ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) সোমবার জানিয়েছে যে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ ২৪ অক্টোবর নাগাদ ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে Dana। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি সোমবার একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় Dana সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. IMD জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ২২ অক্টোবর সকালে একটি অবদমনে (depression) এবং ২৩ অক্টোবর নাগাদ একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
২. ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৪ অক্টোবর সকালে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছাতে পারে।
৩. ২৪-২৫ অক্টোবর রাতে ঘূর্ণিঝড়টি পুরী (ওড়িশা) ও সাগর দ্বীপ (পশ্চিমবঙ্গ) এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এর সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার, যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
৪. ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি সোমবার একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি জেলা প্রশাসনকে সম্ভাব্য প্রভাবিত এলাকা থেকে “১০০% অপসারণ” নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
১২০ কিমি বেগে ঝড়, তুমুল বৃষ্টির সতর্কতা! কোন জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?
৫. ওড়িশা সরকার পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের বুধবার সকালের মধ্যে পুরী শহর ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। IMD পূর্বাভাস দিয়েছে যে পুরী শহর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৬. ২৩-২৫ অক্টোবর ওড়িশার উপকূলীয় ও উত্তরাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পুরী, খুর্দা, গঞ্জাম ও জগৎসিংহপুর জেলার জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
৭. পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ২৩-২৪ অক্টোবর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও ঝাড়গ্রামেও এই সময়ে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
৮. জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) পশ্চিমবঙ্গে ১৪টি এবং ওড়িশায় ১১টি দল মোতায়েন করেছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের উদ্ধার ও ত্রাণ দলগুলিকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
৯. ওড়িশা সরকার ৮০০টিরও বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এগুলিতে বিদ্যুৎ, খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে।
১০. মৎস্যজীবীদের ২১ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে তীরে ফিরে আসার এবং ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় Dana-র প্রভাব:
ঘূর্ণিঝড় Dana-র প্রভাবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও তীব্র বাতাসের কারণে বন্যা, ভূমিধস ও গাছপালা উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচু এলাকায় জলমগ্নতা দেখা দিতে পারে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
রেলপথের রক্তাক্ত অধ্যায়: ভারতের পাঁচটি মর্মান্তিক ট্রেন বিপর্যয়
সরকারি প্রস্তুতি:
ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। উভয় রাজ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলি প্রস্তুত করা হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ সামগ্রী মজুত করা হয়েছে। হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জনসাধারণের জন্য পরামর্শ:
• সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন
• অপ্রয়োজনে বাইরে বের হবেন না
• খাদ্য, পানীয় জল ও ওষুধের পর্যাপ্ত মজুত রাখুন
• মোবাইল ফোন চার্জ করে রাখুন
• ব্যাটারি চালিত রেডিও রাখুন
• জরুরি ফোন নম্বরগুলি হাতের কাছে রাখুন
• ঘরের জানালা-দরজা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখুন
• গাছের নিচে বা বিদ্যুতের খুঁটির কাছে যাবেন না
• গুজবে কান দেবেন না, সরকারি তথ্যের উপর নির্ভর করুন
ঘূর্ণিঝড় Dana-র গতিপথ ও তীব্রতা নিয়ে IMD নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।