বাইপাস নাকি ওপেন হার্ট সার্জারি: কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত?

Bypass surgery open heart surgery comparison: ভারতে হৃদরোগের ক্রমবর্ধমান প্রকোপের সাথে সাথে হৃদযন্ত্রের সার্জারির প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে চলেছে। বাইপাস এবং ওপেন হার্ট সার্জারি - এই দুটি পদ্ধতিই হৃদরোগীদের জন্য জীবনদায়ী হতে…

Debolina Roy

 

Bypass surgery open heart surgery comparison: ভারতে হৃদরোগের ক্রমবর্ধমান প্রকোপের সাথে সাথে হৃদযন্ত্রের সার্জারির প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে চলেছে। বাইপাস এবং ওপেন হার্ট সার্জারি – এই দুটি পদ্ধতিই হৃদরোগীদের জন্য জীবনদায়ী হতে পারে। কিন্তু এদের মধ্যে পার্থক্য কী এবং কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে? আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ওপেন হার্ট সার্জারি কী?

ওপেন হার্ট সার্জারি হল একটি বৃহৎ অপারেশন যেখানে সার্জন রোগীর বুক খুলে সরাসরি হৃদযন্ত্রের উপর কাজ করেন। এই পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের পেশী, ধমনী বা ভালভের উপর বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করা হয়। সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়:

বাইপাস সার্জারি কী?

বাইপাস সার্জারি হল ওপেন হার্ট সার্জারির একটি বিশেষ ধরন। এই পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের অবরুদ্ধ ধমনীকে এড়িয়ে রক্ত প্রবাহের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা হয়। সার্জন শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে একটি রক্তনালী সংগ্রহ করে তা হৃদযন্ত্রের অবরুদ্ধ ধমনীর চারপাশে স্থাপন করেন। এর ফলে হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

দুটি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য

যদিও উভয় পদ্ধতিতেই বুক খুলে অপারেশন করা হয়, তবুও এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:

  1. উদ্দেশ্য: ওপেন হার্ট সার্জারি হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য করা হয়, যেমন ভালভ মেরামত বা প্রতিস্থাপন। অন্যদিকে বাইপাস সার্জারি শুধুমাত্র অবরুদ্ধ কোরোনারি ধমনীর সমস্যা সমাধানের জন্য করা হয়।
  2. পদ্ধতি: ওপেন হার্ট সার্জারিতে সরাসরি হৃদযন্ত্রের উপর কাজ করা হয়। বাইপাস সার্জারিতে শরীরের অন্য অংশ থেকে রক্তনালী সংগ্রহ করে তা হৃদযন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
  3. সময়: ওপেন হার্ট সার্জারি সাধারণত ৩-৬ ঘণ্টা সময় নেয়। বাইপাস সার্জারি অপেক্ষাকৃত কম সময় নেয়, সাধারণত ৩-৫ ঘণ্টা।
  4. রিকভারি: ওপেন হার্ট সার্জারির পর রিকভারি সময় বেশি লাগে, সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহ। বাইপাস সার্জারির পর রোগীরা ৪-৬ সপ্তাহে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

ভারতে হৃদরোগের পরিস্থিতি

ভারতে হৃদরোগের প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান:

  • গত এক দশকে ৩০-৩৫ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে বাইপাস সার্জারির হার ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • প্রতি বছর ৩০ বছরের কম বয়সী রোগীদের বাইপাস সার্জারির সংখ্যা ৫% হারে বাড়ছে।
  • ৪০ বছরের কম বয়সী রোগীদের মধ্যে ২৫% হৃদরোগের ঘটনা ঘটছে।

এই পরিস্থিতির পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
  • ধূমপান
  • মানসিক চাপ
  • ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
  • বংশগত কারণ

ভারতে হৃদরোগের চিকিৎসার অগ্রগতি

ভারতে হৃদরোগের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪২০টি কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে যেখানে হৃদরোগের সার্জারি করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ হৃদরোগের সার্জারি করা হয়।

তবে এখনও চাহিদার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কম।ভারতে বাইপাস সার্জারির ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে। অফ-পাম্প কোরোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (OPCAB) পদ্ধতিতে ভারত বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী দেশ। এই পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্র বন্ধ না করেই বাইপাস সার্জারি করা হয়, যা রোগীর জন্য অধিক নিরাপদ।

কোন পদ্ধতি আপনার জন্য উপযুক্ত?

বাইপাস বা ওপেন হার্ট সার্জারি – কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে তা নির্ভর করে আপনার হৃদরোগের ধরন ও তীব্রতার উপর। সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারি করা হয়:

অন্যদিকে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয় যখন:

  • হৃদযন্ত্রের ভালভ মেরামত বা প্রতিস্থাপন করতে হয়
  • জন্মগত হৃদরোগ চিকিৎসা করতে হয়
  • হৃদযন্ত্রের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হলে

তবে শেষ পর্যন্ত আপনার চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করবেন।

হৃদরোগের চিকিৎসায় বাইপাস ও ওপেন হার্ট সার্জারি উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে এই দুই পদ্ধতিতেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিরোধ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ হৃদয় নিয়ে দীর্ঘায়ু হতে পারি।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।