Countries restricting Facebook access: ফেসবুক বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। প্রায় ৩.১ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী নিয়ে এটি বিশ্বব্যাপী মানুষের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু আপনি কি জানেন যে বিশ্বের কিছু দেশে ফেসবুক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ? চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশগুলোতে ফেসবুক চলে না এবং কেন।
যে দেশগুলোতে Facebook নিষিদ্ধ
চীন
২০০৯ সালের জুলাই মাসে উরুমকি দাঙ্গার পর থেকে চীনে ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়। চীনের সরকার মনে করেছিল যে বিক্ষোভকারীরা ফেসবুক ব্যবহার করে যোগাযোগ ও আক্রমণ পরিকল্পনা করছে। ফেসবুক বিক্ষোভকারীদের পরিচয় ও তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করায় সরকার এটি বন্ধ করে দেয়।চীনের “Great Firewall” নামক ইন্টারনেট সেন্সরশিপ প্রকল্পের মাধ্যমে ফেসবুকসহ অন্যান্য পশ্চিমা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্লক করা হয়েছে। তবে হংকং ও ম্যাকাওতে ফেসবুক ব্যবহার করা যায়।
উত্তর কোরিয়া
২০১৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ায় ফেসবুক দেখা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং শাস্তিযোগ্য। দেশটিতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারই নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা সীমিত আকারে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।
2024 সালে Facebook এখনও শীর্ষে – টপ 10 সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের তালিকা
ইরান
২০০৯ সালের নির্বাচনের পর বিরোধী আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে ইরানে ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়। সরকার মনে করেছিল যে ফেসবুকের মাধ্যমে বিরোধীরা সংগঠিত হচ্ছে। ২০২০ সালে ইরান চীনের সহযোগিতায় জাতীয় ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরির ঘোষণা দেয়, যা চীনের Great Firewall-এর মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে।
তুর্কমেনিস্তান
২০১৮ সাল থেকে তুর্কমেনিস্তানে ফেসবুকসহ সকল পশ্চিমা সোশ্যাল মিডিয়া সাইট নিষিদ্ধ। দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। ছাত্রদের নিষিদ্ধ সাইট ব্যবহার না করার অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করতে হয়।
রাশিয়া
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাশিয়ান সরকার অভিযোগ করে যে Meta (ফেসবুকের মূল কোম্পানি) দেশের আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার অ্যাক্সেস সীমিত করেছে।
Facebook নিষিদ্ধ করার কারণ
বিভিন্ন দেশে ফেসবুক নিষিদ্ধ করার পিছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: সরকার বিরোধী আন্দোলন দমন ও তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে।
- জাতীয় নিরাপত্তা: কিছু দেশ মনে করে যে ফেসবুক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
- সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষা: পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব রোধ করতে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করা হয়।
- তথ্য নিয়ন্ত্রণ: সরকার নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।
Facebook নিষিদ্ধের প্রভাব
ফেসবুক নিষিদ্ধের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে:
- অর্থনৈতিক ক্ষতি: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ ও বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হারাচ্ছে।
- তথ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্ত: নাগরিকরা বিশ্বের খবর ও তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: তথ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
- সামাজিক যোগাযোগ ব্যাহত: পরিবার-বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
Facebook নিষিদ্ধ দেশের তালিকা
নিচের টেবিলে দীর্ঘমেয়াদী Facebook নিষিদ্ধ দেশগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
দেশ | নিষিদ্ধের শুরু | মোট জনসংখ্যা |
---|---|---|
চীন | ২০০৯ | ১.৪ বিলিয়ন |
ইরান | ২০০৯ | ৮৫ মিলিয়ন |
উত্তর কোরিয়া | ২০১৬ | ২৬ মিলিয়ন |
তুর্কমেনিস্তান | ২০১৮ | ৬ মিলিয়ন |
রাশিয়া | ২০২২ | ১৪৪ মিলিয়ন |
ফেসবুক নিষিদ্ধ করা দেশগুলোতে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন মানুষ বসবাস করে। এর ফলে তারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারছে না। তবে অনেকেই প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করছে। তারা মনে করে এটি নাগরিকদের তথ্য ও মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন করছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এসব দেশে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সুযোগ ফিরে আসবে।