ডি কক-এর ব্যাটে অগ্নিঝরা, স্পিনারদের জাদুতে গুয়াহাটিতে রাজস্থানকে পরাজিত করল কলকাতা

টাটা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ২০২৫-এর ষষ্ঠ ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স গুয়াহাটির এসিএ স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালসকে ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক-এর বিস্ফোরক অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংস এবং…

Srijita Chattopadhay

 

টাটা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ২০২৫-এর ষষ্ঠ ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স গুয়াহাটির এসিএ স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালসকে ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক-এর বিস্ফোরক অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংস এবং স্পিনারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সৌজন্যে কলকাতা দল টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম জয় অর্জন করেছে। আর্চিবি’র বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে হারের পর এই জয় নিঃসন্দেহে কলকাতার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছ।

কলকাতার অধিনায়ক অজিঙ্ক্য রাহানে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। কলকাতার পাঁচজন বোলারই উইকেট নিয়েছেন, তবে ভারুন চক্রবর্তী (২/১৭) এবং মোইন আলি (২/২৩) ছিলেন সবচেয়ে সফল। তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে রাজস্থান ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করতে সক্ষম হয়।

রাজস্থানের ইনিংসে ধ্রুব জুরেল সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন, আর যশস্বী জায়সোয়াল ২৯ রান করেন। গুয়াহাটির ছেলে রিয়ান পারাগ, যিনি এই ম্যাচে রাজস্থানের হয়ে অধিনায়কত্ব করছিলেন, তিনি ২৫ রান করে আউট হন। পারাগ স্ট্যান্ড-ইন ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, কারণ সঞ্জু স্যামসন আঙুলে আঘাতের কারণে শুধুমাত্র ইম্প্যাক্ট সাবস্টিটিউট হিসেবে অংশ নিতে পেরেছিলেন।

জবাবে কলকাতা নাইট রাইডার্স মাত্র ১৭.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে ম্যাচ জিতে নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শন করেন, ৬১ বলে অপরাজিত ৯৭ রান করেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৮টি চার এবং ৬টি ছক্কা। ডি ককের সঙ্গে অঙ্করিশ রঘুবংশী ১৭ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন।

কলকাতার জয়ের প্রথম কারণ ছিল তাদের স্পিনারদের অসাধারণ বোলিং। সুনীল নারাইন অসুস্থতার কারণে দলে ছিলেন না, কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে মোইন আলি দারুণভাবে সফল হন। শুকনো ও ধীর গুয়াহাটি পিচে মোইন এবং ভারুন চক্রবর্তী মিলে ৮ ওভারে মাত্র ৪০ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তুলে নেন। এমনকি কলকাতার সার্বিক বোলিং এতটাই চমৎকার ছিল যে, তাদের অ্যান্ড্রে রাসেলকে বল করাতে হয়নি।

দ্বিতীয় কারণ হল কুইন্টন ডি ককের অসাধারণ ব্যাটিং। প্রথম ম্যাচে আরসিবির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার পর ডি কক এই ম্যাচে নিজের প্রকৃত ক্লাস দেখিয়েছেন। তিনি শুরুতে সতর্ক ছিলেন, কিন্তু ক্রমশঃ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। জোফরা আর্চারের বোলিং প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি, অর্চারের এক ওভারে এক চার ও দুই ছক্কা মেরে ম্যাচের ফলাফল নিশ্চিত করেন।

তৃতীয় কারণ ছিল কলকাতার সামগ্রিক বোলিং পারফরম্যান্স। শুধু স্পিনাররাই নয়, পেসারদেরও অবদান ছিল জয়ে। হর্ষিত রাণা এবং বৈভব আরোরা দুজনেই ২টি করে উইকেট নেন। রাজস্থানের কোনো ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।

চতুর্থ কারণ হল কলকাতার ফিল্ডিং। তারা ফিল্ডে কোনো সহজ ক্যাচ মিস করেনি এবং সবসময় উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করেছে। রাজস্থানের অধিনায়ক রিয়ান পারাগ যখন ভালো খেলছিলেন, তখন কলকাতার কীপার ডি কক তাঁর ক্যাচ ধরে নেন। এসব ছোট ছোট মুহূর্ত জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

পঞ্চম কারণ হল রান তাড়া করার সময় কলকাতার ব্যাটিং। মাত্র ১৫২ রানের লক্ষ্য হলেও, কলকাতা খুব নির্ভুলভাবে লক্ষ্য অনুসরণ করে। ডি কক ৩৫ বলে অর্ধশতক পূরণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রায় সেঞ্চুরি করেন। শুধুমাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তারা জয় অর্জন করে, যা তাদের ব্যাটিং দক্ষতা প্রমাণ করে।

উল্লেখ্য যে, গুয়াহাটির বারসাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ পর্যন্ত মাত্র ৪টি আইপিএল ম্যাচ হয়েছে। এখানে প্রথম ব্যাটিং করা দল ২ বার জয়ী হয়েছে, আর রান তাড়া করা দল ১ বার জিতেছে। এখানে গড় স্কোর ১৮০, যা দেখিয়ে দেয় যে এই মাঠে বোলারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাহানে ম্যাচের পর বলেন, “আমরা প্রথম ছয় ওভারে দারুণ বোলিং করেছি। মিডল ওভারগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ – স্পিনাররা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। মোইন তার সুযোগ পেয়েছে এবং খুব ভালো বোলিং করেছে। এই ফরম্যাটে আমরা চাই খেলোয়াড়রা নির্ভয়ে খেলুক, আমরা তাদের স্বাধীনতা দিতে চাই।”

এই জয়ের ফলে কলকাতা নাইট রাইডার্স পয়েন্ট টেবিলে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে, যেখানে রাজস্থান রয়্যালস টানা দ্বিতীয় হারের পর তালিকার সবার নিচে রয়েছে। কলকাতা পরবর্তী ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মুখোমুখি হবে, যেখানে তারা এই ধারা বজায় রাখতে চাইবে।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।