ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে যে আগামী ২৩ অক্টোবর নাগাদ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। আবহাওয়া দপ্তরের একটি বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে যে আন্দামান সাগরের উপরে একটি উপরের বায়ু ঘূর্ণাবর্ত পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
এই আবহাওয়া ব্যবস্থাটি পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২২ অক্টোবর সকালে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর ২৩ অক্টোবরে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এটি একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। IMD জানিয়েছে, “এরপর এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২৪ অক্টোবর সকালে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাতে পারে।”
এর প্রভাবে ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। IMD জেলেদের ২১ অক্টোবরের মধ্যে তীরে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে।
দুর্গাপুজোয় বৃষ্টির সম্ভাবনা: নিম্নচাপের প্রভাবে ভিজবে বাংলা?
IMD-এর মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন যে এই ব্যবস্থাটি একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। তিনি বলেছেন যে ২৩ অক্টোবর থেকে ওড়িশার কিছু অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
মহাপাত্র একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, “উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু স্থানে ২৪-২৫ অক্টোবরে ২০ সেমি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ২০ থেকে ৩০ সেমি পর্যন্ত বাড়তে পারে, এবং কিছু স্থানে ৩০ সেমি-এর বেশিও হতে পারে।”
তিনি আরও জানিয়েছেন যে IMD এখনও ল্যান্ডফল লোকেশন এবং তীব্রতা সম্পর্কে কোনও পূর্বাভাস দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে যে ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ৪০-৫০ কিমি/ঘন্টা বেগে ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে, যা ৬০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত এই বাতাসের গতি ধীরে ধীরে বেড়ে ১০০-১১০ কিমি/ঘন্টা হতে পারে, যা ১২০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
IMD জানিয়েছে যে সেই সময়ে সমুদ্রের অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, নিম্নলিখিত জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারে:
ওড়িশা:
• পুরী
• খুর্দা
• নয়াগড়
• গঞ্জাম
• গজপতি
• বালেশ্বর
• ভদ্রক
• কেন্দ্রাপাড়া
• জগৎসিংহপুর
বঙ্গোপসাগরে নতুন ঘূর্ণিঝড়? আবহাওয়া দপ্তরের বড় আপডেট জানুন
পশ্চিমবঙ্গ:
• পূর্ব মেদিনীপুর
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা
• উত্তর ২৪ পরগনা
• হাওড়া
• হুগলি
• কলকাতা
অন্ধ্রপ্রদেশ:
• শ্রীকাকুলাম
• বিজয়নগরম
• বিশাখাপত্তনম
এই জেলাগুলিতে প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে সতর্ক থাকার এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা হচ্ছে:
১. উদ্ধার দলগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে দ্রুত মোতায়েন করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
২. জেলা প্রশাসন নিম্ন এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৩. জরুরি পরিষেবাগুলি যেমন হাসপাতাল, দমকল, পুলিশ স্টেশন ইত্যাদি সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
৪. বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে যাতে ঝড়ের সময় সেবা অব্যাহত থাকে।
৫. মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৬. কৃষকদের ফসল কাটার এবং সম্ভব হলে গৃহপালিত পশুদের নিরাপদ স্থানে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৭. পর্যটকদের সতর্ক থাকতে এবং উপকূলীয় এলাকা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
৮. স্থানীয় প্রশাসন জরুরি ত্রাণ সামগ্রী মজুত করছে।
৯. নিয়মিত আবহাওয়া আপডেট প্রচার করা হচ্ছে।
১০. সামাজিক মাধ্যম ও স্থানীয় মিডিয়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।
এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনসাধারণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা এবং অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি না নেওয়া খুবই জরুরি। আবহাওয়া দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী, লোকজনকে ঘরের ভিতরে থাকতে, জরুরি সরবরাহ মজুত রাখতে এবং বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে এই ধরনের ঘটনা খুব স্বাভাবিক। তবে সঠিক প্রস্তুতি এবং সতর্কতার মাধ্যমে এর প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব। সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এই পরিস্থিতিতে, নাগরিকদের শান্ত থাকা এবং আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। সামগ্রিকভাবে, সতর্কতা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করা সম্ভব।