Dhanteras 2025 Date and Time: দীপাবলি, অর্থাৎ আলোর উৎসবের সূচনা হয় ধনতেরাসের হাত ধরে। প্রতি বছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই শুভ দিনটি পালিত হয়। ২০২৫ সালেও তার অন্যথা হবে না। এই দিনটি মূলত ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী, সম্পদের দেবতা কুবের এবং স্বাস্থ্যের দেবতা ধন্বন্তরির আরাধনার জন্য উৎসর্গীকৃত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনের তাৎপর্য অপরিসীম, কারণ বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে শুভ মুহূর্তে কেনা সোনা, রূপা বা বাসনপত্র পরিবারের জন্য সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনে। পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৫ সালের ধনতেরাস উদযাপিত হবে ১৮ই অক্টোবর, শনিবার। এই উৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঠিক তিথি এবং প্রদোষ কালের মুহূর্তে পুজো সম্পন্ন করা। বিভিন্ন পঞ্জিকা, যেমন দৃক পঞ্জিকা (Drik Panchang) এবং অন্যান্য প্রামাণ্য সূত্র অনুসারে, ত্রয়োদশী তিথি শুরু হচ্ছে ১৮ই অক্টোবর দুপুরে এবং তা ১৯শে অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। যেহেতু ধনতেরাসের পুজো সূর্যাস্তের পরে, প্রদোষ কালে করাই শাস্ত্রসম্মত, তাই ১৮ই অক্টোবর তারিখটিই এই পুজোর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
ধনতেরাস ২০২৫: তারিখ এবং সঠিক সময়সূচী
ধনতেরাস, যা ‘ধনত্রয়োদশী’ নামেও পরিচিত, তা পাঁচ দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন। এই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিথি এবং শুভ মুহূর্তের সঠিক গণনা।
২০২৫ সালে ধনতেরাস কবে?
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ধনতেরাস পালিত হবে ১৮ই অক্টোবর, শনিবার।
ত্রয়োদশী তিথির সময়কাল
যেকোনো হিন্দু উৎসবের দিন মূলত তিথির উপর নির্ভরশীল। ২০২৫ সালের ধনত্রয়োদশী তিথির সময়সূচী নিচে দেওয়া হলো:
- ত্রয়োদশী তিথি শুরু: ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ (শনিবার), দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে।
- ত্রয়োদশী তিথি শেষ: ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ (রবিবার), দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে।
১৮ই অক্টোবর কেন পুজোর দিন?
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে তিথি যেহেতু ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত থাকছে, তাহলে ১৮ তারিখে পুজো কেন? হিন্দু শাস্ত্র মতে, ধনতেরাসের পুজো সূর্যাস্তের পর প্রদোষ কালে (গোধূলি বেলা) এবং স্থির লগ্নে (বিশেষত বৃষভ লগ্ন) করা সর্বাধিক শুভ। দ্য ইকোনমিক টাইমস (The Economic Times) অনুসারে, ১৮ই অক্টোবর তারিখেই প্রদোষ কালের সময় ত্রয়োদশী তিথি সক্রিয় থাকছে। ১৯শে অক্টোবর সূর্যাস্তের সময় চতুর্দশী তিথি থাকবে, যা নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশীর দিন। তাই শাস্ত্রীয় মতে, ১৮ই অক্টোবরই ধনতেরাস পুজো এবং যম দীপম প্রজ্জ্বলনের সঠিক দিন।
২০২৫ সালের ধনতেরাস পুজোর বিস্তারিত মুহূর্ত
পুজো এবং কেনাকাটার জন্য সঠিক সময় জানা অত্যন্ত জরুরী। নিচে কলকাতা সহ ভারতের প্রধান শহরগুলির সময়সূচী দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, স্থানভেদে সূর্যাস্তের সময়ের উপর ভিত্তি করে এই মুহূর্ত সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।
ধনতেরাস ২০২৫: পুজোর শুভ মুহূর্ত (সময়কাল: ১ ঘণ্টা ০৪ মিনিট)
বিবরণ | তারিখ | সময় |
ধনতেরাস পুজোর শুভ মুহূর্ত | ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ | সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনিট – রাত ৮টা ২০ মিনিট |
প্রদোষ কাল | ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ | সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিট – রাত ৮টা ২০ মিনিট |
বৃষভ কাল (স্থির লগ্ন) | ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ | সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনিট – রাত ৯টা ১১ মিনিট |
ত্রয়োদশী তিথি আরম্ভ | ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ | দুপুর ১২টা ১৮ মিনিট |
ত্রয়োদশী তিথি সমাপ্তি | ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ | দুপুর ১টা ৫১ মিনিট |
(এই সময়সূচী মূলত দৃক পঞ্জিকা (Drik Panchang) এবং ইন্ডিয়া টুডে (India Today) দ্বারা প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি।)
ধনতেরাসের তাৎপর্য: কেন এই দিনটি এত শুভ?
