এক টাকা বানাতে সরকারের কত টাকা খরচ? ভারতীয় মুদ্রা উৎপাদনের চমকপ্রদ তথ্য

মনীষা মুখার্জী 5 Min Read

cost of making Indian Coin: আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে আপনার পকেটে থাকা এক টাকার নোট বা কয়েন তৈরি করতে সরকারের আসলে কত খরচ হয়? ভারতে মুদ্রা উৎপাদনের cost of printing money নিয়ে অনেক কৌতূহল রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশ্বাস করুন বা না করুন, একটি ১০ টাকার নোট তৈরি করতে সরকারের খরচ হয় প্রায় ২.৫০ টাকা! আর পাঁচ টাকার কয়েন বানাতে খরচ পড়ে ৩.৬৯ টাকা।

আজকের এই আলোচনায় আমরা জানব ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এবং ভারত সরকার কীভাবে মুদ্রা উৎপাদন করে, কোন কোন ফ্যাক্টর এর খরচ নির্ধারণ করে, এবং কেন কখনো কখনো মুদ্রা তৈরির খরচ তার নিজস্ব মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে যায়।

মুদ্রা উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়া: ভারতের পদ্ধতি

ভারতে কাগজি নোট এবং ধাতব কয়েন উৎপাদনের দায়িত্ব ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) নোট উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে, আর ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কয়েন তৈরির কাজ দেখাশোনা করে।

অর্থ বৃদ্ধির টোটকা: সহজ উপায়ে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনের কৌশল

নোট উৎপাদন প্রক্রিয়া

ভারতে বর্তমানে চারটি প্রধান প্রেস রয়েছে নোট তৈরির জন্য:

  • নাসিক (মহারাষ্ট্র)
  • দেওয়াস (মধ্যপ্রদেশ)
  • সালবোনি (পশ্চিমবঙ্গ)
  • মহসানা (গুজরাট)

এই প্রেসগুলোতে বিশেষ ধরনের কটন পেপার, নিরাপত্তা থ্রেড, ওয়াটার মার্ক, এবং অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। cost of printing money নির্ভর করে এই সমস্ত উপাদানের দামের উপর।

কয়েন উৎপাদনের ধাপ

ভারতে কয়েন তৈরি হয় চারটি টাকশালে:

  • কলকাতা
  • মুম্বাই
  • হায়দরাবাদ
  • নয়ডা

এখানে স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, এবং অন্যান্য ধাতু ব্যবহার করে কয়েন তৈরি করা হয়।

বিভিন্ন মূল্যমানের নোট ও কয়েনের উৎপাদন খরচ

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ডিনোমিনেশনের মুদ্রা তৈরির খরচ ভিন্ন ভিন্ন। এই cost of printing money হিসাব করার সময় কাঁচামাল, শ্রম, মেশিনারি, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছুই ধরা হয়।

কাগজি নোটের উৎপাদন খরচ

নোটের মূল্যউৎপাদন খরচ (আনুমানিক)১০ টাকা২.৫০ টাকা২০ টাকা২.৬৫ টাকা৫০ টাকা২.৭৫ টাকা১০০ টাকা৩.১৭ টাকা২০০ টাকা৩.৫৪ টাকা৫০০ টাকা৪.১৮ টাকা২০০০ টাকা৪.৯৮ টাকা

কয়েনের উৎপাদন খরচ

ধাতব কয়েনের ক্ষেত্রে খরচ অনেক সময় মুখ্য মূল্যের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। কারণ কাঁচামালের দাম ক্রমাগত বাড়ছে।কয়েনের মূল্যউৎপাদন খরচ (আনুমানিক)৫০ পয়সা৮৫ পয়সা১ টাকা১.১১ টাকা২ টাকা১.২৮ টাকা৫ টাকা৩.৬৯ টাকা১০ টাকা৫.৫৪ টাকা

মুদ্রা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ এবং প্রভাব

কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি

গত এক দশকে তুলা, কাগজের মণ্ড, ধাতব পদার্থের দাম ক্রমাগত বেড়েছে। বিশেষ করে স্টেইনলেস স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এর ফলে cost of printing money অনেকটাই বেড়ে গেছে।

প্রযুক্তিগত উন্নতি

নকল মুদ্রা রোধ করতে ভারত সরকার ক্রমাগত নতুন নিরাপত্তা ফিচার যোগ করছে নোট এবং কয়েনে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যয়বহুল, কিন্তু জরুরি।

শ্রম ও পরিবহন খরচ

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুদ্রা পৌঁছে দিতে পরিবহন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার খরচও যোগ হয় মোট উৎপাদন খরচে।

আন্তর্জাতিক তুলনা: বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের অবস্থান

আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রে একটি ডলার নোট তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ৫.৬ সেন্ট (প্রায় ৪.৭ টাকা)। তবে তাদের নোটের গুণগত মান এবং স্থায়িত্ব ভারতীয় নোটের চেয়ে বেশি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরো নোট তৈরির খরচ ৮-১২ সেন্টের মধ্যে। তাদের cost of printing money তুলনামূলকভাবে কম কারণ তারা বড় পরিমাণে উৎপাদন করে।

চীন

চীনে ইয়ুয়ান তৈরির খরচ বেশ কম, কারণ তাদের নিজস্ব কাঁচামাল উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।

Money Printing Machine: ইচ্ছে মতো কেন টাকা ছাপানো যায় না?

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: ডিজিটাল মুদ্রার প্রভাব

CBDC (Central Bank Digital Currency)

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ইতিমধ্যে ডিজিটাল রুপি নিয়ে পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করেছে। এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যাপকভাবে চালু হলে ফিজিক্যাল cost of printing money উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

কম ডিনোমিনেশনের ভবিষ্যৎ

যেসব কয়েনের উৎপাদন খরচ মুখ্য মূল্যের চেয়ে বেশি, সেগুলো ভবিষ্যতে বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১, ২, এবং ৫ পয়সার কয়েন চালু নেই।

পরিবেশগত প্রভাব এবং টেকসই সমাধান

পরিবেশবান্ধব উপাদান

ভারত সরকার পরিবেশের কথা মাথায় রেখে মুদ্রা উৎপাদনে পলিমার নোটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। পলিমার নোট বেশি টেকসই এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য।

রিসাইক্লিং সিস্টেম

পুরানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত মুদ্রা রিসাইক্লিং করার মাধ্যমে cost of printing money কমানো সম্ভব। RBI ইতিমধ্যে এই দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে।

মুদ্রা উৎপাদনে প্রযুক্তির ভূমিকা

অটোমেশন

আধুনিক প্রিন্টিং মেশিন এবং অটোমেটেড সিস্টেম ব্যবহার করে শ্রম খরচ কমানো হচ্ছে। তবে প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

AI ব্যবহার করে নকল মুদ্রা শনাক্তকরণ এবং গুণগত নিয়ন্ত্রণ উন্নত করা হচ্ছে।

ভারতে মুদ্রা উৎপাদনের cost of printing money একটি জটিল বিষয় যা একাধিক ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত। যদিও কয়েকটি ডিনোমিনেশনের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ মুখ্য মূল্যের চেয়ে বেশি, তবুও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক লেনদেনের সুবিধার জন্য এই খরচ বহন করতে হয়। ভবিষ্যতে ডিজিটাল মুদ্রা এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।আপনি কি এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে চান? মন্তব্য করে জানান আপনার মতামত!

Share This Article