মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা খনিজ তেলের দামকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত সপ্তাহে Brent crude oil-এর দাম ১৩% বেড়ে প্রতি ব্যারেলে $৭৯.৪ পৌঁছেছে, যা মাত্র এক সপ্তাহ আগে $৭০.২ ছিল। এই মূল্যবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত ভারতের মতো দেশের জন্য যারা তাদের তেলের চাহিদার বেশিরভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে।
ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের পটভূমি:
গত সপ্তাহে ইরান ইজরায়েলের উপর ১৮০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইজরায়েল বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে বোমা হামলা চালায়, যা হেজবোল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে এবং এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে মৃত্যু বাড়ছে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুমকি
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ:
Energy Aspects-এর প্রতিষ্ঠাতা Amrita Sen জানিয়েছেন, “ঐতিহাসিকভাবে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান জড়িত যেকোনো সংঘাতে তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে $১০০ ছাড়িয়ে যেত।” তিনি আরও যোগ করেন যে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন দাম $১২০ বা $১৩০ পর্যন্ত উঠতে পারে।
ভারতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব:
ভারত তার তেলের চাহিদার ৮৮% আমদানি করে, যার ফলে দেশটি বাজারের অস্থিরতার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেছেন, “বর্তমানে বিশ্বে তেলের চাহিদার তুলনায় বেশি সরবরাহ রয়েছে। স্বল্প থেকে মধ্যম মেয়াদে আমি বিশ্বে তেলের কোনো ঘাটতি দেখছি না।”
তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ভারতের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। Morgan Stanley-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ব্যারেল তেলের দাম $১০ বাড়লে ভারতের Consumer Price Index (CPI) ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
Tradejini-এর COO Trivesh D জানিয়েছেন, “তেলের দাম বাড়লে ভারতের রাজকোষ ঘাটতির উপর চাপ বাড়তে পারে, যার ফলে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো বা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি থেকে অর্থ সরিয়ে বর্ধিত খরচ মেটাতে হতে পারে।”
বাজারের প্রতিক্রিয়া:
WTI crude oil futures গত শুক্রবার ০.৯% বেড়ে প্রতি ব্যারেলে $৭৪.৪-এ পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। সপ্তাহের হিসাবে, US benchmark West Texas Intermediate প্রায় ১০% বেড়েছে, যা ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক বৃদ্ধি।
তবে, মঙ্গলবার crude oil futures প্রায় ২% কমেছে। PVM-এর বিশ্লেষক Tamas Varga বলেছেন, “বাস্তব সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ছাড়া শুধুমাত্র ধারণার ভিত্তিতে তেলের দাম সীমিত সময়ের জন্যই বাড়তে পারে।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে যদি ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও না খারাপ হয়, তাহলে আগামী দিনগুলিতে তেলের দাম কমতে পারে। অনেকে মনে করছেন যে ইজরায়েল ও ইরান উভয়ই পূর্ণ যুদ্ধের ফলাফল সামলাতে পারবে না, তাই তারা সীমারেখা থেকে পিছিয়ে আসতে পারে।
Eurasia Group-এর প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা Ian Bremmer বলেছেন, “Benjamin Netanyahu হেজবোল্লাহর সাথে যুদ্ধ শুরু করা নিয়ে খুবই সতর্ক, কারণ হেজবোল্লাহ হামাসের তুলনায় অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত। তাই পূর্ণ যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। এই কারণেই আগস্ট থেকে তেলের দাম বাড়েনি এবং বাজারও বিশ্বাস করছে না যে এটি আসছে।”
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তেজনা খনিজ তেলের দামকে প্রভাবিত করছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের মতো দেশগুলি, যারা তেলের জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীল, তারা বিশেষভাবে এই পরিস্থিতির প্রভাবে পড়তে পারে। তবে, বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে পরিস্থিতি শীঘ্রই স্থিতিশীল হবে এবং তেলের দাম আবার স্বাভাবিক স্তরে ফিরে আসবে। এই পরিস্থিতিতে, নীতি নির্ধারকদের সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।