ধনতেরাসের মাহাত্ম্য কেবল নতুন জিনিস কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর পিছনে রয়েছে গভীর পৌরাণিক এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বাস। এই দিনটি তিনটি প্রধান কারণে পালিত হয়: সুস্বাস্থ্য, ধন-সম্পদ এবং পরিবারের মঙ্গল কামনা।
স্বাস্থ্যের দেবতা ধন্বন্তরির আবির্ভাব
এটিই ধনতেরাসের প্রধান পৌরাণিক ভিত্তি। পুরাণ অনুযায়ী, সমুদ্র মন্থনের সময় কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে দেবতারা এবং অসুররা যখন অমরত্বের সন্ধানে সমুদ্র মন্থন করছিলেন, তখন ভগবান বিষ্ণুর অংশ অবতার ভগবান ধন্বন্তরি এক হাতে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এবং অন্য হাতে অমৃতের কলস নিয়ে আবির্ভূত হন। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া (The Times of India) অনুসারে, ভগবান ধন্বন্তরিকে স্বাস্থ্যের দেবতা এবং আয়ুর্বেদের জনক হিসাবে পূজা করা হয়। তাই ধনতেরাসকে ‘ধন্বন্তরি জয়ন্তী’ও বলা হয়। এই দিনে তাঁর পূজা করলে পরিবারে রোগমুক্তি ঘটে এবং সকলে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। ‘ধন’ শব্দটির একটি অর্থ স্বাস্থ্যও বটে (‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’)।
রাজা হিমার পুত্রের উপাখ্যান ও ‘যম দীপম’
ধনতেরাসের সন্ধ্যার সাথে জড়িয়ে আছে আরও একটি বিখ্যাত কিংবদন্তি। ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে রাজা হিমার পুত্র তার বিবাহের চতুর্থ দিনে সর্পদংশনে মারা যাবে। তার স্ত্রী এই বিষয়ে জানতে পেরে, সেই নির্দিষ্ট দিনে রাজপুত্রের ঘরের দরজায় সমস্ত সোনা-রূপার গয়না এবং মুদ্রা স্তূপ করে রাখেন। তিনি সারা ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন এবং স্বামীকে সারারাত জেগে থাকতে বাধ্য করেন গল্প ও গান শুনিয়ে। যখন মৃত্যুর দেবতা যমরাজ সাপের রূপে রাজপুত্রের প্রাণ নিতে আসেন, তখন গয়নার জৌলুস এবং প্রদীপের তীব্র আলোয় তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তিনি সেই গয়নার স্তূপের উপর বসে সারারাত গল্প শোনেন এবং সকালে রাজপুত্রের প্রাণ না নিয়েই ফিরে যান। এই ঘটনা থেকেই ধনতেরাসের সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে দক্ষিণ দিকে যমরাজের উদ্দেশ্যে একটি প্রদীপ (যম দীপম) জ্বালানোর প্রথা শুরু হয়। বিশ্বাস করা হয়, এটি পরিবারের সদস্যদের অকালমৃত্যু থেকে রক্ষা করে।
দেবী লক্ষ্মী ও কুবেরের উপাসনা
