গান্ধারীর অভিশাপে ধ্বংস হয়েছিল যদুবংশ: মহাভারতের যুদ্ধের পর কী ঘটেছিল?

Aftermath of Mahabharata war: মহাভারতের যুদ্ধের পর গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে ৩৬ বছর পর তাঁর যদুবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই অভিশাপের ফলে যদুবংশের সদস্যরা পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে…

Avatar

 

Aftermath of Mahabharata war: মহাভারতের যুদ্ধের পর গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে ৩৬ বছর পর তাঁর যদুবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই অভিশাপের ফলে যদুবংশের সদস্যরা পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংস করে ফেলেছিল। শ্রীকৃষ্ণ নিজেও একজন শিকারির তীরে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই ঘটনা মহাভারতের শেষাংশে মৌসল পর্বে বর্ণিত হয়েছে।

গান্ধারীর অভিশাপের কারণ

গান্ধারীর অভিশাপের পিছনে ছিল গভীর শোক ও ক্রোধ:

অভিশাপের বিষয়বস্তু

গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণকে যে অভিশাপ দিয়েছিলেন তার মূল বিষয়গুলি ছিল:

  • ৩৬ বছর পর যদুবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে
  • যদুবংশের সদস্যরা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংস করবে
  • শ্রীকৃষ্ণ নিজেও একজন সাধারণ মানুষের মতো মৃত্যুবরণ করবেন
  • দ্বারকা নগরী সমুদ্রে তলিয়ে যাবে

যদুবংশের ধ্বংসের ঘটনাক্রম

গান্ধারীর অভিশাপ অনুযায়ী যদুবংশের ধ্বংস হয়েছিল নিম্নলিখিত ঘটনাক্রমে:

  1. যদুবংশীয়রা প্রভাস তীর্থে গিয়ে মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে ওঠে
  2. মাতাল অবস্থায় তারা পরস্পর বিবাদে জড়িয়ে পড়ে
  3. সাত্যকি ও কৃতবর্মার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়
  4. ক্রমে অন্যান্য যদুবংশীয়রাও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে
  5. এরক ঘাস থেকে তৈরি লৌহদণ্ড দিয়ে তারা পরস্পরকে আঘাত করে
  6. শ্রীকৃষ্ণ নিজেও অনেককে হত্যা করেন
  7. প্রায় ৫৬ কোটি যদুবংশীয় নিহত হয়

শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু

যদুবংশের ধ্বংসের পর শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু ঘটে নিম্নলিখিত ভাবে:

  • তিনি একটি বনে গিয়ে ধ্যানমগ্ন হন
  • জরা নামে এক ব্যাধ তাঁর পায়ের পাতাকে হরিণের মুখ ভেবে তীর নিক্ষেপ করে
  • সেই তীরে আহত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ দেহত্যাগ করেন
  • এভাবে গান্ধারীর অভিশাপ অনুযায়ী তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো মৃত্যুবরণ করেন

অভিশাপের পরিণতি

গান্ধারীর অভিশাপের ফলে যে পরিণতি ঘটেছিল:

ঘটনা বিবরণ
যদুবংশের ধ্বংস প্রায় ৫৬ কোটি যদুবংশীয় নিহত হয়
দ্বারকার পতন দ্বারকা নগরী সমুদ্রে তলিয়ে যায়
শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু একজন শিকারির তীরে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন
দ্বাপর যুগের অবসান কলিযুগের সূচনা হয়

অভিশাপের তাৎপর্য

গান্ধারীর অভিশাপ ও তার পরিণতি থেকে যে শিক্ষা পাওয়া যায়:

  • অতিরিক্ত ক্রোধ ও প্রতিহিংসা ধ্বংসের কারণ হতে পারে
  • মহাপুরুষদেরও কর্মফল ভোগ করতে হয়
  • যুদ্ধ ও হিংসার পরিণাম সর্বনাশা
  • ঈশ্বরীয় লীলায় সবকিছুরই একটি উদ্দেশ্য থাকে

শ্রীকৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া

গান্ধারীর অভিশাপের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ:

  • তিনি শান্তভাবে অভিশাপ গ্রহণ করেছিলেন
  • জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজেই যদুবংশ ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছেন
  • গান্ধারী তাঁর উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করেছেন বলে জানান
  • এর মাধ্যমে তিনি কর্মফলের অমোঘতা প্রমাণ করেন

অর্জুনের ভূমিকা

যদুবংশের ধ্বংসের পর অর্জুনের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ:

  • তিনি দ্বারকায় গিয়ে অবশিষ্ট যদুবংশীয়দের উদ্ধার করেন
  • শ্রীকৃষ্ণের ১৬,০০০ পত্নীকে নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে যাত্রা করেন
  • পথে দস্যুদের আক্রমণে অনেক নারী অপহৃত হন
  • অর্জুন তাঁদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হন, যা তাঁর শক্তিহ্রাসের ইঙ্গিত দেয়

ঐতিহাসিক তাৎপর্য

মহাভারতের এই অংশের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম:

  • এটি দ্বাপর যুগের অবসান ও কলিযুগের সূচনা নির্দেশ করে
  • প্রাচীন ভারতের একটি শক্তিশালী বংশের পতনের ইতিহাস বর্ণনা করে
  • মানব জীবনের নশ্বরতা ও কর্মফলের অনিবার্যতা তুলে ধরে
  • ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণপেজার থেকে ওয়াকি-টকি: ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য কি?

গান্ধারীর অভিশাপ ও যদুবংশের ধ্বংস মহাভারতের একটি অত্যন্ত করুণ ও তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। এর মাধ্যমে মহাকাব্যটি মানব জীবনের নশ্বরতা, কর্মফলের অমোঘতা এবং অতিরিক্ত ক্রোধ ও প্রতিহিংসার ধ্বংসাত্মক পরিণতি তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করেছে যে মহাপুরুষদেরও কর্মফল ভোগ করতে হয়। যদুবংশের পতন ও শ্রীকৃষ্ণের তিরোধান দ্বাপর যুগের অবসান ঘটিয়ে কলিযুগের সূচনা করেছিল। সামগ্রিকভাবে এই ঘটনাবলী মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেছিল বলে ধরা হয়।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম