ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা। যানজট এড়িয়ে আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই রুটে যাতায়াত করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে এই রুটে একাধিক আন্তঃনগর এবং মেইল ট্রেন পরিচালনা করে, যা যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।আমরা ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেন চলাচল (Dhaka to Brahmanbaria Train Schedule), ২০২৫ সালের সর্বশেষ সময়সূচী, ভাড়ার তালিকা, এবং অনলাইন টিকেট বুকিংয়ের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভূমিকার প্রেক্ষাপট: কেন ট্রেন ভ্রমণ জনপ্রিয়?
সড়কপথের দীর্ঘ যানজট এবং سفরের অনিশ্চয়তা এড়াতে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের যাত্রীদের প্রথম পছন্দ ট্রেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ে সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন কোচ সংযোজন, অনলাইন টিকেটিং সিস্টেমের আধুনিকায়ন এবং সময়ানুবর্তিতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা যাত্রীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলীয় রুটের অন্যতম ব্যস্ত এই পথে যাত্রী সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে উৎসবের মরসুমে এই রুটে চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ২০২৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এই রুটে প্রায় ৭টি আন্তঃনগর এবং বেশ কয়েকটি মেইল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। যাত্রাপথে সময় লাগে প্রায় ২ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা, যা বাসের তুলনায় অনেক কম।
ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচী (সেপ্টেম্বর ২০২৫)
আন্তঃনগর ট্রেনগুলো এই রুটে সবচেয়ে দ্রুত এবং আরামদায়ক হওয়ায় যাত্রীদের কাছে অধিক পছন্দের। নিচে সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সময়সূচী দেওয়া হলো:
ট্রেনের নাম | ট্রেন নম্বর | ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় | ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছানোর সময় | সাপ্তাহিক বন্ধের দিন |
পারাবত এক্সপ্রেস | ৭০৯ | সকাল ০৬:৩৫ | সকাল ০৯:০৫ | মঙ্গলবার |
উপকূল এক্সপ্রেস | ৭১১ | বিকাল ০৩:২০ | বিকাল ০৫:২৫ | বুধবার |
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস | ৭১৭ | সকাল ১১:১৫ | দুপুর ০১:৪০ | কোনো বন্ধ নেই |
মহানগর প্রভাতী | ৭০৪ | সকাল ০৭:৪৫ | সকাল ১০:১০ | কোনো বন্ধ নেই |
মহানগর গোধূলী | ৭২১ | রাত ০৯:০০ | রাত ১১:১৫ | কোনো বন্ধ নেই |
তুর্ণা এক্সপ্রেস | ৭৪১ | রাত ১১:৩০ | রাত ০১:৪০ (পরদিন) | কোনো বন্ধ নেই |
কালনী এক্সপ্রেস | ৭৭৭ | বিকাল ০৪:০০ | সন্ধ্যা ০৬:২০ | শুক্রবার |
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ট্রেনের সময়সূচী বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিবর্তিত হতে পারে। যাত্রার পূর্বে সর্বশেষ তথ্য বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা ‘রেল সেবা’ অ্যাপ থেকে যাচাই করে নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।
ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেইল ও কমিউটার ট্রেনের সময়সূচী
আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি এই রুটে বেশ কয়েকটি মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে যা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
ট্রেনের নাম | ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় | ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছানোর সময় | সাপ্তাহিক বন্ধের দিন |
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস | সকাল ০৮:৩০ | দুপুর ১২:৩০ | কোনো বন্ধ নেই |
তিতাস কমিউটার | বিকাল ০২:৪০ | বিকাল ০৫:৪০ | কোনো বন্ধ নেই |
চট্টগ্রাম মেইল | রাত ১০:৩০ | ভোর ০৪:৩০ (পরদিন) | কোনো বন্ধ নেই |
ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের টিকেটের মূল্য তালিকা (২০২৫)
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন দামের টিকেটের ব্যবস্থা রেখেছে। ২০২৫ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, টিকেটের মূল্য (১৫% ভ্যাট সহ) নিচে উল্লেখ করা হলো:
শ্রেণীর নাম | টিকেটের মূল্য (আনুমানিক) | সুযোগ-সুবিধা |
শোভন | ১২০ টাকা | সাধারণ আসন, নন-এসি |
শোভন চেয়ার | ১৪৫ – ১৫০ টাকা | তুলনামূলক উন্নত আসন, নন-এসি |
প্রথম সিট | ১৯০ – ২৩০ টাকা | আরামদায়ক এবং প্রশস্ত আসন, নন-এসি |
প্রথম বার্থ | ২৮৫ – ৩৪০ টাকা | ঘুমানোর জন্য বার্থ, নন-এসি |
স্নিগ্ধা | ২৭৬ – ২৮৮ টাকা | শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) চেয়ার |
এসি সিট | ৩২৮ – ৩৪০ টাকা | শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে আরামদায়ক আসন |
এসি বার্থ | ৪৮৯ – ৫১২ টাকা | শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে ঘুমানোর ব্যবস্থা |
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বণিক বার্তা পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের যাত্রায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পূর্বে প্রদত্ত ছাড় বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবং সার্বিক পরিচালন ব্যয় বাড়ায় টিকেটের মূল্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
কিভাবে অনলাইন এবং অফলাইনে টিকেট কিনবেন?
