Diabetes in pets overview: ডায়াবেটিস মেলিটাস হলো একটি সাধারণ এন্ডোক্রাইন রোগ যা বিড়াল ও কুকুর উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে। এই রোগে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা অকার্যকারিতার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ২৩০টি বিড়ালের মধ্যে ১টি এবং প্রতি ৩০০টি কুকুরের মধ্যে ১টি তাদের জীবনকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে, গত ১০ বছরে কুকুরের ক্ষেত্রে ৮০% এবং বিড়ালের ক্ষেত্রে ১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রি-ডায়াবেটিস: লক্ষণ চিনুন, ঝুঁকি কমান – জেনে নিন সহজ উপায়
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
বিড়াল ও কুকুরের ডায়াবেটিস মূলত দুই প্রকারের হয়:
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এটি মূলত কুকুরদের মধ্যে দেখা যায়। এক্ষেত্রে পাঁচরাস ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এটি বিড়ালদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
লক্ষণসমূহ
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। প্রাণীর মালিকদের নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা উচিত:
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া)
- ঘন ঘন প্রস্রাব (পলিউরিয়া)
- ক্ষুধা বৃদ্ধি (পলিফাজিয়া)
- ওজন হ্রাস
- অবসাদ বা ক্লান্তি
- চোখে ঘোলাটে ভাব (কুকুরের ক্ষেত্রে)1
এছাড়াও, বিড়ালের ক্ষেত্রে পিছনের পা দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং হাঁটার সময় পা টেনে টেনে হাঁটা দেখা যেতে পারে।
রোগ নির্ণয়
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য পশু চিকিৎসক নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করতে পারেন:
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা
- প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি পরীক্ষা
- সিরাম ফ্রুক্টোসামিন পরীক্ষা (বিড়ালের ক্ষেত্রে)
চিকিৎসা পদ্ধতি
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। সফল চিকিৎসার জন্য প্রাণীর মালিকের প্রতিশ্রুতি এবং পশু চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার মূল উপাদানগুলি হল:
১. ইনসুলিন থেরাপি
- কুকুর: দীর্ঘস্থায়ী ইনসুলিন, যেমন পরসাইন লেন্টে বা প্রোটামিন জিঙ্ক ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়।
- বিড়াল: দীর্ঘস্থায়ী ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর।
২. খাদ্য নিয়ন্ত্রণ
- কুকুর: কম ফ্যাট এবং উচ্চ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার।
- বিড়াল: কম কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, সম্ভব হলে ক্যান্ড ফুড।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ
মোটা প্রাণীদের ক্ষেত্রে ওজন কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে শরীরের ওজনের ১-২% হারে ওজন কমানো নিরাপদ।
৪. ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
বাড়িতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা এবং নিয়মিত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত প্রাণীদের সুস্থ রাখার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করানো।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বছরে অন্তত একবার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
৫. স্ট্রেস কমানো: প্রাণীর চারপাশে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বিষয় | কুকুর | বিড়াল |
---|---|---|
প্রভাবিত হার | প্রতি ৩০০টিতে ১টি | প্রতি ২৩০টিতে ১টি |
সাধারণ বয়স | ৭-১০ বছর | ৬+ বছর |
ডায়াবেটিসের ধরন | টাইপ ১ (ইনসুলিন-নির্ভর) | টাইপ ২ (ইনসুলিন-প্রতিরোধী) |
চিকিৎসা | ইনসুলিন ইনজেকশন | ইনসুলিন/মৌখিক ঔষধ |
খাদ্য | কম ফ্যাট, উচ্চ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট | কম কার্বোহাইড্রেট, উচ্চ প্রোটিন |
রেমিশনের সম্ভাবনা | খুব কম | ৮০% পর্যন্ত সম্ভব |
ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ, কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রাণীর মালিকদের সচেতনতা এবং প্রাথমিক লক্ষণ চেনার ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার প্রিয় পোষ্য প্রাণীকে দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুখী রাখা সম্ভব। যদি আপনি আপনার প্রাণীতে ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে অবিলম্বে একজন অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।