২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে। নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি বেশ কিছু মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন, কিন্তু পরাজিত হলে তাকে একাধিক ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি জেল খাটার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্তমানে চারটি প্রধান ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ফেডারেল মামলা এবং দুটি স্টেট পর্যায়ের মামলা। নির্বাচনে জয়লাভ করলে ট্রাম্প এই মামলাগুলোর অনেকগুলো থেকে রেহাই পেতে পারেন বলে আইনজ্ঞরা মনে করছেন।
প্রথমত, ফেডারেল মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। তিনি ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট হলে স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে “দুই সেকেন্ডের মধ্যে” বরখাস্ত করবেন। এটি করলে ফেডারেল মামলাগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে।
Shots Fired At Trump Rally: মৃত্যুর মুখোমুখি ট্রাম্প, রক্তাক্ত মাটিতে আমেরিকার গণতন্ত্র
দ্বিতীয়ত, স্টেট পর্যায়ের মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও ট্রাম্প সুবিধা পেতে পারেন। কারণ চলমান নীতি অনুযায়ী বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চালানো যায় না। তাই এই মামলাগুলোও স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
তবে নির্বাচনে পরাজিত হলে ট্রাম্পের সামনে বেশ কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তখন তাকে একাধিক ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. নিউইয়র্কের হাশ মানি মামলা: এই মামলায় ট্রাম্প ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আগামী ২৬ নভেম্বর তার সাজা ঘোষণা করা হবে। এতে তিনি জেল খাটতে পারেন।
২. জর্জিয়ার নির্বাচন হস্তক্ষেপ মামলা: ২০২০ সালের নির্বাচনে জর্জিয়ার ফলাফল পাল্টানোর চেষ্টার অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে। এতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
৩. জানুয়ারি ৬ মামলা: ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে এই মামলা করা হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
৪. গোপন দলিল মামলা: হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ট্রাম্প অবৈধভাবে গোপন সরকারি দলিল নিজের কাছে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে ৪০টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়াও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দেওয়ানি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিউইয়র্কের প্রতারণা মামলা, যেখানে তাকে ৩৫৪.৯ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছে।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলছেন, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা মামলাগুলো খারিজ করার চেষ্টা করছেন। তবে অভিযোগকারী পক্ষ বলছে, ট্রাম্প আইনের ঊর্ধ্বে নন এবং তার অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনের ফলাফল ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। জয়লাভ করলে তিনি অনেক মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন। কিন্তু পরাজিত হলে তাকে একাধিক ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে, যার ফলে জেল খাটার সম্ভাবনাও রয়েছে।
তবে এসব মামলা নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি। বরং তিনি এগুলোকে রাজনৈতিক তাড়না হিসেবে প্রচার করে নিজের সমর্থকদের আরও ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে তিনি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন।
নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব মামলা আমেরিকার রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থার জন্য এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এত বেশি সংখ্যক ফৌজদারি মামলা আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম। এর ফলে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ বাড়ছে।
চাঁদ বনাম চাঁদমালা: মোদি-রাহুলের রাজনৈতিক যাত্রায় কে এগিয়ে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব মামলার ফলাফল শুধু ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ নয়, আমেরিকার রাজনীতি ও আইনি ব্যবস্থার ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করবে। কারণ এর মাধ্যমে প্রমাণিত হবে যে, আমেরিকার আইনি ব্যবস্থা কতটা নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী।
সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালের নির্বাচন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নয়, ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও নির্ধারণ করবে। জয়লাভ করলে তিনি অনেক মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন। কিন্তু পরাজিত হলে তাকে একাধিক ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে, যার ফলে জেল খাটার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে এই নির্বাচন ট্রাম্পের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আমেরিকার রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থার জন্যও একটি বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন