Dhaka Zoo official timings: ঢাকা চিড়িয়াখানা বা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা দেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। মিরপুরে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানা ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে এখানে ১৯১টি প্রজাতির প্রায় ৫,০০০ প্রাণী রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ দর্শনার্থী এই চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে থাকেন।
চিড়িয়াখানার ইতিহাস
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালে। প্রথমে এটি ঢাকা হাইকোর্টের কাছে কয়েকটি হরিণ, বানর ও হাতি নিয়ে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি ঈদগাহ ময়দানে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬১ সালে চিড়িয়াখানার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়। অবশেষে ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন বর্তমান অবস্থানে চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন করা হয়।
Indian National Fish: ভারতের জাতীয় মাছ নয়, জলজ প্রাণী – জানুন এই প্রাণীর অজানা রহস্য!
দর্শন সময় ও সাপ্তাহিক ছুটি
চিড়িয়াখানার দর্শন সময় মৌসুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়:
মৌসুম | সময় |
---|---|
গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল-অক্টোবর) | সকাল ৯:০০ থেকে বিকেল ৬:০০ |
শীতকাল (নভেম্বর-মার্চ) | সকাল ৮:০০ থেকে বিকেল ৫:০০ |
সাপ্তাহিক ছুটির দিন:
- প্রতি রবিবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে
- তবে রবিবার যদি সরকারি ছুটির দিন হয়, তাহলে চিড়িয়াখানা খোলা থাকে
বিশেষ দিনগুলোতে চিড়িয়াখানার সময়সূচী:
- ঈদের দিন: সকাল ৯:০০ থেকে বিকেল ৫:০০
- জাতীয় দিবস ও সরকারি ছুটির দিন: সকাল ১০:০০ থেকে বিকেল ৫:০০
প্রবেশ মূল্য
চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য টিকেট কাটতে হয়। ২০২৫ সালের হালনাগাদ প্রবেশ মূল্য নিম্নরূপ:
- ২ বছরের উপরে সকলের জন্য: ৫০ টাকা
- জাদুঘর প্রবেশ মূল্য: ১০ টাকা
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
- স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে (শর্ত সাপেক্ষে)
- সরকারি ছুটির দিনেও টিকেটের মূল্য একই থাকে
প্রাণী সম্পদ
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে:
- স্তন্যপায়ী: ৫৮ প্রজাতির
- পাখি: ৯১ প্রজাতির
- সরীসৃপ: ১৩ প্রজাতির
- মাছ: ২৮ প্রজাতির
উল্লেখযোগ্য প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে:
- রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
- এশীয় সিংহ
- লোনা পানির কুমির
- ইম্পালা
- এমু
- টাপির
- এশীয় কালো ভাল্লুক
- হাতি
- চিতা
- গণ্ডার
- জেব্রা
- জিরাফ
- শিম্পাঞ্জি
চিড়িয়াখানার আয়তন ও অবকাঠামো
- মোট আয়তন: ১৮৬ একর (৭৫ হেক্টর)
- দুটি প্রশস্ত লেক: ১৩ হেক্টর
- বার্ষিক বাজেট: ৩৭.৫ মিলিয়ন টাকা (যার মধ্যে ২৫ মিলিয়ন টাকা প্রাণীদের খাবারের জন্য ব্যয় হয়)
বিনোদন সুবিধা
চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনোদন সুবিধা রয়েছে:
- হাতির পিঠে চড়া
- ঘোড়ার পিঠে চড়া
- মাছ ধরা
- পিকনিক করার সুযোগ
সুবিধাদি
দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে চিড়িয়াখানায় নিম্নলিখিত সেবাগুলো রয়েছে:
- খাবারের স্টল ও কিয়স্ক
- পার্কিং সুবিধা (সামান্য ফি প্রযোজ্য)
- প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র
- পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেট/ওয়াশরুম
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা (আনসার, সিসিটিভি ক্যামেরা)
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানার নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা” করা হয়
- চিড়িয়াখানাটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়
- প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০,০০০ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেন
যোগাযোগ
- ঠিকানা: জু রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬
- ফোন: +৮৮০ ২-৯০০২০২০
- ভেটেরিনারি সার্জনের ফোন: +০৮৮-০২-৯০০৩২৫২
যাতায়াত
মিরপুর-১ থেকে নিয়মিত বাস সার্ভিস চিড়িয়াখানায় যাওয়ার জন্য পাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে মিরপুর-১ এ এসে সহজেই চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায়।
সর্বশেষ উন্নয়ন
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাকে আরও আধুনিক ও দর্শনার্থী-বান্ধব করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা চিড়িয়াখানার আকর্ষণ আরও বাড়াবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ১০টি প্রাণী: আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার এক অনন্য সমাহার
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় পলিথিন ব্যাগ নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ
- নিজস্ব খাবার নিয়ে যাওয়া যায়, তবে নির্দিষ্ট স্থানে খাওয়ার অনুমতি রয়েছে
- প্রাণীদের খাওয়ানো নিষিদ্ধ
- ফ্ল্যাশ ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে না
- প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকুন
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা শুধু বিনোদনের কেন্দ্র নয়, এটি প্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা ও শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে আসলে আপনি প্রকৃতির বিচিত্র রূপ দেখার পাশাপাশি প্রাণী জগত সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তাই পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে একদিন ঘুরে আসুন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায়।