দুই বছরের বিরতির পর আবার করোনা মাথাচাড়া দিচ্ছে ভারতে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ২৫৭ পেরিয়েছে। এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই, কারণ বেশিরভাগ আক্রান্তদের অবস্থা মৃদু এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ছে না।
রাজ্যভিত্তিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
১২ মে, ২০২৫ থেকে ভারতে মোট ১৬৪ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন কেরলে। রাজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান নিম্নরূপ:
কেরল: সর্বাধিক ৬৯টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে ১২ মে থেকে।
মহারাষ্ট্র: মোট ৫৬ জন করোনা আক্রান্ত, যার মধ্যে গত কয়েকদিনে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন।
তামিলনাড়ু: ১২ মে থেকে ৩৪ জন নতুন করোনা আক্রান্ত।
কর্ণাটক: গত সপ্তাহে ৮টি নতুন কেস রেকর্ড করা হয়েছে।
গুজরাট: ৬টি নতুন সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে।
দিল্লি: সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ৩টি নতুন কেস পাওয়া গেছে।
হরিয়ানা, রাজস্থান ও সিকিম: প্রতিটি রাজ্যে একটি করে নতুন কেস রেকর্ড করা হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের বর্তমান অবস্থা
সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লেও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত মে মাসের শুরু থেকেই কেরল, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগের অবস্থা মৃদু এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ছে না।
তবে মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (কেইএম) হাসপাতালে সম্প্রতি দুটি করোনা-সংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসকদের মতে, এই মৃত্যুগুলি গুরুতর সহ-রোগীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে – একজন ১৪ বছর বয়সী নেফ্রোটিক সিনড্রোমের কারণে কিডনি ব্যর্থতায় ভুগছিলেন এবং অন্যজন ৫৪ বছর বয়সী ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের পদক্ষেপ
করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। হংকং, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিককালে করোনা কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে, ভারতে বিশেষজ্ঞদের একটি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই বৈঠকে জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনসিডিসি), জরুরি চিকিৎসা ত্রাণ (ইএমআর) বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালগুলির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র অনুসারে, “আপাতত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ করোনা কেসই মৃদু প্রকৃতির, অস্বাভাবিক তীব্রতা বা মৃত্যু সংক্রান্ত নয়”। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে পর্যালোচনা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতে পরিস্থিতি “নিয়ন্ত্রণে” রয়েছে এবং সোমবার পর্যন্ত দেখা কেসের সংখ্যা দেশের বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় “খুবই কম”।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং সতর্কতা
ভারতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুরে, ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম দিকে সংক্রমণের সংখ্যা হুড়মুড় করে বেড়ে ১৪,০০০-এরও বেশি হয়েছে, যা এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও ছিল ১১,১০০। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে।
শুধু সিঙ্গাপুর নয়, হংকং ও চীনেও করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভারতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয়?
যদিও বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
সাধারণ সতর্কতা যা অবলম্বন করা উচিত:
- প্রয়োজন ছাড়া ভিড়পূর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলুন
- মাস্ক পরিধান করুন, বিশেষ করে জনবহুল স্থানে
- হাত নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
- করোনার লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- টিকা গ্রহণ করুন, বিশেষ করে যারা এখনও টিকা নেননি
সরকারি পদক্ষেপ এবং নজরদারি
কর্তৃপক্ষ হাসপাতালগুলিকে সতর্ক থাকতে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা-জাতীয় অসুস্থতা (আইএলআই) এবং গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (এসএআরআই) কেসগুলি নজরদারি করতে নির্দেশ দিয়েছে। সমন্বিত রোগ নজরদারি কার্যক্রম (আইডিএসপি) এবং আইসিএমআর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নজরদারি বজায় রাখা হচ্ছে, যা পরিস্থিতির যেকোনো পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত ও প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করছে।
পাশাপাশি বৃহন্মুম্বাই পৌরসভা (বিএমসি) এই মাসে সংক্রমণের সামান্য বৃদ্ধি স্বীকার করেছে তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি
সার্চ রেজাল্টে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের হাল-ফিলহালের কোন আপডেট উল্লেখ না থাকলেও, কিছু পুরনো তথ্য পাওয়া যায়, যেখানে একসময় রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৭৮৭ রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের নিরিখে সর্বোচ্চ স্থানে ছিল কলকাতা, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২৯৭ জন। এর পরেই ছিল উত্তর ২৪ পরগনা, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৭৮৮।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সম্পর্কে আপডেটেড তথ্য জানা যায়নি। তবে দেশের অন্যান্য অংশের মতো এখানেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
করোনা সম্পর্কে সচেতনতা
করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও, এখনও অবধি গুরুতর অসুস্থতার কেস খুব কম। বেশিরভাগ আক্রান্তই মৃদু উপসর্গ নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ছে না। তবে যাদের ইতিমধ্যেই অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
করোনার সাধারণ লক্ষণগুলি হল:
- জ্বর
- শুকনো কাশি
- ক্লান্তি
- স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া
- গলা ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
উপসংহার
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ভারতে ২৫৭ ছাড়িয়ে গেলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেরল, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ু সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
যদিও এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে করোনা সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, ভারতে এখনও অবধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে যাতে সংক্রমণের হার আরও না বাড়ে।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পর্যবেক্ষণ চলমান থাকবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সর্বশেষ আপডেটের জন্য সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে।