শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

  পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল ব্রাত্য’ ও ‘ওয়ান্টেড’ লেখা পোস্টার পড়ার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই ঘটনার পর পুলিশ তদন্তে নেমে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি…

Avatar

 

 

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল ব্রাত্য’ ও ‘ওয়ান্টেড’ লেখা পোস্টার পড়ার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই ঘটনার পর পুলিশ তদন্তে নেমে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি পলাশ দাসকে থানায় তলব করেছে। লেকটাউন থানার তদন্তকারী আধিকারিকরা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে তিনজনকে চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে পলাশ দাসের নাম জড়িয়েছে। এই পোস্টারে শিক্ষামন্ত্রীকে ‘ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে।

গত ১১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কলকাতার লেকটাউন এলাকায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাসভবনের কাছে কয়েকটি পোস্টার দেখা যায়। এই পোস্টারে লেখা ছিল, “ব্রাত্য বসু ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রকে গাড়ি চাপা দিয়ে পলাতক।” এই অভিযোগ সত্যিই গুরুতর, তবে এর পিছনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর কালিন্দী এলাকার বাসিন্দা শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় লেকটাউন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি দাবি করেন, এই পোস্টার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে এবং মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।
পুলিশ তৎক্ষণাত তদন্ত শুরু করে। তারা আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তিনজনকে চিহ্নিত করে। এরপরই সিপিএম নেতা পলাশ দাসের নাম সামনে আসে। তদন্তকারী আধিকারিকরা তাকে নোটিস পাঠিয়ে থানায় হাজির হতে বলেছেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এই পোস্টার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। তবে সিপিএমের তরফে এখনও কোনো সরকারি বিবৃতি আসেনি।

এই ঘটনা শুধু একটি পোস্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পিছনে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে। ব্রাত্য বসু তৃণমূল কংগ্রেসের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তার কাজ নিয়ে প্রায়ই বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করে। বিশেষ করে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পশ্চিমবঙ্গে সুপরিচিত। সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ব্রাত্য বসুর নাম বারবার উঠে এসেছে, যা বিরোধী দলগুলোর জন্য একটি আক্রমণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, পলাশ দাস উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সিপিএমের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি দলের জেলা সভাপতি হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এই ঘটনার পর তিনি যদি সরাসরি জড়িত থাকেন, তাহলে এটি সিপিএমের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। তবে পুলিশ এখনও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করেনি, শুধু তদন্তের জন্য ডেকেছে।

এই পোস্টার কেন লাগানো হল, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল’ তকমা দেওয়ার চেষ্টা হয়তো তাকে এবং তার দলকে জনসমক্ষে হেয় করার একটি কৌশল। তবে এর সত্যতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। পুলিশের তদন্তে যদি পলাশ দাসের সম্পৃক্ততা ধরা পড়ে, তাহলে এটি আইনি ও রাজনৈতিকভাবে বড় ঘটনা হয়ে উঠবে।
লেকটাউন এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটা রাজনীতির নোংরা খেলা, আবার কেউ মনে করছেন, শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা উচিত। পুলিশ এখন সিসিটিভি ফুটেজ আরও বিশ্লেষণ করছে এবং অন্যান্য সাক্ষ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাড়ির সামনে পোস্টার ঘিরে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে। পলাশ দাসকে তলব করা হলেও তিনি দোষী কি না, তা তদন্তের পরই স্পষ্ট হবে। এই ঘটনা কেবল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং তদন্তের ফলাফলের দিকে এখন সবার নজর।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম