Auspicious Items to Buy on Dhanteras: ২০২৪ সালের ধনতেরস উদযাপিত হবে ২৯ অক্টোবর, মঙ্গলবার। এই দিনটি হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্তিক মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে পালিত হয়। ধনতেরস হল দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন, যা সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পড়ে। এই দিনে ধনলক্ষ্মী ও কুবেরের পূজা করা হয় এবং নতুন জিনিসপত্র, বিশেষ করে সোনা বা রূপার গহনা কেনার রীতি রয়েছে।
ধনতেরস শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, যেখানে ‘ধন’ মানে সম্পদ এবং ‘তেরস’ মানে ত্রয়োদশী তিথি। এই দিনে বিশ্বাস করা হয় যে ধনের দেবী লক্ষ্মী ও ধনরক্ষক কুবের পৃথিবীতে আসেন এবং তাদের পূজা করলে সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য লাভ হয়।পুরাণে বলা হয়েছে, সমুদ্র মন্থনের সময় ধন্বন্তরি একটি পাত্রে অমৃত নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কারণে ধনতেরসে আয়ুর্বেদের প্রতিষ্ঠাতা ধন্বন্তরিকেও পূজা করা হয়।
বাড়িতে পেঁচার বাসা তৈরি করলে ভাগ্য খুলে যাবে, জেনে নিন কেন এই পাখি এত ভাগ্যবান
২০২৪ সালের ধনতেরসে শুভ মুহূর্ত ও পূজার সময় নিম্নরূপ:
• ত্রয়োদশী তিথি শুরু: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, সকাল ১১:০৩ মিনিট
• ত্রয়োদশী তিথি শেষ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, সকাল ১২:১৭ মিনিট
• প্রদোষ কাল: সন্ধ্যা ৫:৩৮ মিনিট থেকে রাত ৮:১৪ মিনিট পর্যন্ত
• বৃষ লগ্ন: রাত ৮:১০ মিনিট থেকে রাত ১০:০৫ মিনিট পর্যন্ত
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে প্রদোষ কাল বা বৃষ লগ্নের সময় পূজা ও কেনাকাটা করা সবচেয়ে শুভ। তবে যদি এই সময়ে সম্ভব না হয়, তাহলে ত্রয়োদশী তিথির যেকোনো সময়ে পূজা ও কেনাকাটা করা যেতে পারে।
ধনতেরসে কেনাকাটার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে:
১. সোনা বা রূপার গহনা: এই দিনে সোনা বা রূপার গহনা কেনার রীতি রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে এতে সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
২. বাসনপত্র: নতুন রান্নার বাসনপত্র, বিশেষ করে পিতল বা তামার বাসন কেনা হয়। এটি শুভ বলে মনে করা হয়।
৩. ইলেকট্রনিক্স: আধুনিক যুগে অনেকে এই দিনে নতুন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিও কেনেন।
৪. গৃহসজ্জার সামগ্রী: ঘর সাজানোর জন্য নতুন আসবাবপত্র বা সজ্জার সামগ্রী কেনা হয়।
৫. বাহন: অনেকে এই দিনে নতুন গাড়ি বা দুচাকা যান কেনেন।
তবে মনে রাখবেন, কেনাকাটার সময় অপচয় এড়িয়ে চলুন এবং আপনার আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে থেকে ক্রয় করুন।
কেনাকাটা ছাড়াও ধনতেরস উদযাপনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রীতি রয়েছে:
১. গৃহ পরিষ্কার: উৎসবের আগে বাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এটি লক্ষ্মীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হয়।
২. রঙ্গোলি আঁকা: বাড়ির প্রবেশপথে রঙিন গুঁড়ো দিয়ে সুন্দর নকশা আঁকা হয়। এটি শুভ ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
৩. প্রদীপ জ্বালানো: সন্ধ্যায় বাড়ির চারপাশে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এটি অন্ধকার দূর করে আলোর আগমনকে স্বাগত জানায়।
৪. লক্ষ্মী-কুবের পূজা: বাড়িতে লক্ষ্মী ও কুবেরের মূর্তি বা ছবি স্থাপন করে পূজা করা হয়।
৫. মিষ্টি বিতরণ: পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এটি সম্পর্ক মজবুত করে ও আনন্দ ছড়ায়।
ধনতেরস শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য:
১. অর্থনীতি চাঙ্গা: এই সময়ে বাজারে ক্রয়-বিক্রয় বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলে। ২০২৩ সালে ধনতেরসে ভারতে প্রায় ৪৫,০০০ কোটি টাকার সোনা ও গহনা বিক্রি হয়েছিল।
২. কর্মসংস্থান: উৎসব উপলক্ষে অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে খুচরা বিক্রেতা ও সেবা খাতে।
৩. সামাজিক সংহতি: পারিবারিক ও সামাজিক মিলনের সুযোগ সৃষ্টি করে এই উৎসব।
৪. ঐতিহ্য সংরক্ষণ: প্রাচীন রীতি-নীতি পালনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়।
ধনতেরস উদযাপনের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন:
১. ভিড় এড়ানো: কেনাকাটার সময় অত্যধিক ভিড় এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে অনলাইনে কেনাকাটা করুন।
২. প্রতারণা সাবধানতা: সোনা বা দামি জিনিস কেনার সময় বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনুন এবং বিল সংরক্ষণ করুন।
৩. আগুন সতর্কতা: প্রদীপ জ্বালানোর সময় অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকুন।
৪. আর্থিক সীমাবদ্ধতা: অতিরিক্ত খরচ এড়িয়ে চলুন। বাজেটের মধ্যে থেকে কেনাকাটা করুন।
৫. পরিবেশ সচেতনতা: প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করুন।
পোখরাজ পরুন এই আঙুলে, বাড়বে সৌভাগ্য-সম্পদ!
ধনতেরস হল একটি আনন্দময় ও তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব যা আমাদের জীবনে সমৃদ্ধি ও সুখ নিয়ে আসে। ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর এই উৎসব পালনের সময় আমরা যেন শুধু বাহ্যিক কেনাকাটায় মনোনিবেশ না করে, জীবনের প্রকৃত মূল্যবোধগুলিকেও স্মরণ করি। পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক সম্প্রীতি, ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত অর্থে ধনবান হতে পারি। আসুন, এই ধনতেরসে আমরা শুধু বস্তুগত সম্পদ নয়, মানসিক শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতির ধনও অর্জন করি।
মন্তব্য করুন