Disability Certificate Apply Online: পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুখবর। এখন থেকে অনলাইনেই আবেদন করে পাওয়া যাবে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর এই সুবিধা চালু করেছে। এর ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না সার্টিফিকেটের জন্য।
অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়া
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:১. প্রথমে https://icon.wbhealth.gov.in ওয়েবসাইটে যেতে হবে।২. সেখানে “Apply Disability Certificate” অপশনে ক্লিক করতে হবে।৩. তারপর নতুন আবেদনকারীদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।৪. রেজিস্ট্রেশনের সময় নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।৫. রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে লগইন করে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।৬. ফর্মে প্রতিবন্ধিতার ধরন ও শতাংশ উল্লেখ করতে হবে।৭. প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করতে হবে।৮. সবশেষে আবেদন জমা দিতে হবে।
Central SC/ST/OBC সার্টিফিকেট: কোথায় বানাবেন, কী ডকুমেন্টস লাগবে?
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
অনলাইনে আবেদনের সময় নিম্নলিখিত নথিপত্র আপলোড করতে হবে:
- আধার কার্ডের কপি
- রেশন কার্ডের কপি
- ভোটার আইডি কার্ডের কপি
- আয়ের প্রমাণপত্র
- ব্যাঙ্ক পাসবুকের প্রথম পাতার কপি
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- স্বামীর মৃত্যু শংসাপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:১. আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়।২. যাচাই-বাছাই শেষে আবেদনকারীকে মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।৩. মেডিক্যাল বোর্ড প্রতিবন্ধিতার ধরন ও শতাংশ নির্ধারণ করে।৪. মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টের ভিত্তিতে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়।৫. সার্টিফিকেট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়।
সার্টিফিকেটের বৈশিষ্ট্য
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
- সার্টিফিকেটে একটি ইউনিক আইডি নম্বর থাকে।
- এটি সারা ভারতে বৈধ।
- ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য আজীবন বৈধ।
- ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ৫ বছর পর পর নবায়ন করতে হয়।
- সার্টিফিকেটে প্রতিবন্ধিতার ধরন ও শতাংশ উল্লেখ থাকে।
সার্টিফিকেটের উপযোগিতা
প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপযোগী:
- সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া যায়।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা মেলে।
- রেল, বাস ইত্যাদি পরিবহনে ভাড়া ছাড় পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যায়।
- ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা মেলে।
- কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবন্ধী জনসংখ্যা
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবন্ধী জনসংখ্যা ছিল ২০,১৭,৪০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১,৩৪,৫৪৮ জন এবং মহিলা ৮,৮২,৮৫৮ জন। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ২.২১% প্রতিবন্ধী।প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বিভাজন:
- চলাচলে অক্ষম: ৭,৩৮,৫৯৪ জন
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী: ৪,৯৪,৩৪০ জন
- শ্রবণ প্রতিবন্ধী: ৩,৮৪,৬৬৭ জন
- বাক প্রতিবন্ধী: ১,৫৯,৭১৫ জন
- মানসিক প্রতিবন্ধী: ১,৫৫,৯৪৯ জন
সার্টিফিকেট প্রাপ্তির হার
পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে সার্টিফিকেট প্রাপ্তির হার খুব কম। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী:
- মাত্র ২৮.৪% প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছে সার্টিফিকেট রয়েছে।
- পুরুষদের ২৯.৯% এবং মহিলাদের ২৬.৭% এর কাছে সার্টিফিকেট আছে।
- গ্রামাঞ্চলে এই হার ২৭.৮% এবং শহরাঞ্চলে ৩০.২%।
Voter Card: মাত্র ১০ মিনিটে ভোটার কার্ড পেতে চান? জেনে নিন অনলাইনে আবেদনের গোপন কৌশল!
অনলাইন আবেদনের সুবিধা
অনলাইনে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে:
- সময় ও খরচ সাশ্রয় হয়।
- যেকোনো স্থান থেকে আবেদন করা যায়।
- আবেদনের স্ট্যাটাস অনলাইনে ট্র্যাক করা যায়।
- কাগজপত্রের ব্যবহার কমে যায়।
- প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও দ্রুত হয়।
- ডেটাবেস তৈরি করা সহজ হয়।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:
- অনেকের কাছে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার নেই।
- ইন্টারনেট সংযোগের অভাব রয়েছে।
- ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব রয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিয়েছে:
- কমন সার্ভিস সেন্টারে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- হেল্পডেস্ক চালু করা হয়েছে।
- প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- সহজ ইউজার ইন্টারফেস তৈরি করা হয়েছে।
অনলাইনে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনের সুযোগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় সুবিধা। এর ফলে তাদের আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। তবে এই প্রক্রিয়া সফল করতে হলে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো এবং ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলি মিলে কাজ করলে এই প্রক্রিয়া আরও সহজ ও কার্যকর হবে। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজেই তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পেতে পারবেন।