How to store mangoes : গ্রীষ্মকালের অসহনীয় গরমের মধ্যেও একটি জিনিস আমাদের মনে আনন্দ এনে দেয় – সেটি হলো রসালো মিষ্টি আম। ফলের রাজা হিসেবে পরিচিত এই আম কিন্তু পাওয়া যায় মাত্র কয়েকটি মাসের জন্য। কিন্তু আপনি কি জানেন যে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে সারা বছরই আমের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন? আজকের এই লেখায় আমরা এমন পাঁচটি কার্যকর ও সহজ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব যা আপনার ঘরেই প্রয়োগ করতে পারবেন।
আমের মৌসুম শেষ হয়ে গেলেই আমরা আফসোস করি যে আরো কিছুদিন যদি আম পেতাম! কিন্তু এই সমস্যার সমাধান রয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আম ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ভালো রাখা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নিই সেই কার্যকর উপায়গুলো।
জিপলক ব্যাগে আম সংরক্ষণের পদ্ধতি
জিপলক ব্যাগে আম সংরক্ষণ করা সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি। এই পদ্ধতিতে আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায়ের মধ্যে এটি অন্যতম। প্রথমে পাকা ও দাগমুক্ত আম বাছাই করুন। যেসব আমে আঘাত লেগেছে বা ফেটে গেছে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
আমগুলো পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। খোসা ছাড়ানোর পর আর ধোয়ার প্রয়োজন নেই। এবার আমগুলো ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিন এবং জিপলক ব্যাগে রাখুন। একসঙ্গে অনেকগুলো টুকরা না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটি করে আলাদা ব্যাগে ভাগ করে রাখুন।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- ব্যাগের মুখ বন্ধ করার সময় একটু ফাঁকা রেখে স্ট্র দিয়ে ভেতরের বাতাস বের করে দিন
- একটি বাটিতে ঢুকিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখুন
- এই পদ্ধতিতে আম ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে
আস্ত আম কাগজে মুড়ে সংরক্ষণ
অনেকেই পুরো আম অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে চান। এই ক্ষেত্রে কাগজে মোড়ানোর পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এটি আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায়ের মধ্যে অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি।
প্রথমে পাকা আমগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিন। এরপর প্রতিটি আম আলাদা আলাদাভাবে পরিষ্কার কাগজে মুড়ে নিন। খবরের কাগজ বা বাদামী কাগজ ব্যবহার করতে পারেন। কাগজে মোড়ানো আমগুলো একটি কাপড়ের ব্যাগে রাখুন।
কাপড়ের ব্যাগটি আবার একটি পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখ শক্ত করে বন্ধ করে দিন। এই ত্রিস্তরের সুরক্ষা আমকে বাইরের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করে। সবশেষে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
আমের পাল্প তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ
পাল্প করে আম সংরক্ষণ করা একটি অত্যন্ত সুবিধাজনক পদ্ধতি। পাকা আম খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ডারে মসৃণ করে ব্লেন্ড করুন। চাইলে সামান্য চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে প্রাকৃতিক মিষ্টতা বজায় রাখার জন্য চিনি না দেওয়াই ভালো।
তৈরি করা পাল্প বরফ জমানোর ট্রেতে ভরে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। ১০-১২ ঘণ্টা পর জমে গেলে ট্রে থেকে আমের বরফগুলো বের করে জিপলক ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। এই পদ্ধতিতে আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায়ের মধ্যে এটি সবচেয়ে বহুমুখী।
এই পাল্পের ব্যবহার:
- লাস্সি ও স্মুদি তৈরিতে
- পুডিং ও আইসক্রিম বানাতে
- জুস ও শেক তৈরিতে
- বিভিন্ন মিষ্টান্ন প্রস্তুতিতে
আইস পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ
আইস পদ্ধতি হলো প্রথমে আমের টুকরোগুলো জমিয়ে নেওয়া এবং পরে সংরক্ষণ করা। এই পদ্ধতিতে আমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। প্রথমে আমগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। এরপর একটি ট্রে বা প্লেটে পার্চমেন্ট পেপার বিছিয়ে আমের টুকরোগুলো একটির সাথে আরেকটি না লেগে থাকার মতো করে সাজান।
