স্টাফ রিপোর্টার
২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১:৩৭ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

সোশাল মিডিয়ায় ‘comment’ চর্চা: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

Social media comments mental health impact: সোশাল মিডিয়া আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার, বিশেষ করে ‘কমেন্ট’ করার প্রবণতা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সোশাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা এবং অন্যের পোস্টে নিয়মিত মন্তব্য করার প্রবণতা উদ্বেগ, অবসাদ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।গবেষণায় দেখা গেছে, সোশাল মিডিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ২.৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে মানুষ। এর মধ্যে অনেকেই নিয়মিত অন্যের পোস্টে মন্তব্য করে থাকেন।

কিন্তু এই অভ্যাস ক্রমশ মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১২-১৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যারা প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি সময় সোশাল মিডিয়ায় ব্যয় করে, তাদের মধ্যে অবসাদ ও উদ্বেগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেশি। এছাড়া কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে একটি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে অবসাদের হার ৯% এবং উদ্বেগের হার ১২% বেড়েছে বলে দেখা গেছে।
2024 সালে Facebook এখনও শীর্ষে – টপ 10 সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের তালিকা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সোশাল মিডিয়ায় ‘কমেন্ট’ করার প্রবণতা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে কয়েকটি কারণে:

১. তুলনামূলক মনোভাব: অন্যের পোস্টে মন্তব্য করার সময় নিজের জীবনের সাথে তুলনা করার প্রবণতা বাড়ে। এটি হীনমন্যতা এবং অসন্তোষের জন্ম দিতে পারে।
২. নেতিবাচক মন্তব্যের প্রভাব: অনেক সময় নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং মানসিক চাপ বাড়ে।
৩. অতিরিক্ত সময় ব্যয়: ‘কমেন্ট’ করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়, যা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।
৪. ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব: অনলাইনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার ফলে বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫. ঘুমের ব্যাঘাত: রাতে দেরি অবধি সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার ফলে ঘুমের পরিমাণ ও মান কমে যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সোশাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। যারা ৩ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে অবসাদের লক্ষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিশেষ করে যাদের মধ্যে আগে থেকেই অবসাদের লক্ষণ ছিল, তাদের ক্ষেত্রে এই উন্নতি ৩৫% পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।

তবে সোশাল মিডিয়ার সব দিক খারাপ নয়। এটি সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে এবং নতুন জ্ঞান আহরণে সাহায্য করে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০% কিশোরী মেয়ে সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি পায়। এছাড়া ৫৮% কিশোর-কিশোরী মনে করে সোশাল মিডিয়া তাদেরকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে, ৬৭% মনে করে এটি তাদের সহায়তা করেছে, ৭১% মনে করে এটি তাদের সৃজনশীলতা বাড়িয়েছে এবং ৮০% মনে করে এটি বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করেছে।তবে এসব ইতিবাচক দিক সত্ত্বেও সোশাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ‘কমেন্ট’ করার প্রবণতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ব্যবহার সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখা জরুরি।তারা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন:

১. সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় সীমিত করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার করুন।
২. রাতে ঘুমানোর আগে সোশাল মিডিয়া ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৩. নেতিবাচক কন্টেন্ট এবং অযাচিত মন্তব্য এড়িয়ে চলুন।
৪. বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলিকে অগ্রাধিকার দিন।
৫. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও মনোযোগ চর্চা করুন।
৬. প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন।
ইন্টারনেট বন্ধে বিক্ষোভ দমন নয়, বরং অর্থনীতি ও মানবাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত।

সামগ্রিকভাবে, সোশাল মিডিয়ায় ‘কমেন্ট’ চর্চা এবং অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে সচেতন ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব। প্রযুক্তির এই যুগে সোশাল মিডিয়াকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু এর সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা ও তত্ত্বাবধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি, সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত, যাতে ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন শেষ! ব্রিটিশ ফার্মের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে CESC

রাজনীতির মাঠ থেকে ওটিটি পর্দায়: সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর এখন ‘জিদ্দি গার্লস’-এর বিদ্রোহী চরিত্রে!

ভারতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ৩.৬১ শতাংশে নেমেছে: সবজির দাম কমায় জনগণের স্বস্তি

রেশন কার্ডে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার প্রস্তাব: কেন্দ্রের পথে রাজ্যের সমর্থন!

আইপিএলের ছক্কার রাজা কে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেখে নিন শীর্ষ দশের তালিকা

মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেট যাত্রার ইতি: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ের ঘোষণা

অষ্টম বেতন কমিশন: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা, হতাশার ছায়া!

ভারতের মাটিতে গোয়েন্দা বিশ্বের মহাজমায়েত: দোভালের নেতৃত্বে দিল্লিতে বৈঠক!

আলো কম? WhatsApp ভিডিও কলে যা করবেন, চমকে যাবেন!

রবিবার থেকে চার জেলায় তাপপ্রবাহের দাপট, কবে মিলবে স্বস্তি

১০

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের শিক্ষার জয়যাত্রা: বাংলার প্রতিষ্ঠান কোথায় দাঁড়িয়ে?

১১

ফেসবুক পোস্ট লুকান: নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে রাখার কৌশল!

১২

চন্দননগরে ফরাসি শাসনমুক্তির ৭৫ বছর: হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু

১৩

জিমেইলে ই-মেইল শিডিউল: গোপন ট্রিকটি জেনে নিন!

১৪

৫০ টি দোলের শুভেচ্ছা, প্রিয়জনের সাথে উৎসব আরো রঙিন হোক

১৫

স্মার্টফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরাবেন যেভাবে

১৬

ওভার থিংকিং ধরা পরে যে সাতটি আচরণে

১৭

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

১৮

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

১৯

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

২০
close