Difference between Typhoid and Paratyphoid: টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড দুটি সংক্রামক রোগ যা একই ধরনের জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট হলেও কিছুটা ভিন্ন। দুটি রোগই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দূষিত খাবার-পানির মাধ্যমে ছড়ায় এবং জ্বর, মাথাব্যথা, পেটব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। তবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড উভয়ই সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। টাইফয়েডের কারণ সালমোনেলা টাইফি, আর প্যারাটাইফয়েডের কারণ সালমোনেলা প্যারাটাইফি এ, বি বা সি। এই দুই রোগের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল প্যারাটাইফয়েড সাধারণত টাইফয়েডের চেয়ে কম মারাত্মক হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪.৩ মিলিয়ন মানুষ টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৭৬.৩% কেস টাইফয়েডের এবং বাকি ২৩.৭% কেস প্যারাটাইফয়েডের। দক্ষিণ এশিয়ায় এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, যেখানে বিশ্বের মোট কেসের ৭১.৮% দেখা যায়।
রোগের কারণ ও সংক্রমণ
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড উভয় রোগই মূলত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মল বা মূত্রের সংস্পর্শে এসে খাবার বা পানি দূষিত হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, দূষিত পানি ও অপরিচ্ছন্ন খাবার এই রোগের প্রধান কারণ।
প্রথম আলো পত্রিকার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, “বন্যা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বা সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। টাইফয়েডের জীবাণুর মতোই এগুলো খাবার বা পানির মাধ্যমে প্রথমে অন্ত্রে পৌঁছে এবং অন্ত্রের দেয়াল ভেদ করে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। তারপর এটি যখন রক্তে পৌঁছায়, তখন দেখা দেয় জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ।”
যক্ষা রোগের লক্ষণগুলি জানুন – এগুলি উপেক্ষা করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে!
উপসর্গ ও রোগ নির্ণয়
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের প্রাথমিক উপসর্গগুলি প্রায় একই রকম। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– উচ্চ জ্বর (১০৩-১০৪°F)
– মাথাব্যথা
– পেটব্যথা
– দুর্বলতা ও ক্লান্তি
– ক্ষুধামন্দা
– কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
তবে প্যারাটাইফয়েডের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি সাধারণত কম তীব্র হয় এবং রোগের গতিও ধীর হয়। টাইফয়েডের ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, মল বা মূত্রের পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ওয়াইডাল টেস্ট নামে একটি সিরোলজিক্যাল পরীক্ষাও করা হয়। তবে এই পরীক্ষার ফলাফল সবসময় নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে।
Dengue: ৫টি অবাক করা ঘরোয়া কৌশলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়াকে দিন চ্যালেঞ্জ!
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
উভয় রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। তবে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই জীবাণুগুলি বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে।
রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গুরুত্বপূর্ণ:
– নিরাপদ পানি পান করা
– সঠিকভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া
– হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
– টাইফয়েডের টিকা নেওয়া
টাইফয়েডের টিকা রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধে ৫০-৮০% কার্যকর। তবে প্যারাটাইফয়েডের বিরুদ্ধে এই টিকা তেমন কার্যকর নয়।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বব্যাপী টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েডের ২৫.৯ মিলিয়ন কেস ছিল, যা ২০১৭ সালে কমে ১৪.৩ মিলিয়নে নেমে এসেছে। এটি ৪৪.৬% হ্রাস। তবে এখনও দক্ষিণ এশিয়ায় এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
লান্সেট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, “দক্ষিণ এশিয়ায় বয়স-মানানসই ঘটনার হার ছিল সর্বোচ্চ (প্রতি ১০০,০০০ জনে ৫৪৯ কেস) এবং কেসের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি (১০.৩ মিলিয়ন), যা ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী কেসের ৭১.৮% ছিল।”
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড দুটি গুরুতর সংক্রামক রোগ যা বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। যদিও এই দুটি রোগের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, তবে উভয়ই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, নিরাপদ খাবার-পানি এবং টিকাকরণের মাধ্যমে এই রোগগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সরকার, স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই রোগগুলির প্রকোপ কমানো যেতে পারে।