Onion price trend in West Bengal: পশ্চিমবঙ্গের বাজারে পেঁয়াজের দাম আবারও আকাশছোঁয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার খুচরা বাজারে ১ কেজি পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই মূল্যবৃদ্ধি গত ১০ দিনের মধ্যে ঘটেছে, যখন দাম ছিল ৫০ টাকা প্রতি কেজি। বাজার বিশেষজ্ঞরা এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে মহারাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত সরবরাহ শৃঙ্খলের বিঘ্ন উল্লেখ করেছেন।২০১৯ সালের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যখন পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে পেঁয়াজের দামের এই আকস্মিক বৃদ্ধি বাঙালি রান্নাঘরে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুন এবং আলুর দামও বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে প্রভাব ফেলছে।বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, নাসিকের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং মহারাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ। তবে আশার কথা হল, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে বা চতুর্থ সপ্তাহের শুরুতে, মহারাষ্ট্র নির্বাচনের পর, নতুন পেঁয়াজ ফসলের আগমনের সাথে সাথে দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলার নিজস্ব পেঁয়াজ চাষ ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাজারে আসার পর দাম আরও স্থিতিশীল হবে এবং সম্ভবত কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. গত ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ৪৭২৯.৩১ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
২. সর্বনিম্ন বাজার দর ছিল ৩২০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল, আর সর্বোচ্চ দর ছিল ৬০০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
৩. বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজের দাম ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, কোচবিহারের দিনহাটা বাজারে ৫ নভেম্বর পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০০০-৫৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
৪. দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং (মাটিগাড়া) বাজারে একই দিনে পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৮০০-৬০০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
৫. জলপাইগুড়ির বেলাকোবা বাজারে নাসিক পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫০০-৪৭০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
৬. নদীয়া জেলার কল্যাণী বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৮০০-৫০০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
৭. উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০০০-৫২০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এই ধারা শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা ভারতেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার এখন পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। টলিগঞ্জের বাসিন্দা অনিন্দিতা বসাক জানিয়েছেন, “আলুর দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, আর রসুন ও পেঁয়াজ হঠাৎ করে অত্যন্ত দামি হয়ে গেছে। এর ফলে পরিবারগুলি পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। স্বাদ বজায় রেখে বাজেটের মধ্যে থাকা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।”
এই পরিস্থিতিতে অনেক দোকানদার এবং খাবারের স্টল মালিক বিকল্প উপায় খুঁজছেন। এস্প্ল্যানেডের একটি রোল দোকানের মালিক অরবিন্দ দুবে জানিয়েছেন, “অনেক বিক্রেতা এখন গরম কাটি রোলের মতো খাবারে পেঁয়াজ ও রসুনের পরিবর্তে মূলো, শসা এবং আদা ব্যবহার করছেন। আমরা এখনও পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবহার করছি, কিন্তু নিশ্চিত নই কতদিন এভাবে চালাতে পারব। দাম বাড়াতে চাই না, কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন থাকে তাহলে বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হতে পারে।”
সরকার এবং বাজার কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন যে ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক দফায় আলোচনা ও আলাপ-আলোচনা সত্ত্বেও আলুর দাম উচ্চ স্তরে রয়ে গেছে। এটি প্রমাণ করে যে সমস্যাটি জটিল এবং এর সমাধান সহজ নয়।বাংলা বাজার টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে জানিয়েছেন, “নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের শুরুতে, মহারাষ্ট্র নির্বাচনের পর, আমরা নতুন পেঁয়াজ ফসলের একটি চালান পাওয়ার আশা করছি। পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব পেঁয়াজ চাষ ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শুরু হলে দাম আরও স্থিতিশীল হবে, সম্ভবত কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।”
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এই ঘটনা শুধু একটি নির্দিষ্ট সবজির মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা নয়, এটি বাঙালি রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য উপাদানের সংকট। পেঁয়াজ, আলু, রসুন এবং আদা বাংলার রান্নায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই এদের দাম বৃদ্ধি পরিবারের বাজেটে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এবং বাজার কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি একটি জটিল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর পিছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ, যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলের বিঘ্ন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এবং চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আশা করা যায়, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ফসল আসার সাথে সাথে পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য পেঁয়াজ আবার সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে।