Impact of Economic Downturn on Youth: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুবকদের মধ্যে একটি নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যাকে বলা হচ্ছে ‘ডুম স্পেন্ডিং’। ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই দামি পোশাক, ভ্রমণ, এবং গ্যাজেটের মতো বিলাসবহুল জিনিসের উপর অতিরিক্ত খরচ করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবতা থেকে পালানোর এক ধরনের চেষ্টা হিসেবেই তারা এই অযাচিত খরচ করছেন। যদিও এটি সাময়িক স্বস্তি দেয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ডুম স্পেন্ডিং-এর প্রবণতা মূলত জেন জেড এবং মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। ক্রেডিট কার্মা নামক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৩% মিলেনিয়াল এবং ৩৫% জেন জেড এই ধরনের খরচের সাথে জড়িত। এর পিছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, যেখানে বাড়ি কেনা বা পরিবার শুরু করার মতো ঐতিহ্যগত লক্ষ্যগুলি অনেকের কাছে অধরা থেকে যাচ্ছে।
ইন্ডিয়া টুডে-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের হিসাবে জেন জেড-দের গড় স্টুডেন্ট লোন ঋণ ছিল ২০,৯০০ ডলার, যা মিলেনিয়ালদের তুলনায় ১৩% বেশি। এছাড়া ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ২০-২৪ বছর বয়সী যুবকদের বেকারত্বের হার ছিল ৬.৭%, যা ২৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মীদের ৩.২% হারের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিসংখ্যানগুলি দেখিয়ে দেয় যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুব প্রজন্ম কতটা চাপের মধ্যে রয়েছে।
মেয়েদের চাকরি: অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি
টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার লুকাস ব্যাটল ডুম স্পেন্ডিং-এর বিপরীত একটি ধারণা প্রচার করেছেন যাকে তিনি বলছেন ‘লাউড বাজেটিং’। এর মাধ্যমে তিনি যুবকদের উৎসাহিত করছেন তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে। উদাহরণস্বরূপ, “দুঃখিত, ডিনারে যেতে পারব না, আমার দৈনিক খরচের জন্য মাত্র ৭ ডলার আছে” – এই ধরনের কথা বলার মাধ্যমে নিজের আর্থিক অবস্থা নিয়ে সচেতন থাকা যায়।অভিষেক সোনি, ট্যাক্স২উইন নামক একটি আয়কর রিটার্ন ফাইলিং প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, ডুম স্পেন্ডিং-কে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: “এটি হল যখন মানুষ এমনভাবে খরচ করে যেন আগামীকাল নেই, অর্থাৎ যেন এটাই তাদের শেষ দিন বা দুর্দিন”। তিনি আরও বলেন যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। অনেকে ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করে, কিন্তু ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার জন্য তারা এমন জায়গায় যায় বা এমন জিনিস কেনে যা তারা আসলে সামর্থ্যের বাইরে।
মারিয়া মেলচর, একজন ২৭ বছর বয়সী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যিনি জেন জেড-দের জন্য আর্থিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, তিনি বলেছেন যে যুবকরা যখন দামি জিনিস কেনে তখন তা সবসময় অযৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, “বাড়ি কেনা বা পরিবার শুরু করা এতটাই নাগালের বাইরে যে আমরা সেই ডাউন পেমেন্ট বা বাচ্চার টাকা ব্যবহার করছি যে কোনো জিনিসের জন্য যা আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে এবং যা আমাদের প্রতিশ্রুত প্রাপ্তবয়স্কতার একটা আভাস দেয়”।তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে ডুম স্পেন্ডিং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। ইওনা বেইন, ইয়াং(ইশ) মানি-এর প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, “শপিং সবসময়ই নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার একটি সহজ, কম প্রচেষ্টার উপায় হয়ে এসেছে, এবং আমাদের ভোক্তা অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিশ্বাস করাতে চেয়েছে যে নতুন কেনাকাটা আমাদের মনোবল বাড়াবে এবং আমাদের সমস্যার সমাধান করবে”।
ডুম স্পেন্ডিং মোকাবেলা করার জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন:
১. একটি খরচের ডায়েরি রাখুন যেখানে আপনি কী কিনলেন, তা আপনাকে কেমন অনুভূতি দিল, এবং ভবিষ্যতে অতিরিক্ত খরচ প্রতিরোধ করার জন্য কী পদক্ষেপ নিতে চান তা লিখে রাখতে পারেন।
২. সোশ্যাল মিডিয়া এবং শপিং অ্যাপগুলির ব্যবহার সীমিত করুন। প্রয়োজনে অ্যাপগুলি সাময়িকভাবে মুছে ফেলুন বা সেগুলিতে ব্যয় করা সময় সীমিত করুন।
৩. ইনফ্লুয়েন্সারদের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে যারা অনেক পণ্য প্রচার করেন।৪. শপিং ছাড়া অন্যান্য কার্যকলাপের উপর মনোযোগ দিন যা আপনি উপভোগ করেন। ইভা ব্যাকস্ট্রম, কিংস বিজনেস স্কুলের একজন অর্থনীতি বক্তা এবং প্রাক্তন ব্যাংকার, টাকার সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝার উপর জোর দিয়েছেন।
MSME Loan: বেকার যুবকদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ, হয়ে উঠুন আগামীর
তিনি বলেছেন, “যদি আপনি সেই অর্থ সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ করেন, আপনি আসলে একটি বাড়ি কেনার সুযোগ পেতে পারেন”।শেষ পর্যন্ত, ডুম স্পেন্ডিং একটি জটিল সমস্যা যা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক চাপের সংমিশ্রণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এটি মোকাবেলা করতে হলে ব্যক্তিগত আর্থিক শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। যুব প্রজন্মকে তাদের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে সাহায্য করা এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করা সমাজের দায়িত্ব।