Does alcohol increase blood sugar levels?: মদ্যপান ও ডায়াবেটিস – এই দুটি বিষয় নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে মদ খেলে সুগার বেড়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব জটিল এবং ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক মদ্যপানের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে প্রভাবিত হয় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এর ঝুঁকি কী।
মদ্যপানের প্রাথমিক প্রভাব হল রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো। অ্যালকোহল শরীরে প্রবেশ করার পর লিভার তা বিনষ্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে লিভার রক্তে গ্লুকোজ নিঃসরণ করতে পারে না, যা সাধারণত সে করে থাকে। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা ইনসুলিন বা অন্যান্য ডায়াবেটিস ঔষধ খান, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।তবে দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত মদ্যপান করলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। কারণ অতিরিক্ত মদ্যপান ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীর ঠিকমতো গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়া মদ্যপানের ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝারি মাত্রায় মদ্যপান করলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব জটিল। কারণ মদ্যপানের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে।
• হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
• ওজন বৃদ্ধি পায় যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে
• লিভারের ক্ষতি হতে পারে
• হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
• রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে
• স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে
Diabetes and Snacking: চাঞ্চল্যকর তথ্য! ডায়াবেটিস রোগীরা মুড়ি খেলে কী
• খালি পেটে মদ্যপান করা যাবে না। সঙ্গে অবশ্যই কিছু খাবার গ্রহণ করতে হবে।
• মদ্যপানের আগে ও পরে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
• মদ্যপানের পর ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
• মদ্যপানের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২ ইউনিট এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১ ইউনিটের বেশি নয়।
• মিষ্টি বিয়ার বা ওয়াইন এড়িয়ে চলতে হবে যাতে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট না থাকে।
• মদ্যপানের সময় সঙ্গে গ্লুকোজ ট্যাবলেট রাখতে হবে যাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মদ্যপানের প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে সাবধানে মদ্যপান করতে হবে। কোনো সমস্যা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও সুষম খাদ্যাভ্যাসই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।
• স্বল্পমেয়াদে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়: মদ্যপানের ১-২ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা ২০-৩০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এটি বিশেষ করে ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে।
• দীর্ঘমেয়াদে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে: নিয়মিত মদ্যপান করলে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মদ্যপানকারী ডায়াবেটিস রোগীদের HbA1c (দীর্ঘমেয়াদি রক্তশর্করা নির্দেশক) ০.৫-১% পর্যন্ত বেশি থাকে।
• রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়: মদ্যপানের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে থাকে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন করে তোলে।
• হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে: মদ্যপানের ৮-১২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে রাতে মদ্যপান করলে ঘুমের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• মদের পরিমাণ ও ধরন
• খাওয়া-দাওয়ার অবস্থা
• ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা
• ব্যবহৃত ডায়াবেটিস ঔষধ
• শারীরিক কর্মকাণ্ড
তাই প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর প্রভাব আলাদা হতে পারে। কেউ কেউ অল্প পরিমাণ মদ্যপান সহ্য করতে পারেন, আবার কারো ক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক হতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ মদ্যপানের মাত্রা হল:
দৈনিক ২ ইউনিট বা সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের কম
দৈনিক ১ ইউনিট বা সপ্তাহে ৭ ইউনিটের কম১ ইউনিট = ৩৫৫ মিলি বিয়ার বা ১৫০ মিলি ওয়াইন বা ৪৫ মিলি স্পিরিটতবে এই মাত্রাও সবার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মদ্যপান করা উচিত।
পেয়ারা পাতা: স্বাস্থ্যের জন্য অমৃত, কিন্তু সতর্কতাও জরুরি!
• নিয়মিত ব্যায়াম করা
• সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
• ধূমপান ত্যাগ করা
• নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা
• চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা
সারকথা হল, মদ্যপান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে সতর্কতা অবলম্বন করে মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণে মদ্যপান করা যেতে পারে। নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে মদ্যপানের ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো সম্ভব। তবে সর্বোত্তম হল মদ্যপান সম্পূর্ণ ত্যাগ করা, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
মন্তব্য করুন