2025 championship highlights: ২০২৫ সাল খেলাধুলার জগতে এক অভূতপূর্ব বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেখানে বিভিন্ন দল তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে এবং নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। ক্রিকেট থেকে ফুটবল – প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন সব অর্জন ঘটেছে যা ভক্তদের হৃদয়ে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। ভারতীয় ক্রিকেট দল তাদের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছে, প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন তাদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা অর্জন করেছে, আর ইংলিশ ফুটবলে একাধিক দল তাদের দীর্ঘদিনের খরা অবসান ঘটিয়েছে।
ক্রিকেটের জগতে সবচেয়ে বড় সাফল্যটি এসেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ থেকে, যেখানে ভারত নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে তাদের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছে। ৯ মার্চ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ফাইনালে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২৫১ রান করে। জবাবে ভারত ৪৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করে জয় লাভ করে। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, যিনি ৮৩ বলে ৭৬ রান করেন।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে এই জয়ের মাধ্যমে ভারত ১২ বছর পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে তুলেছে। এটি ছিল তাদের ২০০২ ও ২০১৩ সালের পর তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়, যা তাদের এই প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক সফল দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক রান করেন নিউজিল্যান্ডের রচিন রবীন্দ্র (২৬৩ রান), যিনি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান।
ইউরোপীয় ফুটবলে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনের ক্ষেত্রে, যারা তাদের ৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছে। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফরাসি ক্লাব অ্যালিয়ানজ এরিনায় ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে পরাজিত করে এই ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করে। লুইস এনরিকের নেতৃত্বাধীন দলটি সিমোনে ইনজাগির ইন্টারকে সহজেই হারিয়ে তাদের ইউরোপীয় গৌরব অর্জন করে।
ইংলিশ ফুটবলেও একাধিক দল তাদের দীর্ঘদিনের ট্রফি খরা অবসান ঘটিয়েছে। টটেনহ্যাম হটস্পার ১৭ বছর পর একটি ট্রফি জিতেছে, উয়েফা ইউরোপা লিগ জয় করে। অ্যাঞ্জে পোস্তেকোগ্লুর নেতৃত্বে স্পার্স ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারায়, ব্রেনান জনসনের গোলে জয় আসে। এই জয়ের মাধ্যমে টটেনহ্যাম তাদের ট্রফি না জেতার জন্য যে সমালোচনার মুখে পড়তে হতো, তার অবসান ঘটায়।
ক্রিস্টাল প্যালেসের সাফল্য আরও চমকপ্রদ, কারণ তারা ১২০ বছর পর তাদের প্রথম বড় ট্রফি জিতেছে। এফএ কাপ ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ঈগলস তাদের প্রথম এফএ কাপ শিরোপা অর্জন করে। এবেরেচি এজের গোল এবং ডিন হেন্ডারসনের পেনাল্টি সেভের মাধ্যমে প্যালেস এই ঐতিহাসিক জয় পায়। ১৯৯০ ও ২০১৬ সালে দুবার ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলে তারা অবশেষে সফল হয়।
নিউক্যাসল ইউনাইটেডও তাদের ৭০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে, ইএফএল কাপ জয় করে। এডি হাওয়ের নেতৃত্বাধীন দল প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে ২-১ গোলে হারিয়ে এই শিরোপা জেতে। ড্যান বার্ন ও আলেকজান্ডার ইসাকের গোলে নিউক্যাসল ১৯৫৫ সালের এফএ কাপ জয়ের পর প্রথম বড় ট্রফি ঘরে তোলে।
আমেরিকান ফুটবলে অবশ্য ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কানসাস সিটি চিফস সুপার বোল ৫৯-এ পরাজিত হয়েছে, যা তাদের ২০২৫ সালে প্রত্যাবর্তনের জন্য অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা দিয়েছে। প্যাট্রিক মাহোমস ও তার দল এই পরাজয়কে শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মাহোমসের ভাষায়, “যখন তুমি সুপার বোল হারাও… তখন আরও কঠোর পরিশ্রম করে ফিনিশ করার অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা পাও।”
বায়ার্ন মিউনিখের হ্যারি কেনও ২০২৫ সালে তার প্রথম বড় ট্রফি জিতেছেন, যা তার দীর্ঘদিনের ট্রফিবিহীনতার অবসান ঘটিয়েছে। ইংলিশ স্ট্রাইকার তার জার্মান ক্লাবের সাথে অবশেষে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন।
খেলাধুলার এই বছরটি প্রমাণ করেছে যে ধৈর্য ও অধ্যবসায় শেষ পর্যন্ত ফল দেয়। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর যে সাফল্য আসে, তা অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে। প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ক্রিস্টাল প্যালেসের ১২০ বছর পরের প্রথম ট্রফি, নিউক্যাসলের ৭০ বছরের অপেক্ষার অবসান এবং ভারতের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি – এই সবকিছুই ২০২৫ সালকে খেলাধুলার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় বছর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।