বক্স অফিসে ঝড় তুলে দিল ‘ধূমকেতু’ ও ‘কুলি’র প্রথম দিনের প্রদর্শন

Sangita Chowdhury 5 Min Read

Dhumketu Coolie box office record: স্বাধীনতা দিবসের আগে মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমা ‘ধূমকেতু’ এবং তামিল সুপারহিট ‘কুলি’ প্রথম দিনেই নতুন বক্স অফিস রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। দুটি সিনেমাই নিজ নিজ ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম দিনের সর্বোচ্চ আয়ের নতুন কীর্তি গড়েছে।

দীর্ঘ ১০ বছর পরে দেব ও শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের জুটি ফিরেছে ‘ধূমকেতু’ সিনেমার মাধ্যমে। প্রথম দিনে এই সিনেমা আয় করেছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি, যা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে প্রথম দিনের সর্বোচ্চ আয়। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত মানভাঞ্জন ভুলে দুই তারকার একসাথে প্রচারণায় অংশগ্রহণ।

রজনীকান্ত অভিনীত ‘কুলি’ প্রথম দিনে বিশ্বব্যাপী ১৫১ কোটি রুপি আয় করে তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই অর্জন রজনীকান্তের ৫০ বছরের অভিনয় জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বাজেটের এই সিনেমা স্বর্ণ চোরাচালানের গল্প নিয়ে নির্মিত।

ভারতের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ১০ সিনেমা কোনগুলো?

‘ধূমকেতু’ সিনেমার জটিল ইতিহাস এবং পুনর্জীবন

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ধূমকেতু’ সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে এবং শেষ হয় ২০১৫ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সিনেমাটি ১০ বছর ধরে মুক্তি পায়নি। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ ছিল প্রযোজনা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা এবং দেব ও শুভশ্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা।

প্রযোজক রানা সরকার এবং দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেনচার্স প্রযোজিত এই সিনেমায় দেব ও শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অভিনয় করেছেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সিনেমার গল্প একজন চা বাগানের ব্যবস্থাপকের জীবনসংগ্রাম নিয়ে।

চিত্রগ্রহণের সময় বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নৈনিতালে চিত্রগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হয় ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার আপত্তির কারণে। প্রযোজক রানা সরকারের সদস্যপদ সংক্রান্ত বিতর্কের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং চিত্রগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

‘কুলি’র ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং প্রত্যাশা

লোকেশ কানাগরাজ পরিচালিত ‘কুলি’ সিনেমা মুক্তির আগেই ব্যাপক আলোচনায় ছিল। প্রথম দিনের জন্য বিশ্বজুড়ে অগ্রিম টিকিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে এসেছিল প্রায় ১৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে তামিল সংস্করণেই বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকার টিকিট।

রজনীকান্তের সাথে এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন নাগার্জুনা, শ্রুতি হাসান, সত্যরাজ, সৌবিন সাহির, উপেন্দ্র প্রমুখ। বিশেষ অতিথি চরিত্রে দেখা যাবে আমির খানকে। সিনেমাটির বাজেট প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে নির্মাণ ব্যয় ৩৫০ কোটি এবং প্রিন্ট ও প্রচারণার জন্য ২৫ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত সাফল্য

‘ধূমকেতু’ প্রথম দিনের সাফল্যের পর দ্বিতীয় দিনে আরও ভালো পারফর্ম করেছে। স্বাধীনতা দিবসের ছুটির কারণে ১৫ আগস্ট ছবিটি আয় করেছে ৩.০২ কোটি টাকা। মাত্র দুই দিনে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি টাকার বেশি, যা টলিউডের ইতিহাসে রেকর্ড।

‘কুলি’ দ্বিতীয় দিনে ভারতে আয় করেছে ৫৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। দুই দিনে মোট আয় ১১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাপী ছবিটি দুই দিনে ২৫০ কোটি টাকা আয় করেছে, যার মধ্যে ভারতের বাজার থেকে এসেছে ১১৮ কোটি টাকা।

বক্স অফিস বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

সিনেমা বিশ্লেষকদের মতে, ‘ধূমকেতু’ এবং ‘কুলি’ দুটি সিনেমাই নিজ নিজ ইন্ডাস্ট্রিতে এ বছরের সবচেয়ে হিট সিনেমার তকমা পেতে পারে। ‘ধূমকেতু’র জন্য এটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি একটি আঞ্চলিক বাংলা সিনেমা হয়েও জাতীয় স্তরে আলোচনায় এসেছে।

‘কুলি’ ইতিমধ্যে ২০২৫ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী তামিল চলচ্চিত্রের রেকর্ড ভেঙেছে। এটি অজিত কুমারের ‘গুড ব্যাড আগলি’কে ছাপিয়ে গেছে, যা ছিল এই বছরের পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ আয়কারী তামিল সিনেমা।

‘Khadaan’ ফাটিয়ে দিল বক্স অফিস: প্রথম দিনেই ১ কোটি টাকার কাছাকাছি আয়!

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং শিল্পগত মান

‘ধূমকেতু’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন অনুপম রায় এবং ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন সৌমিক হালদার এবং সম্পাদনা করেছেন শুভজিৎ সিংহ। ছবির বেশিরভাগ দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে নৈনিতালে, কিছু অংশ কলকাতা ও আলিপুরদুয়ারে।

‘কুলি’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্র। লোকেশ কানাগরাজ নিজেই এই সিনেমার গল্প ও সংলাপ লিখেছেন। ছবিটি কালনিথি মারানের সান পিকচার্স দ্বারা প্রযোজিত।

সামাজিক প্রভাব এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

‘ধূমকেতু’র সাফল্য বাংলা সিনেমা শিল্পের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে এই সিনেমার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত হলে বাংলা ছবির জন্য প্রাইম টাইমে ৫০% শো নিশ্চিত হয়েছে। এটি স্থানীয় সিনেমা শিল্পের উন্নতির জন্য একটি বড় অর্জন।

রজনীকান্ত ভক্তরা ‘কুলি’ মুক্তি উদযাপন করেছেন অভূতপূর্ব উৎসাহে। থিয়েটারের বাইরে ঢোল-তবলা বাজিয়ে, রজনীকান্তের পোস্টারে দুধ ঢেলে এবং নাচ-গান করে তারা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এই উৎসব দক্ষিণ ভারতের সিনেমা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সিক্যুয়েল সম্ভাবনা

‘ধূমকেতু’র প্রযোজক রানা সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছেন যে ছবিটি ৩০ কোটি টাকা ব্যবসা করলে ‘ধূমকেতু ২’ নির্মাণের কথা ভাবা হবে। দর্শকদের ইতিবাচক সাড়া দেখে সিক্যুয়েলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে।

প্রযোজক রানা সরকার বাংলাদেশে ‘ধূমকেতু’ মুক্তির জন্য সেদেশের সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন।

Share This Article