ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা: ৫টি অপরিহার্য সতর্কতা যা আপনার অর্থ বাঁচাবে

Credit card fraud prevention: আজকের ডিজিটাল যুগে ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির কাছে ক্রেডিট কার্ড অনেক আর্থিক সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে…

Avatar

 

Credit card fraud prevention: আজকের ডিজিটাল যুগে ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির কাছে ক্রেডিট কার্ড অনেক আর্থিক সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে – সারা বছরের সঞ্চয়ে হাত না দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে মাসে মাসে অল্প করে শোধ করার সুবিধা দেয়। কিন্তু এই সুবিধার সাথে আসে নানা বিপদের ঝুঁকি। সামান্য অসতর্কতায় কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে মুহূর্তেই। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে, আর এর পেছনে রয়েছে অজ্ঞতা ও অসতর্কতা।

এই ব্লগপোস্টে জানাচ্ছি সেই পাঁচটি অপরিহার্য সতর্কতা যা মেনে চললে আপনার ক্রেডিট কার্ড ও আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।

ক্রেডিট কার্ড: ঝুঁকির সাথে সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া একটি বিশেষ সুবিধা। এটি দিয়ে কেনাকাটা বা অন্যান্য সেবার জন্য ঋণ নেওয়া যায়। কিন্তু এই সুবিধার সাথে আসে দায়িত্ব। ক্রেডিট কার্ডে নেওয়া ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। সময়মতো টাকা ফেরত দিতে না পারলে, অতিরিক্ত সুদ দিতে হয়।

এখন দেখে নিন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে চান? জেনে নিন ৭টি সহজ উপায়

১. তথ্য গোপনীয়তা: আপনার ডিজিটাল চাবি সুরক্ষিত রাখুন

কখনোই শেয়ার করবেন না

ক্রেডিট কার্ডের পিন, সিভিভি, কার্ড নম্বর – এগুলি আপনার ডিজিটাল তালার চাবি। এই তথ্যগুলি কারও সাথে ভুলেও শেয়ার করবেন না। ব্যাংকের নাম করে বা অজানা কোনও নম্বর থেকে ফোন করে কার্ড সম্পর্কে তথ্য চাইলে তা দেবেন না। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন, ফোনে, ইমেলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনোভাবেই ক্রেডিট কার্ডের তথ্য শেয়ার করা যাবে না।

সন্দেহজনক যোগাযোগ

যদি কেউ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বা অন্য কোনো কারণে ফোন করে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চায়, তবে ভুলেও তা দেবেন না। দরকারে সেই নম্বর জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ করুন1। মনে রাখবেন, ব্যাংক কর্মীরা কখনই ফোনে আপনার পিন বা সিভিভি চাইবেন না।

সতর্কতার এক্সট্রা লেয়ার

সাইবার বিশেষজ্ঞরা ক্রেডিট কার্ডে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন অন রাখার পরামর্শ দেন। রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে ওটিপি প্রয়োজন অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে হ্যাকারদের কবল থেকে সুরক্ষিত থাকবেন আপনি।

২. অসুরক্ষিত নেটওয়ার্ক এড়িয়ে চলুন

পাবলিক ওয়াইফাই: প্রতারকদের স্বর্গ

ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করার সময়ে সহজলভ্য বা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করবেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা কোনো কফিশপে, রেস্তোরাঁতে বা পাবলিক প্লেসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিনামূল্যের ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই ফ্রি ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট করা ঠিক নয়।

ফ্রি ওয়াইফাইয়ের বিপদ

পাবলিক নেটওয়ার্কে দেওয়া আপনার তথ্য কোনোভাবেই এনক্রিপ্ট করা থাকে না। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা সহজেই আপনার তথ্য জেনে নিতে পারবে এবং আপনার সংযোগ ট্যাপ করতে পারে। বাইরে কোথাও ওয়াইফাই জোনে কার্ড ব্যবহার করলেই বিপদে পড়তে পারেন।

