Pediatric speech therapy: শিশুর দেরিতে কথা বলা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত। শিশুদের কথা বলার ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট মাইলফলক রয়েছে, এবং এগুলো পূরণ না হলে তা দেরিতে কথা বলার লক্ষণ হতে পারে।
শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ
শিশুর দেরিতে কথা বলার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:
- শারীরিক সমস্যা: সেরিব্রাল পালসি, শ্রবণশক্তি হারানো বা মুখের গঠনগত ত্রুটি (যেমন ঠোঁট কাটা) শিশুদের কথা বলায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে.
- মানসিক স্বাস্থ্য: অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) শিশুর ভাষাগত বিকাশে বাধা দিতে পারে। এই অবস্থায় শিশুদের মধ্যে ভাষা বা শব্দ প্রকাশের ক্ষমতা কমে যায়.
- পরিবেশগত প্রভাব: আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও টেলিভিশন শিশুদের কথার বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শহরের শিশুরা গ্রামের তুলনায় দেরিতে কথা বলে, কারণ তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কম সময় কাটায়.
- পারিবারিক পরিস্থিতি: কর্মজীবী বাবা-মায়ের সন্তানরা অনেক সময় কম কথোপকথনে থাকে, যা তাদের ভাষাগত বিকাশকে প্রভাবিত করে.
শিশুর ভাষাগত বিকাশের মাইলফলক
শিশুদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট বয়সে ভাষাগত বিকাশের মাইলফলক রয়েছে:
- জন্ম থেকে ৩ মাস: শিশুরা আনন্দ প্রকাশের জন্য ধ্বনি উচ্চারণ করে।
- ৪ থেকে ৬ মাস: তারা বু-বু শব্দ করে এবং হাসি বা কান্নার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়।
- ৭ মাস থেকে ১ বছর: বাবা-মা ডাকার চেষ্টা করে।
- ১ থেকে ২ বছর: শিশুরা দুই শব্দ একত্রিত করে বাক্য তৈরি করতে শুরু করে।
- ২ থেকে ৩ বছর: তারা ছোট গল্প বলতে পারে এবং বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতে শিখে
সমাধান ও করণীয়
শিশুর দেরিতে কথা বলার সমস্যা শনাক্ত হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- প্রথম তিন বছর মনোযোগ দিন: শিশুদের প্রথম তিন বছরে ভাষাগত বিকাশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে তাদের কথায় দেরি হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখতে হবে
. - বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন: যদি শিশু তিন বছরের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে কথা না বলে, তবে দ্রুত একজন শিশু নিউরোলজিস্ট বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত
. - স্পিচ থেরাপি: প্রয়োজন অনুযায়ী স্পিচ থেরাপি শুরু করা যেতে পারে। এটি শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
- পরিবারের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অধিক সময় কাটানো, বই পড়া এবং গল্প বলা শিশুর ভাষাগত বিকাশে সহায়ক হতে পারে
শীতে শিশুর স্নান: সাবধানতা ও সুরক্ষার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
.
পরিসংখ্যান ও তথ্য
বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশুর ৫% থেকে ১০% দেরিতে কথা বলে। এই সমস্যা সাধারণত পুরুষ শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট, সেরিব্রাল পালসি এবং শ্রবণ সমস্যা শিশুদের মধ্যে দেরিতে কথা বলার ঝুঁকি বাড়ায়.
শিশুর দেরিতে কথা বলা একটি জটিল সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বাবা-মায়ের সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও থেরাপি গ্রহণ করলে শিশুর ভাষাগত দক্ষতা উন্নত করা সম্ভব।এভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিশুর ভবিষ্যৎ উন্নত করা সম্ভব হবে।