ধনতেরাস মূলত সম্পদের উৎসব। বিশ্বাস করা হয়, এই শুভ দিনে দেবী লক্ষ্মী তাঁর ভক্তদের গৃহে আগমন করেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আলোকিত গৃহে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করলে সারা বছর সংসারে ধন-সম্পদের অভাব হয় না। এই দিনে দেবী লক্ষ্মীর পাশাপাশি ধনের দেবতা কুবেরও পূজিত হন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িতে তাই এই সন্ধ্যায় লক্ষ্মী-গণেশ ও কুবেরের পুজো করা হয়।
ধনতেরাস ২০২৫: কেনাকাটার শুভ সময়
ধনতেরাসের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো কেনাকাটা। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে কেনা জিনিস বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে যেকোনো সময়ে কেনাকাটা করার চেয়ে শুভ মুহূর্তে করা বাঞ্ছনীয়।
কেনাকাটার বিভিন্ন শুভ মুহূর্ত (১৮ই অক্টোবর, ২০২৫)
পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৫ সালে কেনাকাটার জন্য একাধিক শুভ যোগ রয়েছে:
- অমৃত কাল (সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত): এশিয়ানেট নিউজ বাংলা (Asianet News Bangla) অনুযায়ী, সোনা বা রূপা কেনার জন্য দিনের সেরা সময় হলো অমৃত কাল।
- সময়: সকাল ৮টা ৫০ মিনিট – সকাল ১০টা ৩৩ মিনিট।
- শুভ চৌঘড়িয়া (দিনের বেলা):
- সময়: সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট – দুপুর ২টা ৪৭ মিনিট।
- ত্রয়োদশী তিথি শুরু হওয়ার পর:
- সময়: দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটের পর থেকে যেকোনো সময় কেনাকাটা শুভ।
- সন্ধ্যাবেলা (প্রদোষ ও বৃষভ লগ্ন): পুজোর সময়টিও কেনাকাটার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়।
- সময়: সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনিট – রাত ৯টা ১১ মিনিট।
ধনতেরাসে কী কেনা শুভ?
ঐতিহ্যগতভাবে কিছু জিনিস কেনা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়:
- সোনা ও রূপা: এই দুটি ধাতুকে দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক মনে করা হয়। মুদ্রা, গয়না বা ছোট মূর্তি কেনা শুভ।
- পিতল বা কাঁসার বাসন: ভগবান ধন্বন্তরি অমৃতের কলস (যা পিতলের ছিল) নিয়ে উঠেছিলেন, তাই পিতলের বাসন কেনা স্বাস্থ্যের জন্য শুভ।
- ঝাড়ু: নিউজ১৮ বাংলা (News18 Bangla) অনুযায়ী, ধনতেরাসে নতুন ঝাড়ু কেনা খুব শুভ। এটি ঘরের অলক্ষ্মী বা দারিদ্র্য দূর করে বলে বিশ্বাস।
- ধনে বীজ: ধনে (Coriander Seeds) সমৃদ্ধির প্রতীক। এই দিন অল্প ধনে বীজ কিনে এনে ঠাকুরের আসনে রাখলে এবং দীপাবলির পর তা বাড়ির টবে পুঁতলে আর্থিক বৃদ্ধি হয়।
- গোমতী চক্র ও কড়ি: এগুলিও দেবী লক্ষ্মীকে আকর্ষণ করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
কী কেনা অশুভ বলে মনে করা হয়?