ট্রেটি ডিপ ফ্রিজে রেখে আমের টুকরোগুলো সম্পূর্ণ জমিয়ে নিন। জমে যাওয়ার পর টুকরোগুলো ট্রে থেকে তুলে জিপলক ব্যাগে ভরুন। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো আমের টুকরোগুলো আলাদা আলাদা থাকে, একসাথে জমাট বাঁধে না।
এই পদ্ধতিতে সংরক্ষিত আম ৬-৮ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বের করে ব্যবহার করা যায়।
ফ্রিজে স্বল্পমেয়াদী আম সংরক্ষণ
সাধারণ ফ্রিজে আম সংরক্ষণ করা আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। পাকা আম সাধারণ ফ্রিজে ৫-৭ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এই পদ্ধতিতে আমের প্রাকৃতিক স্বাদ ও গন্ধ অবিকৃত থাকে।
পাকা আমগুলো পরিষ্কার করে ফ্রিজের ক্রিসপার ড্রয়ারে রাখুন যেখানে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম ও স্থিতিশীল থাকে। আমগুলো কাগজের তোয়ালে বা টিস্যুতে মুড়ে রাখলে অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ হয়ে ছত্রাক জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়।
মনে রাখার বিষয়:
- কাঁচা আম ফ্রিজে রাখবেন না, ঘরের তাপমাত্রায় পেকে নিন
- পাকা আম নরম হয়ে গেলে সাবধানে রাখুন যাতে চাপ না লাগে
- ইথিলিন গ্যাস ত্বরান্বিত করার জন্য আপেল বা কলার সাথে রাখতে পারেন
আম সংরক্ষণের সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
আম সংরক্ষণে সফল হতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, সংরক্ষণের জন্য বেশি পাকা আম নেবেন না। খানিকটা শক্ত ও খোসায় কোনও দাগ নেই এমন আম বাছাই করুন। অতিরিক্ত পাকা আম সংরক্ষণ করতে চাইলে পাল্প করে তারপর সংরক্ষণ করা ভালো।
দ্বিতীয়ত, আম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবসময় ছোট বক্স বা ছোট জিপলক ব্যাগ ব্যবহার করুন। এতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণ বের করে নেওয়া যায়। বড় কন্টেইনার ব্যবহার করলে অল্প আমের জন্যও পুরো বক্স ডিফ্রস্ট করতে হয়, যা আমের স্বাদ নষ্ট করে দিতে পারে।
তৃতীয়ত, কাটা আমের সঙ্গে যাতে অক্সিজেনের বিক্রিয়া না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে আমের রং বদলে যায় এবং দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।
বিকল্প সংরক্ষণ পদ্ধতি
আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায় ছাড়াও আরো কিছু ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি রয়েছে। আমের আচার বা মোরব্বা তৈরি করে মাসের পর মাস সংরক্ষণ করা যায়। আমসত্ত্ব তৈরি করেও দীর্ঘদিন আমের স্বাদ উপভোগ করা সম্ভব।
শুকনো আম বা আম পাপড় তৈরি করে ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে আমের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের সুবিধা দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে সঠিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমের সংরক্ষণ কাল উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আম ১৪-২১ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে, যেখানে ঘরের তাপমাত্রায় মাত্র ৪-৮ দিন টিকে থাকে।
সংরক্ষিত আমের পুষ্টিগুণ
সংরক্ষণের সময় আমের পুষ্টিগুণ কতটুকু বজায় থাকে সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। গবেষণায় দেখা গেছে যে হিমায়িত আমে ভিটামিন সি কিছুটা কমে যায়, তবে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান প্রায় অক্ষুণ্ণ থাকে। হিমায়িত আমে প্রাথমিক অবস্থায় ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকলেও ৩০ দিন পর তা ১৪২ মিলিগ্রামে নেমে আসে।
তবে আমের প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। এজন্য সংরক্ষিত আমও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।
গ্রীষ্মকালের এই অমূল্য ফলটি সারা বছর উপভোগ করার জন্য আম দীর্ঘদিন ভালো রাখার সহজ ৫ উপায় অনুসরণ করুন। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনিও ঘরে বসে সারা বছর আমের স্বাদ নিতে পারবেন। প্রতিটি পদ্ধতিই পরীক্ষিত এবং কার্যকর, তাই আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটি বা একাধিক পদ্ধতি বেছে নিয়ে আমের মৌসুমেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলুন। এতে করে আগামী বছর আমের মৌসুম না আসা পর্যন্ত আপনার প্রিয় ফলের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হবে না।