে।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।