কিছু জিনিস এই শুভ দিনে কেনা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়:
- লোহা বা স্টিল: শনিদেবের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় লোহা বা স্টিলের পাত্র এড়ানো হয়।
- ধারালো বস্তু: ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি।
- কাঁচের জিনিস: কাঁচ রাহুর সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়।
- কালো রঙের বস্তু: এই শুভ দিনে কালো রঙ এড়িয়ে চলাই ভালো।
ধনতেরাস পুজোর সঠিক বিধি (Step-by-Step)
ধনতেরাসের পুজো সাধারণত সন্ধ্যায়, প্রদোষ কালেই করা হয়। এই পুজো তুলনামূলকভাবে সহজ এবং যে কেউ বাড়িতে করতে পারেন।
পুজোর প্রস্তুতি
- পরিচ্ছন্নতা: পুজোর আগে সারা বাড়ি, বিশেষ করে ঠাকুর ঘর এবং মূল দরজা ভালো করে পরিষ্কার করুন। বিশ্বাস করা হয়, মা লক্ষ্মী পরিচ্ছন্ন গৃহে প্রবেশ করেন।
- সাজসজ্জা: বাড়ির মূল দরজায় আলপনা বা রঙ্গোলি দিন। দরজায় আম্রপল্লব এবং গাঁদা ফুলের মালা ঝোলান।
- পূজাস্থান: একটি পরিষ্কার চৌকি বা জলচৌকিতে লাল কাপড় পাতুন। তার উপর লক্ষ্মী, গণেশ, কুবের এবং ধন্বন্তরির মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন। যদি ধন্বন্তরির মূর্তি না থাকে, তবে ভগবান বিষ্ণুর ছবি রাখা যেতে পারে।
পুজোর উপকরণ (সামগ্রী)
- লক্ষ্মী, গণেশ, কুবের ও ধন্বন্তরির মূর্তি বা ছবি।
- প্রদীপ (মাটির বা পিতলের), ঘি, তেল (সর্ষের তেল যম দীপের জন্য) এবং সলতে।
- ধূপ, ধুনো, কর্পূর।
- ফুল, মালা, দূর্বা, আম্রপল্লব।
- পঞ্চামৃত (দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি)।
- নৈবেদ্য (মিষ্টি, ফল, খই, বাতাসা)।
- একটি নতুন ঝাড়ু, ধনে বীজ (অল্প)।
- কেনা নতুন বস্তু (সোনা, রূপা বা বাসন)।
পুজোর পদ্ধতি
- আবাহন: সন্ধ্যায় স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে পুজোর আসনে বসুন। প্রথমে গণেশের পুজো করুন।
- ধন্বন্তরি পুজো: ভগবান ধন্বন্তরির ধ্যান করে তাঁর কাছে পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করুন। মন্ত্র পাঠ করতে পারেন: “ওঁ নমো ভগবতে মহาสudarshanায় বাসুদেবায় ধন্বন্তরয়ে অমৃতকলশ হস্তায় সর্বভয় বিনাশায় সর্বরোগ நிவாரণায় ত্রৈলোক্যপতয়ে ত্রৈলোক্যনিধয়ে শ্রী মহাবিষ্ণুস্বরূপ শ্রী ধন্বন্তরি স্বরূপ শ্রী শ্রী শ্রী ಔಷಧচক্র নারায়ণায় নমঃ”।
- লক্ষ্মী-কুবের পুজো: এরপর দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান কুবেরের পুজো করুন। তাঁদের ফুল, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য অর্পণ করুন। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা (Hindustan Times Bangla) অনুসারে, এই দিনে কেনা সোনা, রূপা বা বাসনপত্র ঠাকুরের সামনে রেখে সেগুলোরও পুজো করা উচিত।
- আরতি: কর্পূর জ্বালিয়ে আরতি করুন এবং পরিবারের সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করুন।
যম দীপম (যমের উদ্দেশ্যে প্রদীপ)
এটি ধনতেরাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথা।