বর্তমানে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা আগের চেয়ে অনেক সহজ। যাত্রীরা দুটি প্রধান উপায়ে টিকেট কিনতে পারেন:
অনলাইন পদ্ধতি:
১. ওয়েবসাইট: বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটে (eticket.railway.gov.bd) গিয়ে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে। এরপর যাত্রার তারিখ, প্রারম্ভিক স্টেশন (Dhaka), গন্তব্য স্টেশন (Brahmanbaria), এবং আসন শ্রেণী নির্বাচন করে ট্রেন অনুসন্ধান করতে হবে। পছন্দের ট্রেনের আসন নির্বাচন করে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট সম্পন্ন করা যায়।
২. মোবাইল অ্যাপ: গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘Rail Sheba’ অ্যাপ ডাউনলোড করে একই প্রক্রিয়ায় টিকেট কেনা যায়। অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
অনলাইনে যাত্রার ১০ দিন পূর্ব থেকে টিকেট কেনা যায়। উৎসবের সময় বা ছুটির দিনে দ্রুত টিকেট শেষ হয়ে যায়, তাই আগে থেকে টিকেট কিনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
অফলাইন পদ্ধতি:
যারা অনলাইনে টিকেট কাটতে স্বচ্ছন্দ নন, তারা সরাসরি ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর, বা তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। এক্ষেত্রে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনতে হয়।
বিশেষজ্ঞের মতামত ও যাত্রী অভিজ্ঞতা
পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং নিয়মিত যাত্রীরা ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে ট্রেন ভ্রমণকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেন। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের একজন অধ্যাপক জানান, “সড়কপথের উপর চাপ কমাতে এবং একটি সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রেলওয়ের বিকল্প নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের অংশ হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের ট্রেন সেবা আরও আধুনিক ও দ্রুতগতির করা প্রয়োজন।”
নিয়মিত যাত্রী জনাব আফতাব হোসেন বলেন, “আমি প্রতি সপ্তাহেই চাকরির প্রয়োজনে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাই। ট্রেন আমার জন্য আশীর্বাদ। যানজটের চিন্তা ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি। বিশেষ করে স্নিগ্ধা শ্রেণীর ভ্রমণ বেশ আরামদায়ক।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সুপারিশ
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার প্রকল্পের কারণে এই রুটের ট্রেন চলাচলে গতি এসেছে। ভবিষ্যতে দ্রুতগতির ট্রেন চালু হলে এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থার আরও আধুনিকায়ন হলে যাত্রার সময় আরও কমে আসবে বলে আশা করা যায়। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে স্টেশনগুলোর পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে ট্রেন ভ্রমণ (Dhaka to Brahmanbaria Train Schedule) সময়, অর্থ এবং শ্রম বাঁচানোর একটি চমৎকার উপায়। বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিকায়ন এবং সেবার মান বৃদ্ধির ফলে এই রুটে ট্রেন যাত্রা যাত্রীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা করে এবং আগেভাগে টিকেট নিশ্চিত করে আপনিও এই রুটে একটি আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQ)
১. ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে ট্রেনে কত সময় লাগে?
উত্তর: ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে আন্তঃনগর ট্রেনে সাধারণত ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা এবং মেইল বা কমিউটার ট্রেনে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
২. ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের দ্রুততম ট্রেন কোনটি?
উত্তর: পারাবত এক্সপ্রেস এবং মহানগর প্রভাতী এই রুটের অন্যতম দ্রুতগতির ট্রেন।
৩. ট্রেনের টিকেট কি যাত্রার দিন স্টেশনে পাওয়া যায়?
উত্তর: আসন খালি থাকা সাপেক্ষে যাত্রার দিন স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকেট কেনা যায়। তবে ছুটির দিন বা উৎসবের সময় আসন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
৪. অনলাইনে কেনা টিকেট কি প্রিন্ট করা বাধ্যতামূলক?
উত্তর: না, বাধ্যতামূলক নয়। মোবাইলে টিকেটের সফট কপি এবং পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন) দেখালেই চলে। তবে প্রিন্ট কপি সাথে রাখাও একটি ভালো অভ্যাস।
৫. ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের এসি টিকেটের ভাড়া কত?
উত্তর: এই রুটে স্নিগ্ধা শ্রেণীর ভাড়া প্রায় ২৮৮ টাকা, এসি সিটের ভাড়া প্রায় ৩৪০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া প্রায় ৫১২ টাকা।