চীনে গবেষকদের এক দল এমন এক আধুনিক বায়োমেটেরিয়াল তৈরি করেছেন, যা “bone glue” নামে পরিচিত এবং ভেজা হাড়ের উপর প্রয়োগ করে প্রায় ৩ মিনিটে শক্ত বন্ধন তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রি-ক্লিনিক্যাল তথ্য অনুযায়ী, এই আঠা-জাতীয় উপাদান ল্যাব ও প্রাণী মডেলে ফ্র্যাকচার স্থিতিশীল করেছে; তবে মানবদেহে ব্যবহারের আগে নিয়মিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া বাকি।
এই উদ্ভাবনের পেছনে মূল ধারণা হলো হাড়ের স্বাভাবিক খনিজ উপাদানকে (যেমন ক্যালসিয়াম ফসফেট) অনুকরণ করা এবং ভেজা টিস্যুতে দ্রুত, শক্ত ও জৈব-সঙ্গতিশীল বন্ধন তৈরি করা। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশেষ রাসায়নিক গঠনের কারণে উপাদানটি ইনজেক্টেবল ফর্মে ফাটলের জায়গায় পৌঁছে যায়, কয়েক মিনিটে সেট হয় এবং পরে ধীরে ধীরে শরীরের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে পারে।
পদ্ধতিগতভাবে, পরীক্ষায় প্রথমে ভেজা হাড়ের পৃষ্ঠে আঠাটি প্রয়োগ করা হয়, তারপর অল্প সময়ের মধ্যে লোড-বহনযোগ্য বন্ধন তৈরি হচ্ছে কি না—তা মেকানিক্যাল টেস্টে দেখা হয়। প্রাণী মডেলে প্রাথমিক ফলাফলে ফ্র্যাকচার স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রদাহ ও টক্সিসিটির লক্ষণ কম পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এগুলি প্রাথমিক ডেটা; মানুষের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা-প্রটোকলে কোনো বদল আসছে না।
অর্থোপেডিক সার্জারিতে এখনো পর্যন্ত প্লেট-স্ক্রু, পিন, রড এবং কিছু ক্ষেত্রে বোন সিমেন্ট (যেমন PMMA) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের সময় বেশি লাগে, রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, আবার PMMA-ধরনের সিমেন্টে তাপ উৎপাদন ও বায়োকম্প্যাটিবিলিটি নিয়ে প্রশ্নও আছে। ভেজা পরিবেশে কার্যকর মেডিক্যাল আঠা তৈরি করা তাই বহুদিনের চ্যালেঞ্জ ছিল—যেখানে নতুন এই “bone glue” সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে উঠে এসেছে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে, ভেজা টিস্যুতে বন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে আঠার পৃষ্ঠ-রসায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বহু গবেষণা সামুদ্রিক “ম্যাসেল” বা শামুকের আঠার মতো ক্যাটেকল-ভিত্তিক গঠনকে অনুকরণ করেছে, যাতে জলীয় পরিবেশেও শক্ত গ্রিপ তৈরি হয়। চীনা দলের উপাদানটি একই ধারণার সঙ্গে বোন-মিনারাল অনুকরণ যোগ করে শক্ত, তবু জৈব-সঙ্গতিশীল বন্ধন তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে বলে গবেষণা-সারাংশে বর্ণিত।
চিকিৎসাক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে জরুরি ট্রমা কেয়ার, খেলাধুলাজনিত ইনজুরি এবং বয়স্কদের অস্টিওপোরোটিক ভাঙনে। দ্রুত সেট হওয়া আঠা যদি সার্জারির সময় কমায় ও স্থিতিশীলতা বাড়ায়, তবে রোগীর পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হতে পারে। আবার শিশুদের গ্রোথ প্লেটের কাছে স্ট্যান্ডার্ড হার্ডওয়্যারের বদলে বায়োকম্প্যাটিবল আঠা ভবিষ্যতে বিকল্প হতে পারে—যদিও এসব এখনো গবেষণার পর্যায়ে।
নিয়ন্ত্রণ-নীতি ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের কথা মাথায় রেখে, গবেষক দলটি পরবর্তী ধাপে বিস্তৃত টক্সিকোলজি, ডোজ-অপ্টিমাইজেশন এবং ধাপে ধাপে মানব-ট্রায়ালে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। কোনো দেশেই এমন ডিভাইস/বায়োমেটেরিয়াল সরাসরি বাজারে আসে না; জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেতে ক্লিনিক্যাল প্রমাণ অপরিহার্য।
