Coca Cola Zero Sugar Lemonade news: কোকা-কোলা কোম্পানি তাদের জনপ্রিয় মিনিট মেইড জিরো সুগার লেমনেড পণ্যের একটি বড় রিকল শুরু করেছে। কারণ হল – যে পণ্যটি ‘জিরো সুগার’ হিসেবে লেবেল করা হয়েছিল, তাতে আসলে পুরো চিনিযুক্ত লেমনেড ভরা ছিল। এই ঘটনায় প্রায় ১৩,০০০ কেস পণ্য প্রভাবিত হয়েছে, যা মূলত ইন্ডিয়ানা, কেন্টাকি ও ওহাইও রাজ্যের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।গত সেপ্টেম্বর মাসে কোকা-কোলা এই স্বেচ্ছামূলক রিকল শুরু করে। তবে তখন এ বিষয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা করা হয়নি। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
এফডিএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ১৩,১৫২টি কেস প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রতিটি কেসে ১২টি করে ১২ আউন্সের ক্যান রয়েছে।এই ভুলের ফলে গ্রাহকদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ যারা চিনি এড়িয়ে চলার জন্য জিরো সুগার পণ্য কিনেছিলেন, তারা অজান্তেই পুরো চিনিযুক্ত পানীয় পান করেছেন। সাধারণ মিনিট মেইড লেমনেডের একটি ক্যানে ৪০ গ্রাম চিনি, ১৫০ ক্যালরি এবং ৪২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। অন্যদিকে জিরো সুগার সংস্করণে মাত্র ৫ ক্যালরি, ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং কোনো চিনি নেই।এফডিএ এই রিকলকে ক্লাস II হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এর অর্থ হল, এই পণ্য ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির সম্ভাবনা কম।
চিনি ব্যবহারের অন্ধকার দিক: জেনে নিন কি কি ক্ষতি করছেন নিজের
তবে যাদের ডায়াবেটিস বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।গ্রাহকরা যদি এই পণ্য কিনে থাকেন, তাহলে তারা ক্যানের তলায় বা প্যাকেজিংয়ের উপর “FEB1725CNA” অথবা “FEB1725CNB” কোড দেখে শনাক্ত করতে পারেন। এছাড়া প্যাকেজের ডানদিকে পুষ্টি তথ্যের পাশে “CANNED UNDER THE AUTHORITY OF THE COCA-COLA COMPANY, ATLANTA, GA” লেখাটিও থাকবে।কোকা-কোলা জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে সব প্রভাবিত পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেছেন, “বাজারে আর কোনো প্রভাবিত পণ্য নেই। ওই তিনটি রাজ্যে সব রিকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।”এই ধরনের লেবেলিং ভুল খুব বিরল নয়। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয় কোম্পানি এরকম ভুলের জন্য পণ্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। ২০২৩ সালে একটি বড় সুপারমার্কেট চেইন তাদের ‘গ্লুটেন-ফ্রি’ লেবেল করা কিছু পণ্যে গ্লুটেন পাওয়া যাওয়ায় রিকল করেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর মানদণ্ড ও নিয়মিত পরীক্ষা প্রয়োজন। তারা গ্রাহকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে যাদের স্বাস্থ্যগত কারণে নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোকা-কোলা তাদের উৎপাদন ও প্যাকেজিং প্রক্রিয়া আরও কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা এই ভুল থেকে শিখব এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।”এদিকে, উপভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছে, এই ধরনের ঘটনায় কোম্পানিগুলোকে আরও স্বচ্ছ হতে হবে। তারা মনে করেন, যখনই এরকম কোনো সমস্যা ধরা পড়ে, তখনই জনগণকে অবহিত করা উচিত।
কোকা-কোলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে রিকল শুরু হলেও অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা করা হয়নি।এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বড় ব্র্যান্ডগুলোও মাঝেমধ্যে ভুল করতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভুল ধরা পড়লে তা দ্রুত সংশোধন করা এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কোকা-কোলার এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, তারা গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।শেষ পর্যন্ত, এই ঘটনা থেকে গ্রাহকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। তা হল, সবসময় পণ্যের লেবেল ভালোভাবে পড়া এবং সন্দেহজনক কিছু মনে হলে সেটি যাচাই করা। বিশেষ করে যাদের স্বাস্থ্যগত কারণে বিশেষ খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।
আপনার রক্তের সুগার মাপুন: জানুন কীভাবে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র আপনার জীবন বাঁচাতে পারে!
এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উচিত আরও কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করা এবং নিয়মিত তদারকি করা। এতে করে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে খাদ্য নিরাপত্তা একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। এতে সকল পক্ষের – উৎপাদক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং গ্রাহক – সমান দায়িত্ব রয়েছে। সবাই সচেতন থাকলে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে, আমরা একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারব।