Fatigue causes from Vitamin B12 deficiency : ভিটামিন B12 এর অভাব শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম পাওয়া অন্যতম। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জানা দরকার এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
ভিটামিন B12 এর অভাবের লক্ষণ
ভিটামিন B12 এর অভাবে শরীরে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে:
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- সারাক্ষণ ঘুম পাওয়া
- মানসিক অবসাদ
- মনোযোগ দিতে অসুবিধা
- স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
- হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব
- চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- জিভ ফোলা ও লাল হয়ে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- মাথা ঘোরা
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
ভিটামিন B12 এর অভাবের কারণ
ভিটামিন B12 এর অভাবের প্রধান কারণগুলি হল:
- অপর্যাপ্ত খাদ্যাভ্যাস: মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি প্রাণিজ খাবার কম খাওয়া
- শোষণ সমস্যা: পাকস্থলীতে এসিড কম তৈরি হওয়া বা অন্ত্রের রোগের কারণে B12 শোষণ ঠিকমত না হওয়া
- পারনিশিয়াস এনিমিয়া: শরীরে B12 শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ইন্ট্রিনসিক ফ্যাক্টর নামক প্রোটিন তৈরি না হওয়া
- বয়স বৃদ্ধি: বয়স বাড়ার সাথে সাথে B12 শোষণ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- ভেজিটেরিয়ান বা ভেগান ডায়েট: উদ্ভিজ্জ খাবারে B12 এর অভাব থাকা
ভিটামিন B12 এর অভাবের প্রভাব
ভিটামিন B12 এর অভাবে শরীরে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে:
- রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া
- স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি
- হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
- অস্টিওপোরোসিস
- ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ
- ডিপ্রেশন
- গর্ভাবস্থায় জটিলতা
ভিটামিন B12 এর অভাব প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ভিটামিন B12 এর অভাব প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ইত্যাদি B12 সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
- সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ: ডাক্তারের পরামর্শে B12 সাপ্লিমেন্ট নেওয়া
- ইনজেকশন: গুরুতর অভাবের ক্ষেত্রে B12 ইনজেকশন নেওয়া
- ফোর্টিফাইড খাবার: B12 যুক্ত সিরিয়াল, সয়া মিল্ক ইত্যাদি খাওয়া
- নিয়মিত পরীক্ষা: রক্তে B12 এর মাত্রা পরীক্ষা করা
ভিটামিন B12 সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন B12 পাওয়া যায় এমন কিছু খাবারের তালিকা:
- মাছ: স্যামন, টুনা, ট্রাউট
- মাংস: গরু, মুরগি, টার্কি
- ডিম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- ফোর্টিফাইড সিরিয়াল
- নিউট্রিশনাল ইস্ট
- সয়া প্রোডাক্ট
Vitamin B12 এর ঘাটতি মেটাতে পারে যেসব ড্রাই ফ্রুটস
ভিটামিন B12 এর প্রয়োজনীয় মাত্রা
বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ভিটামিন B12 এর পরিমাণ:
- শিশু (0-6 মাস): 0.4 মাইক্রোগ্রাম
- শিশু (7-12 মাস): 0.5 মাইক্রোগ্রাম
- বাচ্চা (1-3 বছর): 0.9 মাইক্রোগ্রাম
- বাচ্চা (4-8 বছর): 1.2 মাইক্রোগ্রাম
- বাচ্চা (9-13 বছর): 1.8 মাইক্রোগ্রাম
- কিশোর-কিশোরী (14-18 বছর): 2.4 মাইক্রোগ্রাম
- প্রাপ্তবয়স্ক (19+ বছর): 2.4 মাইক্রোগ্রাম
- গর্ভবতী মহিলা: 2.6 মাইক্রোগ্রাম
- স্তন্যদানকারী মা: 2.8 মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন B12 এর অভাবে অতিরিক্ত ঘুম পাওয়ার কারণ
ভিটামিন B12 এর অভাবে অতিরিক্ত ঘুম পাওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
- রক্তশূন্যতা: B12 এর অভাবে লাল রক্তকণিকা কম তৈরি হয়, ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এর ফলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়, যা অতিরিক্ত ঘুমের কারণ হতে পারে।
- স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি: B12 স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে, যা ক্লান্তি ও ঘুম পাওয়ার কারণ হতে পারে।
- মেটাবলিজম কমে যাওয়া: B12 শরীরের মেটাবলিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে মেটাবলিজম কমে যায়, যা শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে।
- হরমোন ভারসাম্যহীনতা: B12 এর অভাবে মেলাটোনিন ও সেরোটোনিনের মতো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা ঘুমের চক্রকে প্রভাবিত করে।
- মানসিক অবসাদ: B12 এর অভাবে মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে, যা অতিরিক্ত ঘুমের কারণ হতে পারে।
রাতে ঘুম আসছে না? রইলো ঘুম না আসার কিছু কারণ ও তার প্রতিকার
ভিটামিন B12 এর অভাবজনিত অতিরিক্ত ঘুম প্রতিরোধের উপায়
ভিটামিন B12 এর অভাবজনিত অতিরিক্ত ঘুম প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: B12 সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়া।
- সাপ্লিমেন্ট: ডাক্তারের পরামর্শে B12 সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম করা।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন 7-9 ঘণ্টা ঘুমানো।
- স্ট্রেস কমানো: ধ্যান, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মাধ্যমে স্ট্রেস কমানো।
- পানি পান: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
- নিয়মিত পরীক্ষা: রক্তে B12 এর মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা।
ভিটামিন B12 এর অভাব শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম পাওয়া অন্যতম। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।