শিরোনামের দাবির ব্যাখ্যায়, “৩ মিনিটে হাড় জোড়া” বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে—ভেজা হাড়ের পৃষ্ঠে উপাদানটি প্রয়োগের প্রায় ৩ মিনিটের মধ্যে একটি শক্ত, কার্যকর ও লোড-বহনযোগ্য বন্ধন তৈরি হয়, যা প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় নথিভুক্ত। অর্থাৎ এটি তাৎক্ষণিক সার্জারি-মুক্ত স্থায়ী চিকিৎসা নয়; বরং দ্রুত স্থিতিশীলতা দেওয়া একটি সম্ভাব্য প্রযুক্তি, যার দীর্ঘমেয়াদি ফল ও মানবদেহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও পরীক্ষা জরুরি।
পটভূমিতে তাকালে দেখা যায়, গত এক দশকে টিস্যু আঠার ক্ষেত্রে একাধিক দেশেই হাইড্রোজেল, বায়োসেরামিক ও বায়োঅ্যাডহেসিভ নিয়ে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু হাড়ের মতো কড়া, খনিজ-সমৃদ্ধ টিস্যুতে, তাও আবার রক্ত-ভেজা অপারেটিভ ফিল্ডে—নির্ভরযোগ্য আঠা তৈরি করা কঠিন ছিল। নতুন চীনা উদ্ভাবন সেই দীর্ঘদিনের সমস্যায় বাস্তবসম্মত পথ দেখাতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা আগ্রহী।
অর্থবহ দিকটি হলো—যদি এই প্রযুক্তি মানব-ট্রায়ালে নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে জটিল ইমপ্লান্টের প্রয়োজন কিছু ক্ষেত্রে কমে যেতে পারে, অপারেশন সময় ও খরচ কমতে পারে, এবং পুনর্বাসন ত্বরান্বিত হতে পারে। একই সঙ্গে, বিদ্যমান সার্জিক্যাল টেকনিককে সম্পূর্ণ বদলে না দিয়ে ‘অ্যাডজুভ্যান্ট’ বা সহায়ক টুল হিসেবেও এটি জায়গা করে নিতে পারে।
সবশেষে, পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্টীকরণ—এটি এখনো প্রি-ক্লিনিক্যাল স্তরের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। হাসপাতালের নিয়মিত ব্যবহারে আসতে হলে ক্লিনিক্যাল প্রমাণ, গাইডলাইন আপডেট ও নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের পথ পেরোতে হবে। তবু সম্ভাবনার জায়গা বিশাল—কারণ এই “bone glue” প্রযুক্তি ৩ মিনিটেই শক্ত বন্ধন তৈরি করার সক্ষমতা দেখিয়ে হাড় জোড়ার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চীনা ‘Bone Glue’ কীভাবে কাজ করে
-
উদ্ভাবনটি ‘Bone-02’ নামে পরিচিত, Zhejiang Province-এর Sir Run Run Shaw Hospital-এর গবেষক দল তৈরি করেছেন.
-
সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে ভাঙা হাড়ের পৃষ্ঠে তরল আঠা প্রয়োগ করা হয়; এটি কয়েক মিনিটের মধ্যে শক্ত, লোড-বহনযোগ্য বন্ধনে পরিণত হয়.
-
আঠার রাসায়নিক গঠন বায়োকম্প্যাটিবল, অর্থাৎ শরীরের নিজস্ব টিস্যুতে ঠিকভাবে মিশে গিয়ে ধীরে ধীরে নিজেই শরীরে শোষিত হয়—যার ফলে দ্বিতীয়বার অপারেশনের দরকার পড়ে না.
-
একটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ১৫০ জনের বেশি রোগীর উপর সফলভাবে ব্যবহার হয়েছে; সর্বাধিক বন্ডিং ফোর্স দেখা গেছে ৪০০ পাউন্ডের বেশি, কম্প্রেসিভ স্ট্রেংথ প্রায় ১০ MPa.
নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা
-
ল্যাব ও প্রাণী পরীক্ষায় প্রদাহ এবং টক্সিসিটির কোনো উল্লেখযোগ্য লক্ষণ পাওয়া যায়নি.
-
ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফলে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি মানব পরীক্ষার ফলাফল এবং বড় সংখ্যক রোগীর উপর আরো তথ্য জরুরি.
-
আঠার সংকটে সংক্রমণ ও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কম দেখিয়েছে, যেহেতু এটি শরীরে স্বাভাবিকভাবে শোষিত হয়.
-
কড়া নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে আসার আগে আরও বিভিন্ন ধাপের মানব ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে.
পরবর্তী ধাপ
-
গবেষকরা বিস্তৃত টক্সিকোলজি, ডোজ অপ্টিমাইজেশন ও বৃহত্তর মানব ট্রায়ালের পরিকল্পনা করছেন.
-
অনুমোদন পাওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রেগুলেটরি সংস্থা, ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন ও গবেষণালব্ধ নিরাপত্তা-প্রমাণ দরকার.
-
যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে চিকিৎসায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে—যেমন অপারেশনের সময় কম, খরচ কম, এবং পুনর্বাসন দ্রুত.