Different types of bone fractures: বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ হাড় ভাঙ্গার শিকার হয়। এটি একটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও জটিল চিকিৎসা সমস্যা। হাড় ভাঙ্গার প্রকারভেদ জানা থাকলে সঠিক চিকিৎসা ও সেবা নিশ্চিত করা সহজ হয়। চলুন জেনে নেই হাড় ভাঙ্গার বিভিন্ন প্রকারভেদ ও তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
হাড় ভাঙ্গার প্রকারভেদ
হাড় ভাঙ্গাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় – সাধারণ ফ্র্যাকচার ও যৌগিক ফ্র্যাকচার। সাধারণ ফ্র্যাকচারে ত্বক অক্ষত থাকে, কিন্তু যৌগিক ফ্র্যাকচারে খোলা ক্ষতও থাকে। যৌগিক ফ্র্যাকচার সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় অধিক মারাত্মক।এছাড়াও হাড় ভাঙ্গার আরও কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে:
১. ট্রান্সভার্স ফ্র্যাকচার
এই ধরনের ফ্র্যাকচারে হাড় সরলরেখায় ভেঙ্গে যায়। এটি সাধারণত সরাসরি আঘাতের কারণে হয়। বাংলাদেশে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকের এই ধরনের ফ্র্যাকচার হয়।
২. অবলিক ফ্র্যাকচার
এক্ষেত্রে হাড় তির্যকভাবে ভেঙ্গে যায়। এটি সাধারণত পতনের কারণে হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি দেখা যায়।
৩. স্পাইরাল ফ্র্যাকচার
হাড়ের চারপাশে ঘূর্ণায়মান আকারে ভাঙ্গন হয়। এটি সাধারণত কোনো অঙ্গ মোচড় খাওয়ার কারণে হয়। ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি দেখা যায়।
৪. কমিনুটেড ফ্র্যাকচার
এক্ষেত্রে হাড় অনেকগুলো টুকরোয় ভেঙ্গে যায়। এটি অত্যন্ত মারাত্মক ধরনের ফ্র্যাকচার। সড়ক দুর্ঘটনায় এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি হয়।
৫. গ্রীনস্টিক ফ্র্যাকচার
এটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। হাড় সম্পূর্ণ না ভেঙ্গে আংশিকভাবে ভাঙ্গে। বাংলাদেশে শিশুদের খেলাধুলার সময় এই ধরনের ফ্র্যাকচার হওয়ার ঘটনা বেশি।
৬. স্ট্রেস ফ্র্যাকচার
দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় চাপ পড়ার কারণে হাড়ে ক্ষুদ্র ফাটল দেখা দেয়। ক্রীড়াবিদ ও সৈনিকদের মধ্যে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি হয়।
৭. কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার
হাড় চাপের কারণে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। মেরুদণ্ডের হাড়ে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি হয়। উচ্চতা থেকে পড়ে গিয়ে অনেকের এই ধরনের ফ্র্যাকচার হয়।
৮. অ্যাভালশন ফ্র্যাকচার
লিগামেন্ট বা টেন্ডনের টানের কারণে হাড়ের একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি দেখা যায়।
৯. পাথলজিক্যাল ফ্র্যাকচার
হাড়ের কোনো রোগের কারণে দুর্বল হয়ে গেলে সামান্য আঘাতেই ভেঙ্গে যায়। অস্টিওপোরোসিস রোগীদের মধ্যে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি হয়।
১০. ইমপ্যাক্টেড ফ্র্যাকচার
হাড়ের দুটি অংশ একে অপরের মধ্যে ঢুকে যায়। বৃদ্ধদের হিপ ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে এই ধরনের ফ্র্যাকচার বেশি দেখা যায়।
পা ভাঙ্গা প্লাস্টার: কতদিন পর খুলবেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বাংলাদেশে হাড় ভাঙ্গার পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ হাড় ভাঙ্গার শিকার হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২১ সালে ৪,৭০০ জন হাড় ভাঙ্গা রোগী ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে ৮১.০৬% রোগীর অপারেশন করতে হয়েছিল।গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হাড় ভাঙ্গার হার কম। হাড় ভাঙ্গা রোগীদের মধ্যে ৬২% পুরুষ এবং ৩৮% মহিলা। বয়সের দিক থেকে ৮ মাস থেকে ৭৮ বছর বয়সী রোগীদের হাড় ভাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।
হাড় ভাঙ্গার কারণ
বাংলাদেশে হাড় ভাঙ্গার প্রধান কারণগুলো হল:
- সড়ক দুর্ঘটনা: প্রায় অর্ধেক হাড় ভাঙ্গার ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ঘটে।
- পতন: বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে পতনের কারণে হাড় ভাঙ্গার ঘটনা বেশি।
- ক্রীড়া আঘাত: খেলাধুলার সময় আঘাত পেয়ে অনেকের হাড় ভাঙ্গে।
- কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা: নির্মাণ শ্রমিক ও কারখানার শ্রমিকদের হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি বেশি।
- অস্টিওপোরোসিস: হাড় ক্ষয়ের কারণে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙ্গে যায়।
হাড় ভাঙ্গার লক্ষণ
হাড় ভাঙ্গার সাধারণ লক্ষণগুলো হল:
- তীব্র ব্যথা
- ফোলা
- রক্তপাত
- অঙ্গের অস্বাভাবিক অবস্থান
- নড়াচড়ায় অসুবিধা
- ত্বকের নিচে হাড়ের অংশ দেখা যাওয়া
হাড় ভাঙ্গার প্রাথমিক চিকিৎসা
হাড় ভাঙ্গার পর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত:
- আক্রান্ত অঙ্গ স্থির রাখুন
- বরফ লাগান
- রক্তপাত থামান
- আক্রান্ত অঙ্গ উঁচুতে রাখুন
- দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান
হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসা পদ্ধতি
হাড় ভাঙ্গার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হল:
- প্লাস্টার করা
- অপারেশন করে রড, স্ক্রু বা প্লেট লাগানো
- ট্র্যাকশন দেওয়া
- ফিজিওথেরাপি
- ওষুধ প্রয়োগ
হাড় ভাঙ্গা প্রতিরোধের উপায়
হাড় ভাঙ্গা প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে:
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান
- ধূমপান ত্যাগ করুন
- মদ্যপান সীমিত করুন
- সতর্কতার সাথে গাড়ি চালান
- পড়ে যাওয়া এড়াতে সাবধানতা অবলম্বন করুন
হাড় ভাঙ্গা একটি জটিল চিকিৎসা সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এই সমস্যায় ভুগছে। হাড় ভাঙ্গার প্রকারভেদ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সহজ হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে হাড় ভেঙ্গে গেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।