- পুজো শেষ হওয়ার পর, একটি চারমুখী মাটির প্রদীপে সর্ষের তেল দিয়ে সলতে জ্বালান। যদি চারমুখী প্রদীপ না থাকে, তবে একটি সাধারণ প্রদীপ নিলেও চলবে।
- এই প্রদীপটি বাড়ির মূল দরজার বাইরে, দক্ষিণ দিকে মুখ করে রাখুন।
- প্রদীপ রাখার সময় যমরাজের কাছে পরিবারের সকলের দীর্ঘায়ু এবং অকালমৃত্যু থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করুন।
শহর অনুযায়ী ধনতেরাস পুজোর মুহূর্ত (২০২৫)
সূর্যাস্তের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন শহরে পুজোর মুহূর্ত সামান্য আলাদা হয়। নিচে দৃক পঞ্জিকা (Drik Panchang) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী প্রধান শহরগুলির সময় দেওয়া হলো:
শহর | পুজোর শুভ মুহূর্ত (সন্ধ্যায়) |
কলকাতা | সন্ধ্যা ৬:৪১ – সন্ধ্যা ৭:৩৮ |
নতুন দিল্লি | সন্ধ্যা ৭:১৬ – রাত ৮:২০ |
মুম্বাই | সন্ধ্যা ৭:৪৯ – রাত ৮:৪১ |
চেন্নাই | সন্ধ্যা ৭:২৮ – রাত ৮:১৫ |
বেঙ্গালুরু | সন্ধ্যা ৭:৩৯ – রাত ৮:২৫ |
পুনে | সন্ধ্যা ৭:৪৬ – রাত ৮:৩৮ |
জয়পুর | সন্ধ্যা ৭:২৪ – রাত ৮:২৬ |
আহমেদাবাদ | সন্ধ্যা ৭:৪৪ – রাত ৮:৪১ |
ধনতেরাস এবং ভারতের অর্থনীতি
ধনতেরাস কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভারতের অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে গয়না, বাসনপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং গাড়ির বিপুল কেনাবেচা হয়।
- গয়নার বাজার: ভারতের জুয়েলারি শিল্পের জন্য ধনতেরাস বছরের সবচেয়ে বড় বিক্রির দিন। দ্য ইকোনমিক টাইমস (The Economic Times) বা ফোর্বস (Forbes) -এর মতো ব্যবসায়িক প্রকাশনাগুলি প্রতি বছর এই সময়ের বিক্রির পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, যা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সূচক হিসাবেও কাজ করে।
- গ্রামীণ অর্থনীতি: গ্রামীণ ভারতেও এই দিনে বাসনপত্র এবং কৃষিকাজের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি কেনার ধুম পড়ে।
- আধুনিক প্রবণতা: বর্তমানে মানুষ সোনার পাশাপাশি সিলভার ইটিএফ (ETF), ডিজিটাল গোল্ড (Digital Gold) বা গোল্ড বন্ডেও বিনিয়োগ করেন, যা এই উৎসবকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
এই উৎসব আক্ষরিক অর্থেই সম্পদ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে, যা ধন্বন্তরি (স্বাস্থ্য) এবং লক্ষ্মী (সম্পদ) – এই দুইয়ের সমন্বয়ের এক চমৎকার উদাহরণ।
ধনতেরাস ২০২৫ (১৮ই অক্টোবর, শনিবার) শুধুমাত্র কেনাকাটার দিন নয়, এটি স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং পরিবারের মঙ্গল কামনার এক পবিত্র উৎসব। ভগবান ধন্বন্তরির আশীর্বাদে সুস্বাস্থ্য লাভ, যমরাজের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেবী লক্ষ্মী ও কুবেরের আরাধনার মাধ্যমে সংসারে আর্থিক স্থিতি আনার এক সম্মিলিত প্রয়াস হলো এই ধনত্রয়োদশী। সঠিক তিথি এবং শুভ মুহূর্তে নিষ্ঠার সাথে এই ব্রত পালন করলে তা পরিবারের জন্য অবশ্যই সৌভাগ্য বয়ে আনবে।