India currency printing foreign countries: ভারতের টাঁকশালে শুধু ভারতীয় টাকাই নয়, বরং বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মুদ্রাও ছাপা হয়। এটি ভারতের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (SPMCIL) এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক নোট মুদ্রণ প্রাইভেট লিমিটেড (BRBNMPL) এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেশের ভিতরে ও বাইরে মুদ্রা ছাপার দায়িত্ব পালন করে।
ভারতের টাঁকশালে যে সব দেশের মুদ্রা ছাপা হয়
SPMCIL-এর দুটি মুদ্রা মুদ্রণ কেন্দ্র – নাসিকের কারেন্সি নোট প্রেস (CNP) এবং দেওয়াসের ব্যাংক নোট প্রেস (BNP) – শুধু ভারতের জন্যই নয়, বরং বিদেশের বেশ কয়েকটি দেশের জন্যও ব্যাংক নোট মুদ্রণ করে। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ইরাক
- নেপাল
- শ্রীলঙ্কা
- মায়ানমার
- ভুটান
- বেলারুশ
- বতসোয়ানা
- ফিজি
- জার্মানি
- গায়ানা
- ইসরায়েল
- কেনিয়া
- মালয়েশিয়া
- মরিশাস
এই তালিকা থেকে বোঝা যায় যে ভারত শুধু তার প্রতিবেশী দেশগুলির জন্যই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলির জন্যও মুদ্রা মুদ্রণ করে।
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ ক্ষমতা
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ ক্ষমতা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। SPMCIL এবং BRBNMPL-এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভারত প্রতি মাসে প্রায় ৩ বিলিয়ন নোট মুদ্রণ করতে সক্ষম। এই পরিমাণ ভারতের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের চাহিদাও পূরণ করতে সক্ষম।
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণের ইতিহাস
ভারতে মুদ্রা মুদ্রণের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯২৮ সালে নাসিকে ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ভারতীয় মুদ্রা যুক্তরাজ্যের থমাস ডি লা রু গিওরি থেকে ছাপানো হত। ১৯৭৫ সালে মধ্যপ্রদেশের দেওয়াসে দ্বিতীয় ব্যাংক নোট মুদ্রণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে ভারতে চারটি মুদ্রা মুদ্রণ কেন্দ্র রয়েছে:
- নাসিকের কারেন্সি নোট প্রেস (CNP)
- দেওয়াসের ব্যাংক নোট প্রেস (BNP)
- মাইসুরের BRBNMPL প্রেস
- সালবনির BRBNMPL প্রেস
এই চারটি কেন্দ্র মিলে ভারতের মোট মুদ্রা মুদ্রণের প্রায় ৪০% সম্পন্ন করে। বাকি ৬০% মুদ্রা মুদ্রণ করে BRBNMPL-এর দুটি কেন্দ্র।
আন্তর্জাতিক মানের মুদ্রা মুদ্রণ
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ কেন্দ্রগুলি আন্তর্জাতিক মানের সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মুদ্রা মুদ্রণ করতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে:
- রাসায়নিকভাবে সক্রিয় উপাদান
- বিভিন্ন গিলোশে প্যাটার্ন
- মাইক্রো লেটারিং
- UV ইঙ্ক ব্যবহার করে ডিজাইন
- বাই-ফ্লুরোসেন্ট ইঙ্ক
- অপটিক্যাল ভেরিয়েবল ইঙ্ক
- মাইক্রো-পারফোরেশন
- এডহেসিভ/গ্লু
- এমবসিং
- ডাই-কাটিং
- পার্সোনালাইজেশন
এই উচ্চ মানের সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলি ভারতকে আন্তর্জাতিক বাজারে একটি বিশ্বস্ত মুদ্রা মুদ্রণকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধুমাত্র CNP নাসিকের টার্নওভার ছিল ১,১০০ কোটি টাকা। সেই বছর এই কেন্দ্র ৪,৮৭২ মিলিয়ন পিস বিভিন্ন মূল্যমানের ব্যাংক নোট উৎপাদন করেছিল।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ শিল্প বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি:
- জাল নোট: ২০২৩-২৪ সালে মোট ২.২২ লক্ষ জাল নোট শনাক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৫০০ টাকার নোটই ছিল সবচেয়ে বেশি (৮৫,০০০টি)।
- মুদ্রণ ব্যয়: গত দুই দশকে মুদ্রণ ব্যয় ৩.৫ গুণ বেড়েছে। ২০২৩-২৪ সালে এই ব্যয় ছিল ৫,১০১ কোটি টাকা।
- নোটের স্থায়িত্ব: আর্দ্রতা ও ময়লা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন।
এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় ভারত সরকার ও RBI নানা পদক্ষেপ নিয়েছে:
- উন্নত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা
- ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানো
- মুদ্রা মুদ্রণের জন্য টেকসই উপাদান ব্যবহার
RBI-এর বড় ঘোষণা! এখন পোস্ট অফিস থেকে RS 2000 নোট বিনিময় করুন
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাথে সাথে এই খাতের প্রসারও ঘটবে বলে আশা করা যায়। তবে ডিজিটাল অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের কারণে নগদ লেনদেনের চাহিদা কমতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ শিল্পকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে:
- আরও বেশি দেশের জন্য মুদ্রা মুদ্রণের সুযোগ খোঁজা
- উচ্চ মানের সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য উদ্ভাবন
- পরিবেশবান্ধব মুদ্রা মুদ্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার
- কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি
ভারতের মুদ্রা মুদ্রণ শিল্প শুধু দেশের অর্থনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ১৪টি দেশের মুদ্রা মুদ্রণের মাধ্যমে ভারত তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করেছে। ভবিষ্যতে এই খাতের আরও উন্নতি ও প্রসার ঘটবে বলে আশা করা যায়, যা ভারতকে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।