CPIM Manifesto: আমাদের ভূমি, আমাদের অধিকার”: কাশ্মীরের জন্য CPI(M)-এর নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ

CPIM Releases Manifesto For Kashmir: কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) বা CPI(M) সম্প্রতি কাশ্মীরের জন্য তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। "আমাদের ভূমি, আমাদের অধিকার" স্লোগানের মাধ্যমে দলটি কাশ্মীরের জনগণের অধিকার…

Chanchal Sen

 

CPIM Releases Manifesto For Kashmir: কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) বা CPI(M) সম্প্রতি কাশ্মীরের জন্য তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। “আমাদের ভূমি, আমাদের অধিকার” স্লোগানের মাধ্যমে দলটি কাশ্মীরের জনগণের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলে ধরেছে।

CPI(M)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দলীয় সদর দফতরে এই ইস্তেহার প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “কাশ্মীরের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধার করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এবং বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।”

ইস্তেহারে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে:

1. ধারা ৩৭০ ও ৩৫A পুনর্বহাল করা
2. কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া
3. অবিলম্বে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠান
4. সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFSPA) প্রত্যাহার
5. রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া
6. কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসন
7. যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি
8. পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন

CPI(M) নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ তারিগামি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের জনগণের অধিকার হরণ করেছে। আমরা তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য আমাদের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ রয়েছে।”

দুই যুগের দুই নেতা: ইন্দিরা থেকে মোদী – নির্বাচনী ইতিহাসের অদ্ভুত সাদৃশ্য

দলটি কাশ্মীরে বেকারত্ব দূর করার জন্য বিশেষ প্যাকেজের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকরিতে ৫০,০০০ পদ সৃষ্টি, যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ।

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য CPI(M) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া কৃষি ও বাগান শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্যাকেজের কথাও বলা হয়েছে।

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের জন্য দলটি একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আবাসন, চাকরি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

CPI(M) নেতৃত্ব মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। তারা বলেন, “কাশ্মীরের মানুষের আস্থা অর্জন করতে হলে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করব।”

তবে বিজেপি এই ইস্তেহারকে “বাস্তবতা বিরোধী” ও “বিচ্ছিন্নতাবাদী” বলে অভিহিত করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রবীন্দ্র রৈনা বলেন, “CPI(M) কাশ্মীরকে আবার অশান্তির দিকে ঠেলে দিতে চায়। তাদের এজেন্ডা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী।”

অন্যদিকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্ব CPI(M)-এর ইস্তেহারকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছেন, এটি কাশ্মীরের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, CPI(M)-এর এই ইস্তেহার কাশ্মীর উপত্যকায় দলটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান নীতির পরিপ্রেক্ষিতে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বাবা বলেন, “CPI(M)-এর ইস্তেহার কাশ্মীরের জনগণের আবেগকে প্রতিফলিত করেছে। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবের উপর।”

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়। সেই থেকে উপত্যকায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। CPI(M) মনে করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে হলে কাশ্মীরের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

ইস্তেহারে বলা হয়েছে, “কাশ্মীরের জনগণের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”

মিছিলের গর্জন, ভোট বাক্সে নীরবতা: বামপন্থীদের সংকটময় রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

CPI(M) নেতৃত্ব আশা করছেন, তাদের এই ইস্তেহার কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করবে। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান এখনও অনমনীয়।

উপরন্তু, ইশতেহারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, মিডিয়ার সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিপিআই(এম) সরকারকে বেকারত্ব মোকাবেলা করার, নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নগুলির হয়রানি বন্ধ করার এবং মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইনের (এমজিএনআরইজিএ) অধীনে মজুরি 600 টাকা করার আহ্বান জানিয়েছে৷ ইশতেহারে সরকারের সাম্প্রতিক অসংখ্য কর্মচারীকে বরখাস্ত করার সমালোচনা করা হয়েছে, যুক্তি দেখানো হয়েছে যে তাদের মামলা উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটি প্রতিবন্ধীদের জন্য 6,000 রুপি পেনশন এবং শিক্ষা ব্যয়কে জিডিপির 6 শতাংশে বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগে টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তা পূরণের আহ্বান জানিয়েছে।

যাই হোক, CPI(M)-এর এই ইস্তেহার কাশ্মীর ইস্যুকে আবারও জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। আগামী দিনগুলোতে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।