South Bengal weather: বঙ্গের আকাশে বর্ষার আগমনী সুর বাজতে শুরু করেছে। আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ মৌসুমী বায়ু প্রবেশের জন্য পরিবেশ এখন একেবারে অনুকূল। ফলে গরম ও আর্দ্রতার অস্বস্তি কাটিয়ে অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি নামতে চলেছে বাংলায়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ চরম গরম ও আর্দ্রতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম—প্রায় সব জেলাতেই তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও ছিল অত্যন্ত বেশি, যার ফলে অস্বস্তি আরও বাড়ছিল।
তবে স্বস্তির খবর নিয়ে হাজির হয়েছে বর্ষার মেঘ। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, ১৪ জুন থেকে পূর্ব ভারতে সক্রিয় হচ্ছে মৌসুমী বায়ু। তারই প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ জমা শুরু হয়েছে এবং আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইবে বলে সতর্কতা জারি হয়েছে। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম—এইসব জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
বর্ষায় দার্জিলিং: কি দেখবেন, কোথায় থাকবেন? – একটি বিস্তারিত গাইড
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতিও আলাদা নয়। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুরে ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে। এই অঞ্চলে বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। জলপাইগুড়িতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আগামী সপ্তাহ জুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে।
বর্ষার অগ্রগতির মূল কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের জলতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি। এর ফলে দ্রুত জলীয় বাষ্প তৈরি হচ্ছে এবং মৌসুমী বায়ুর প্রবাহও জোরদার হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণ আরব সাগরের দিক থেকেও একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যা বর্ষাকে এগিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এবারের বর্ষা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা আগেই বাংলায় প্রবেশ করতে চলেছে। সাধারণত ৮ থেকে ১০ জুনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করে। তবে এ বছর কেরলে বর্ষা ঢুকেছে ২৪ মে, যা ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আগেভাগে বর্ষার প্রবেশ। এই দ্রুত অগ্রগতির ফলে বাংলাতেও আগেভাগে বর্ষার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তবে দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমী বায়ুর প্রবেশের জন্য এখনও কিছুটা অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। কারণ, মৌসুমী বায়ুর গতি কিছুটা কমেছে। যদিও ১৫ থেকে ১৯ জুনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে। তার আগে এই ঝড়-বৃষ্টি মূলত প্রাক-বর্ষার ফল, তবে বর্ষার আসন্ন প্রবেশের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
বৃষ্টির দিনে বাইক রক্ষা করতে ৫টি কার্যকর টিপস
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে দুটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে এবং বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টি হতে পারে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে।
এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর সতর্ক রয়েছে। সমুদ্রে যাওয়া থেকে মৎস্যজীবীদের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কোথাও জল জমে গেলে দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা গাছ পড়ার মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বছর বর্ষা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর। জুন থেকে সেপ্টেম্বর—চার মাসের বর্ষা মৌসুমে গড় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের ১০৫ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি অর্থনীতির জন্য এই বর্ষা অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এল-নিনো এবং ভারত মহাসাগরীয় ডাইপোল (IOD) উভয় অবস্থাই বর্তমানে নিরপেক্ষ থাকায় বর্ষার গতিপ্রকৃতি অনুকূল রয়েছে।
ভারতে বর্ষাকাল সাধারণত ১০০-১২০ দিন স্থায়ী হয়, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দেশের মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ৭৫ শতাংশই এই বর্ষার চার মাসে হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে স্থলভাগে প্রবেশের পর। এই বায়ুই দেশের কৃষি, জলসম্পদ ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সব মিলিয়ে, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার প্রবেশ এখন সময়ের অপেক্ষা। তার আগেই ঝড়-বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, আগামী কয়েকদিন সতর্ক থাকতে হবে। আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা মেনে চলা ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মানা জরুরি। বর্ষার আগমনে যেমন স্বস্তি, তেমনই দুর্যোগের আশঙ্কাও থেকে যায়—তাই প্রস্তুতি ও সচেতনতা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।