Health benefits of dates: খেজুর একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও মিষ্টি ফল যা বহু যুগ ধরে মানুষের প্রিয় খাবার। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন, খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে? এই প্রশ্নের উত্তর হল – হ্যাঁ এবং না। খেজুর মাত্রাতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে, কিন্তু পরিমিত পরিমাণে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আসুন জেনে নেই খেজুর খাওয়ার সুফল-কুফল এবং কীভাবে এটি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুর পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে:
- ক্যালরি: ৩১৪ কিলোক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট: ৮০.৬ গ্রাম
- ফাইবার: ৬.৭ গ্রাম
- প্রোটিন: ২.১৪ গ্রাম
- চর্বি: ০.৩৮ গ্রাম
- চিনি: ৬৬ গ্রাম
এছাড়াও খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদি।
খেজুর খাওয়ার সুফল
১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
খেজুরে উচ্চ মাত্রায় ডাইটারি ফাইবার থাকায় এটি খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
২. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে দেয় না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উপকারী।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৪. হজম ক্রিয়া উন্নত করে
খেজুরে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার থাকায় এটি হজম ক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৫. শক্তি বৃদ্ধি করে
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা থাকায় এটি দ্রুত শক্তি যোগায়। তাই অনেক ক্রীড়াবিদ খেজুর খেয়ে থাকেন।
খেজুর খাওয়ার কুফল
১. ওজন বৃদ্ধি
খেজুরে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকায় অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে। ১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ৩১৪ কিলোক্যালরি থাকে।
২. রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি
যদিও খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তবুও এতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। তাই অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
৩. কিডনি সমস্যা
খেজুরে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় কিডনি রোগীদের এটি খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
৪. অ্যালার্জি
কিছু মানুষের শুকনো খেজুরে ব্যবহৃত সালফাইট নিয়ে অ্যালার্জি থাকতে পারে।
৫. হাঁপানি
সালফাইট হাঁপানি রোগীদের লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
কতটা খেজুর খাওয়া উচিত?
গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম বা এক মুঠো খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং স্বাস্থ্যের উপকারও হবে। তবে প্রত্যেকের ক্যালরি চাহিদা ও স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী এই পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে আপনার জন্য সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।
খেজুর কীভাবে খাবেন?
- সকালের নাস্তায় দুধের সাথে খেজুর খেতে পারেন
- বিকালের স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম বা আখরোটের সাথে খেজুর খান
- স্মুদিতে খেজুর যোগ করুন
- সালাদে কুচি করে খেজুর দিতে পারেন
- ডেজার্টে খেজুর ব্যবহার করুন
সাবধানতা
- ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিত
- কিডনি রোগীদের পটাসিয়াম সেবন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
- ওজন কমাতে চাইলে খেজুর সীমিত পরিমাণে খান
- শুকনো খেজুর খাওয়ার আগে সালফাইট অ্যালার্জি আছে কিনা চেক করুন
খেজুর একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়াসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। তাই নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে খেজুর খেলে আপনি এর সব সুফল পেতে পারেন, অথচ কোনো কুফল ভোগ করতে হবে না।