গত ৩০ আগস্ট, ২০২৫, তিয়ানজিন – শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে যোগ দিতে ৭ বছর পর চীনে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সামাজিক নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কোয়ানমিন (Weibo), দোউইন (Douyin) ও উইচ্যাট (WeChat) সহ বিভিন্ন চ্যানেলে বেসরকারি ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরাও নানা মতামত প্রকাশ করেছেন।
প্রথম থেকেই সরকারি উষ্ম অভ্যর্থনার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক পর্যায়েও চীনা নেটিজেনরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। একদিকে, অনেকেই মোদিকে “মোদি লাওসিয়ান” (Modi Laoxian) বা “অমর মোদি” সম্বোধন করে প্রশংসা করেছেন। তারা মোদির শৈলী, নীতিমালা ও বহুমুখী কূটনৈতিক মনোভাবকে চীনা ইন্টারনেটে বিরল সম্মান নির্দেশক হিসেবে দেখেছেন।
অন্যদিকে, কিছু চীনা বিদেশনীতিক বিশ্লেষক ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী “দুই দিকই খাওয়ার” (liang tou chi) কূটনীতিক কৌশল সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন বেড়েছে; অথচ একই সময়ে মোদি সিবিসি ও SCO সম্মেলনে উপস্থিত থেকে চীনকে প্রাথমিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। অনেকে ভাবছেন, মোদি হয়তো পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার জন্য ভারসাম্য রক্ষা করছেন।
আরও কিছু পোস্টে ইউএস ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতে চলমান তেলের মালবাহনের বিতর্ক তুলে ধরে মোদির বহুমুখী কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। “ভারত যদি রাশিয়ার তেল কিনতে থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক শুল্কের কি হবে?”—এ ধরনের মন্তব্য দেখা গেছে কোয়ানমিনে।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মোদির কূটনৈতিক রূপরেখাকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মোদি “স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রতিযোগিতার” আহ্বান করেছেন, যাতে দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্ব না বাড়ে। এ প্রসঙ্গে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সফরের আগেই স্বাগত জানায়, যার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক মেরামতের প্রত্যাশা বেড়েছে।
চীনা ব্লগার ও ডিজিটাল ফোরামে ব্যবহারকারীরা সীমান্ত স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য, ভিসা নীতি ও সরাসরি বিমান সংযোগ পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনায় মনোযোগ দিয়েছেন। অনেকেই আশা করছেন, SCO সম্মেলনে মোদি-শি বৈঠক দু’দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পরিণামে, মোদির ৭ বছর পর চীন সফর চীনের ইন্টারনেট জগতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধানে থাকা নেটিজেনদের প্রশংসা থেকে শুরু করে কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে সন্দেহ—সবটাই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। আগামী দিনে এই সফর বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে কীভাবে রূপ দেবে, সেটাই দেখার বিষয়।