বিকল্প সমাধান

অনলাইনে অবশ্যই টাকা পাঠাতে হলে, পাবলিক নেটওয়ার্ক না ব্যবহার করে ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন। সাইবার কাফেতে গিয়ে কখনওই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না। শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা ট্যাব থেকেই ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করুন।

৩. সময়মত বিল পরিশোধ করুন

ক্রমাগত বাড়তে থাকা ঋণের বোঝা

অনেকেই ক্রেডিট কার্ডে বাকি থাকা বিল সময়মতো মিটিয়ে দেন না। মাসের পর মাস ফেলে রাখেন, ফলে অজান্তে কাঁধের উপর বাড়তি ঋণের বোঝা চাপতে থাকে। মনে রাখবেন, প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট প্রদেয় তারিখ থাকে। তা অতিক্রম করে গেলেই অতিরিক্ত হারে জরিমানা করা হয়।

অটো-পেমেন্ট: ভুলে যাওয়ার সমাধান

প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই অটো ডেবিটের বিকল্প দেয়। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট দিনে ব্যাংক নিজে থেকেই ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া টাকা শোধ করে দেয়। এতে দু’টি সুবিধা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে ভুলে যান অনেকেই, অটো ডেবিট হয়ে গেলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা আরও পরামর্শ দেন, আপনি যদি ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করার জন্য অটো কাট পেমেন্ট অপশন চালু না রাখেন, তাহলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কারণ অনেকেই পেমেন্টের সঠিক তারিখ মনে করতে পারেন না।

বিল পরিশোধে কৌশল

যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিন। যদি বেশি অঙ্কের টাকা হয়, তা হলে ঋণের বোঝা কমাতে তাকে ইএমআই-তে ভেঙে নিন। প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের বিনিময়ে ৩ মাস, ৬ মাস বা ১ বছরের ইএমআই নিতে দেয়।

৪. ব্যয় সীমা নিয়ন্ত্রণ এবং স্মার্ট ব্যবহার

ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করুন

বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ডে খরচের জন্য ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করে রাখতে পারেন। এমনকী ATM ব্যবহার, মার্চেন্ট আউটলেট সোয়াইপ, অনলাইন লেনদেন এবং কন্ট্যাক্টলেস ব্যবহারের জন্য পৃথক সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এছাড়াও আপনি কোনও নির্দিষ্ট পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে পারেন।

স্মার্ট কার্ড ম্যানেজমেন্ট

যদি কারও কাছে একাধিক ক্রেডিট কার্ড থাকে, তা হলে তিনি শুধুমাত্র একটি কার্ডকে অটোপে-এর জন্য ঠিক করে রাখতে পারেন। অর্থাৎ ফোনের বিল, মাসিক সাবস্ক্রিপশন, EMI-সহ একাধিক ক্ষেত্রে সেই কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওই কার্ড অন্য কোনও খরচের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না। রেস্তোরাঁ বা পেট্রল পাম্পে অন্য কার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্রেডিট কার্ড যেভাবে নিরাপদে রাখবেন

ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এমন স্থানে রাখুন, যেন সহজে কারও তা চোখে না পড়ে। নারীরা যদি পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড রাখেন, তাহলে চেন বন্ধ রাখুন। জনবহুল এলাকায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে ছোট ব্যাগে ক্রেডিট কার্ড রাখুন

লিমিট মেনে চলুন

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের আগে নিজের সীমা বুঝে নিন। কত টাকা ধার নিচ্ছেন, কত দিনে তা শোধ করতে পারবেন তা দেখে নিন। ক্রেডিট কার্ডের টাকা খরচ করার সময়েও মাথায় রাখতে হবে যে, ক্রেডিট কার্ডের লিমিটের বেশি খরচ করলে, বেশি বিলের বোঝা চাপতে পারে।

৫. কার্ড হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

তৎক্ষণাৎ ব্লক করুন

যদি আপনার কার্ডটি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে। দ্রুত সময়ে কার্ডটি লক হলে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।

