বিমান বিহীন বিশ্ব: এই ৫টি দেশে নেই কোনো এয়ারপোর্ট, জানুন কীভাবে চলে যাতায়াত!

আকাশপথে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি আমরা। কিন্তু এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে আকাশযানের পাখা মেলার সুযোগ নেই। বিশ্বের মানচিত্রে এমন পাঁচটি দেশ রয়েছে যেখানে একটিও এয়ারপোর্ট নেই। তবে তা সত্ত্বেও…

Ishita Ganguly

 

আকাশপথে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি আমরা। কিন্তু এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে আকাশযানের পাখা মেলার সুযোগ নেই। বিশ্বের মানচিত্রে এমন পাঁচটি দেশ রয়েছে যেখানে একটিও এয়ারপোর্ট নেই। তবে তা সত্ত্বেও এই দেশগুলি প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক আকর্ষণ করছে। কীভাবে সম্ভব হচ্ছে এই অসম্ভব? চলুন জেনে নেই এই অদ্ভুত বাস্তবতার গল্প।

বিমানবন্দরহীন পাঁচ দেশ

১. অ্যান্ডোরা: পিরেনিজ পর্বতমালার কোলে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে অবস্থিত। ৪৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে বিমানবন্দরহীন সবচেয়ে বড় দেশ।

২. সান মারিনো: ইতালির মধ্যে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দেশটির আয়তন মাত্র ৬১ বর্গ কিলোমিটার। প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য এই দেশটি বিখ্যাত।

কলকাতার ট্রামের একাল ও সেকাল: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন

৩. মোনাকো: ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত এই সিটি-স্টেটটির আয়তন মাত্র ২.০২ বর্গ কিলোমিটার। ক্যাসিনো, গ্র্যান্ড প্রি ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য এই দেশটি পরিচিত।

৪. লিχটেনস্টাইন: সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র রাজ্যটির আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটার। আল্পস পর্বতমালার দৃশ্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য এই দেশটি জনপ্রিয়।

৫. ভ্যাটিকান সিটি: বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার। ক্যাথলিক ধর্মের কেন্দ্রস্থল হিসেবে এই দেশটি বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

পর্যটক আকর্ষণের কৌশল:

এয়ারপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও এই দেশগুলি কৌশলগতভাবে পর্যটক আকর্ষণ করছে। নিচের টেবিলে দেখানো হলো প্রতিটি দেশের পর্যটক আকর্ষণের প্রধান কৌশলগুলি:

দেশ পর্যটক আকর্ষণের কৌশল
অ্যান্ডোরা স্কি রিসোর্ট, ট্যাক্স-ফ্রি শপিং, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
সান মারিনো ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক উৎসব, পুরাতন শহর
মোনাকো ক্যাসিনো, ফর্মুলা ওয়ান গ্র্যান্ড প্রি, লাক্সারি হোটেল
লিχটেনস্টাইন আল্পস পর্বতারোহণ, সাইকেল ট্যুর, ঐতিহাসিক দুর্গ
ভ্যাটিকান সিটি সেন্ট পিটার্স বেসিলিকা, সিস্টিন চ্যাপেল, ভ্যাটিকান মিউজিয়াম

বিশ্বের সবচেয়ে মানব শূন্য দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে আজই চলুন

যাতায়াত ব্যবস্থা

এয়ারপোর্ট না থাকলেও এই দেশগুলিতে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ সুগম। নিকটবর্তী দেশগুলির এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে এখানে আসা-যাওয়া করা যায়। উদাহরণস্বরূপ:

  • অ্যান্ডোরা: স্পেনের বার্সেলোনা এল প্রাট এয়ারপোর্ট থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে যাওয়া যায়।
  • সান মারিনো: ইতালির রিমিনি ফেদেরিকো ফেল্লিনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বাস বা ট্যাক্সিতে যাওয়া যায়।
  • মোনাকো: ফ্রান্সের নিস কোতে দ’আজুর এয়ারপোর্ট থেকে হেলিকপ্টার বা বাসে যাওয়া যায়।
  • লিχটেনস্টাইন: সুইজারল্যান্ডের জুরিখ এয়ারপোর্ট থেকে ট্রেন বা বাসে যাওয়া যায়।
  • ভ্যাটিকান সিটি: ইতালির রোম-ফিউমিচিনো এয়ারপোর্ট থেকে ট্রেন বা বাসে যাওয়া যায়।

পর্যটন শিল্পের প্রভাব

এয়ারপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও এই দেশগুলির অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের প্রভাব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ:

  • অ্যান্ডোরা: দেশের জিডিপির প্রায় ৮০% আসে পর্যটন খাত থেকে।
  • সান মারিনো: পর্যটন খাত দেশের জিডিপির প্রায় ৫০% অবদান রাখে।
  • মোনাকো: পর্যটন ও ক্যাসিনো শিল্প দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
  • লিχটেনস্টাইন: পর্যটন খাত দেশের জিডিপির প্রায় ৩০% অবদান রাখে।
  • ভ্যাটিকান সিটি: প্রতিবছর প্রায় ৫ মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ করে।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

এয়ারপোর্ট না থাকায় এই দেশগুলি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। যেমন:

  • জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত যাতায়াতের সমস্যা
  • আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা
  • পর্যটন শিল্পের সীমাবদ্ধতা

এই সমস্যাগুলি মোকাবেলায় দেশগুলি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে:

  • হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা
  • নিকটবর্তী এয়ারপোর্টগুলির সাথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা
  • সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত করা
  • অনলাইন পরিষেবা বৃদ্ধি করা

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এয়ারপোর্ট না থাকার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে এই দেশগুলি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে:

  • অ্যান্ডোরা: দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি ছোট এয়ারপোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
  • সান মারিনো: ইতালির সাথে যৌথভাবে একটি আঞ্চলিক এয়ারপোর্ট নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
  • মোনাকো: সমুদ্রের উপর ভাসমান রানওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
  • লিχটেনস্টাইন: সুইজারল্যান্ডের সাথে যৌথভাবে একটি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
  • ভ্যাটিকান সিটি: বর্তমানে কোনো এয়ারপোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নেই।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এয়ারপোর্ট থাকলেও এই পাঁচটি দেশ প্রমাণ করেছে যে এয়ারপোর্ট ছাড়াও একটি দেশ সমৃদ্ধ ও সফল হতে পারে। তাদের অনন্য ভূগোল, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এই দেশগুলিকে বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যদিও আধুনিক যুগে এয়ারপোর্টের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, তবুও এই দেশগুলি দেখিয়েছে যে বিকল্প পথেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।এই দেশগুলির অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, প্রতিকূলতাকে কীভাবে সুযোগে পরিণত করা যায়।

তারা প্রমাণ করেছে যে, সীমাবদ্ধতা থাকলেও সৃজনশীলতা ও দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তাই বলা যায়, আকাশপথ বন্ধ থাকলেও এই দেশগুলির উন্নয়নের গতি থেমে নেই, বরং তারা নিজস্ব পথে এগিয়ে চলেছে। এই পাঁচটি দেশের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি চ্যালেঞ্জই নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।