Recent condition of Delhi’s air pollution: দিল্লির বায়ু দূষণের পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত তিন দিন ধরে রাজধানীর বায়ু মানসূচক (AQI) গড়ে ৪০০-এর উপরে থাকায় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। শুক্রবার থেকে বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য।বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় দিল্লি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম স্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর।
দিল্লির এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই নয়, সমগ্র দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।গত কয়েকদিনে দিল্লির AQI ৪৫০-এর উপরে পৌঁছেছে, যা অত্যন্ত মারাত্মক স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক।দিল্লির এই পরিস্থিতির পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায়, যার ফলে দূষণকারী কণা নিচের দিকে নেমে আসে। এছাড়া পাশের রাজ্যগুলোতে কৃষি বর্জ্য পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ কাজের ধুলো এবং শিল্প কারখানার নির্গমন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
Delhi CM Atishi: অতিশি শপথ নেবেন আজ, হবেন দিল্লির সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী
পরিস্থিতি মোকাবিলায় দিল্লি সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, অত্যাবশ্যকীয় কাজ ছাড়া সরকারি অফিসগুলোতে Work from Home চালু করা হয়েছে। এছাড়া নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং ডিজেল চালিত গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।তবে এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ প্রয়োজন। গবেষকরা মনে করছেন, পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, এবং সবুজায়নের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে।দিল্লির বায়ু দূষণের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
পরিবেশবিদরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কঠোর আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৬.৭ লক্ষ। দিল্লির মতো মহানগরীগুলোতে এই সংখ্যা আরও বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, দিল্লিতে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু প্রায় ১০ বছর কমে যেতে পারে।বায়ু দূষণের এই মারাত্মক প্রভাব শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এর ফলে অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে ভারতের জিডিপি প্রতি বছর প্রায় ৮.৫% ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে দিল্লির অবদান সবচেয়ে বেশি।
দিল্লির বায়ু দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (GRAP)। এই পরিকল্পনার অধীনে AQI-এর মান অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন, AQI ৪০০-এর উপরে গেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা, ডিজেল গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, এবং স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, এবং শহরের চারপাশে সবুজ বেল্ট তৈরি করা। এছাড়া পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কৃষি বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা এবং শিল্প কারখানার নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।
ঘরের বিষাক্ত বাতাস থেকে বাঁচতে এই ৭টি গাছ অবশ্যই রাখুন
দিল্লির বায়ু দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় নাগরিক সচেতনতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্তরেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, গণপরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধি, বাড়িতে সবুজায়ন, এবং প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর মতো ছোট ছোট পদক্ষেপও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। যেমন, চীনের বেইজিং শহর একসময় বায়ু দূষণের জন্য কুখ্যাত ছিল। কিন্তু কঠোর নীতি প্রণয়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে তারা এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। দিল্লিও এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, দিল্লির বায়ু দূষণের সমস্যা একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। এর সমাধানে প্রয়োজন সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কঠোর আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এটি শুধু দিল্লির নয়, সমগ্র দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে।