Muslim population restrictions: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের উপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, যা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বিশ্বের ৪১টি দেশে কমপক্ষে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর মধ্যে মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেশে (৫৫%) ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ১৭টি দেশে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় ৮টি, ইউরোপে ৩টি এবং আমেরিকায় ২টি দেশে ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।চীন, ভারত, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, আজারবাইজান প্রভৃতি দেশে মুসলিমদের উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব দেশে মুসলিমদের মসজিদ নির্মাণ, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান, হিজাব পরা, দাড়ি রাখা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।চীনে উইঘুর মুসলিমদের উপর চরম নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। তাদের জোর করে শিবিরে আটকে রেখে পুনর্বাসনের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ: ভারতীয় ক্রেতারা কি সত্যিই প্রস্তুত এই বড় পরিবর্তনের জন্য?
ভারতে মুসলিমদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা বেড়ে গেছে। সরকারি নীতিতেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক।তাজিকিস্তানে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার বলছে, এটি তাদের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উজবেকিস্তানে ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মীয় দলগুলোকে সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হয়।আজারবাইজানে শিয়া মুসলিমদের উপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ২০১৫ সালে নারদারান এলাকায় শিয়া মুসলিমদের সাথে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছিল। এরপর থেকে সরকার কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে।ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, নরওয়ে, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশে সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ।মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত। সৌদি আরবে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম পালন করা যায় না। ইরানে বাহাই ধর্মাবলম্বীদের উপর নিপীড়ন চালানো হয়।এরিট্রিয়ায় শুধুমাত্র ৪টি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর কার্যক্রম বেআইনি। সুদানে ধর্মান্তরিত হওয়া নিষিদ্ধ।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক শত্রুতা উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে। ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ৫২টি দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর উচ্চ বা অতি উচ্চ মাত্রার বিধিনিষেধ ছিল।ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারগুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। যেমন:
এসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে ইউরোপে ধর্মীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মীয় গোষ্ঠীকে হয়রানি করার প্রবণতা ৭২% বেড়েছে।মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক দেশে তারা চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করতে হচ্ছে।
CAA বাস্তবায়নের ঘোষণা: নাগরিকত্ব আইনে কী পরিবর্তন আসছে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রতিটি মানুষের নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। কোনো ধর্মকে নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। যেসব দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেসব দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।