China India population comparison 2025: ভারত ও চীন – এশিয়ার দুই দৈত্যাকার দেশ। বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল এই দুই দেশের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দীর্ঘদিন ধরে চীন ছিল বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের জনসংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে ২০২৫ সালে এই দুই দেশের জনসংখ্যার পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে চলছে বিতর্ক।
২০২৫ সালে জনসংখ্যার প্রাক্কলন
জাতিসংঘের World Population Prospects 2022 প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১.৪৬ বিলিয়ন, যা চীনের ১.৪২ বিলিয়নের তুলনায় বেশি। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারত বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ হিসেবে অবস্থান করবে।নিম্নে ২০২৫ সালে ভারত ও চীনের প্রাক্কলিত জনসংখ্যার তুলনামূলক চিত্র দেওয়া হলো:
দেশ | জনসংখ্যা (২০২৫) | বার্ষিক বৃদ্ধির হার | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) |
---|---|---|---|
ভারত | ১,৪৬৩,৮৬৫,৫২৫ | ০.৮৯% | ৪৯২ |
চীন | ১,৪১৯,৩২১,২৭৮ | -০.২৩% | ১৫১ |
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা
ভারত ও চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য। ভারতের জনসংখ্যা এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও তার হার ক্রমশ কমছে। অন্যদিকে, চীনের জনসংখ্যা ২০২২ সাল থেকে কমতে শুরু করেছে।
ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা
ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৭১-৮১ সালের মধ্যে গড়ে ২.২% থেকে কমে ২০০১-১১ সালে ১.৫% এ নেমে এসেছে। বর্তমানে এই হার আরও কমে দাঁড়িয়েছে ০.৮৯%। তবে এখনও ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যা ২০৬৪ সালে ১.৭ বিলিয়নে পৌঁছে শীর্ষে পৌঁছাবে।
India current population 2024: জনসংখ্যার নিরিখে চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে ভারতের যে ৫টি কারণ
চীনের জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা
চীনের জনসংখ্যা ২০২২ সালে ১.৪১১ বিলিয়ন থেকে কমে ২০২৩ সালে ১.৪১ বিলিয়নে নেমে এসেছে। এর ফলে চীনের জনসংখ্যা ৮৫০,০০০ জন কমেছে। চীনের জন্মহার ২০২২ সালে রেকর্ড নিম্ন স্তরে নেমে এসেছে – প্রতি ১,০০০ জনে মাত্র ৬.৭৭ জন শিশুর জন্ম হয়েছে।
জনসংখ্যা পরিবর্তনের কারণসমূহ
ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
১. উচ্চ প্রজনন হার: ভারতের প্রজনন হার ২০২৫ সালে ১.৯৪ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৩. স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি: শিশু মৃত্যুহার কমেছে এবং গড় আয়ু বেড়েছে।
চীনের জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ
১. এক সন্তান নীতি: দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা এই নীতির প্রভাব এখনও অনুভূত হচ্ছে।
২. বয়স্ক জনসংখ্যা: চীনের গড় বয়স ৪০ বছর, যা ভারতের তুলনায় অনেক বেশি।
৩. উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়: সন্তান পালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।
জনসংখ্যা পরিবর্তনের প্রভাব
অর্থনৈতিক প্রভাব
ভারতের বড় যুব জনসংখ্যা দেশের জন্য একটি বড় সুযোগ। ২০২১ সালে ভারতের কর্মক্ষম জনসংখ্যা ছিল ৯০০ মিলিয়নের বেশি, যা আগামী দশকে ১ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বিশাল শ্রমশক্তি ভারতের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।অন্যদিকে, চীনের ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যা দেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমশক্তি কমে যাওয়া এবং অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ার ফলে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হতে পারে।
সামাজিক প্রভাব
ভারতে যুব জনসংখ্যার বাড়তি চাপ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, চীনে বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর চাপ বাড়ছে।
ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ
জাতিসংঘের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২১০০ সাল নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা ১.৫ বিলিয়নে নেমে আসবে, কিন্তু তখনও তা চীনের ৬৩৩ মিলিয়নের তুলনায় অনেক বেশি হবে। এর ফলে ভারত সারা শতাব্দী জুড়ে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ হিসেবে অবস্থান করবে।তবে কিছু গবেষক মনে করেন, জাতিসংঘের এই প্রক্ষেপণ অতিরঞ্জিত। তাদের মতে, ভারত ও চীন উভয় দেশের জনসংখ্যা আরও দ্রুত হারে কমতে পারে।