স্টেটমেন্ট নিয়মিত চেক করুন

প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট চেক করতে হবে। পাশাপাশি, কার্ডে কী লেনদেন হচ্ছে, তা SMS-এর মাধ্যমে নজর রাখতে হবে। এ ছাড়া আপনার ব্যবহৃত কার্ডে স্টেটমেন্টে কোনো ধরনের অসংগতি নজরে এলে কল সেন্টারে ফোন দিয়ে রিপোর্ট করুন।

ব্যাংকে রিপোর্ট করার সময়সীমা

স্টেটমেন্ট তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে লেনদেন-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করে লিখিতভাবে রিপোর্ট করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে অভিযোগ গ্রহণ করে না।

অনলাইন পেমেন্টে অতিরিক্ত সতর্কতা

সুরক্ষিত ওয়েবসাইট বাছাই করুন

কোনো ওয়েবসাইটে অনলাইনে টাকা লেনদেনের সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে সেই সাইটটি বৈধ কিনা, সুরক্ষিত কিনা। সাইটের ইউআরএলের শুরুতে ‘https://’ থাকতে হবে। এমনকী এই লেখার আগে একটি লক চিহ্ন দেখা যাবে। এর থেকে বোঝা যাবে এই ওয়েবসাইটে আপনার সমস্ত তথ্য এনক্রিপ্ট করা আছে যা কিনা সুরক্ষিত।

পেমেন্ট ভেরিফিকেশন

অনেক সময় এমন হয় যে বিল জেনারেট হওয়ার পরে, আপনি পেমেন্ট করেছেন কিন্তু তা ব্যাংকের সার্ভারে আপডেট করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চিন্তা করবেন না। যদি ব্যাংকের সার্ভারে পেমেন্ট আপডেট না করা হয়, তাহলে ভুলেও দ্বিতীয়বার পেমেন্ট করবেন না। প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন।

বাংলাদেশের সেরা ১০টি ক্রেডিট কার্ড: আপনার আর্থিক স্বাধীনতা এবং সুবিধা আনলক করুন

ক্রেডিট কার্ড নিরাপদে রাখার সাধারণ টিপস

  1. ক্রেডিট কার্ডের পিন, সিভিভি, কার্ড নম্বর ঘন ঘন পরিবর্তন করুন

  2. মুঠোফোন বা ক্যামেরায় কেউ যাতে আপনার কার্ডের ছবি তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন

  3. কার্ডের নম্বর সুরক্ষিত স্থানে লিখে রাখুন, যাতে হারিয়ে গেলে দ্রুত ব্যাংকে জানাতে পারেন

  4. যে এটিএম ব্যবহার করে আপনি নিয়মিত টাকা তোলেন, চেষ্টা করুন সেসব স্থান থেকেই টাকা তুলতে

  5. ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম থেকেও টাকা বের করতে বেশি খরচ হয়। এতে যে পরিমাণ টাকা তোলা হয়, তার উপরে সুদ দিতে হয়

ক্রেডিট কার্ড আমাদের আর্থিক জীবনে সুবিধা দিলেও, এর অপব্যবহার বা অসতর্কতা ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে। মনে রাখবেন, সাইবার জালিয়াতির বর্তমান যুগে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা প্রতারকদের প্রধান টার্গেট। কোনওরকম অসতর্ক হলেই জালিয়াতরা প্রতারণার সুযোগ পেয়ে যায়।

যে সংস্থার কার্ড নিচ্ছেন সেখানে সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন তা জেনে নিন। তাই কার্ড নেওয়ার আগে ভাল করে খুঁটিনাটি জেনে নেবেন। একটি ক্রেডিট কার্ড যেমন আপনাকে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে পারে, তেমনি অসতর্কতায় হারাতে পারেন সবকিছু। ক্রেডিট কার্ড নিয়ম মেনে ব্যবহার করুন, আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখুন।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম