পড়াশোনার খরচের চিন্তা শেষ! ডঃ আম্বেদকর স্কলারশিপে পান ২৫,০০০ টাকা, জানুন আবেদনের সম্পূর্ণ পদ্ধতি!

Dr BR Ambedkar Scholarship: মা-বাবার কষ্টের উপার্জন, নিজের হাজারো স্বপ্ন—এর মাঝে যখন পড়াশোনার বিপুল খরচ বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর পথচলা থেমে যায়। বিশেষ করে তফসিলি জাতি (SC),…

Laboni Das

 

Dr BR Ambedkar Scholarship: মা-বাবার কষ্টের উপার্জন, নিজের হাজারো স্বপ্ন—এর মাঝে যখন পড়াশোনার বিপুল খরচ বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর পথচলা থেমে যায়। বিশেষ করে তফসিলি জাতি (SC), উপজাতি (ST), এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (OBC) পরিবারে এই সমস্যা আরও গভীর। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার একটি অসাধারণ প্রকল্প চালাচ্ছে? হ্যাঁ, ডঃ বিআর আম্বেদকর স্কলারশিপ (Dr BR Ambedkar Scholarship) ঠিক সেই সুযোগ, যা আপনার উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে ডানা মেলতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যোগ্য ছাত্রছাত্রীরা বছরে ২৫,০০০ টাকা বা তারও বেশি আর্থিক সহায়তা পেতে পারে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব—কারা এই স্কলারশিপের জন্য যোগ্য, কীভাবে আবেদন করতে হবে, এবং কী কী নথি প্রয়োজন।

ডঃ বিআর আম্বেদকর স্কলারশিপ আসলে কী? (What is the Dr BR Ambedkar Scholarship?)

ভারতীয় সংবিধানের রূপকার ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন যে, শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব। তাঁর সেই দূরদৃষ্টিকে সম্মান জানিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির সমাজকল্যাণ দপ্তর SC, ST, OBC, এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর (EBC) ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই স্কলারশিপ চালু করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, মাধ্যমিক পাশের পর (পোস্ট-ম্যাট্রিক) যাতে অর্থের অভাবে কোনো যোগ্য ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করা। এই স্কলারশিপ মূলত দুটি বড় অংশে বিভক্ত:

  1. টিউশন ফি এবং অন্যান্য বাধ্যতামূলক ফি প্রদান: আপনার কোর্স বা পড়াশোনার জন্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে টাকা দিতে হয়, তার একটি বড় অংশ সরকার বহন করে।
  2. মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা (Maintenance Allowance): হস্টেলে থাকা, বইপত্র কেনা, যাতায়াত এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সরাসরি ছাত্রছাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

এই দুই মিলিয়ে আর্থিক সহায়তার পরিমাণটি বেশ বড় আকার নেয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই বছরে ২৫,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

Nabanna Scholarship 2024: মেধাবী ছাত্রদের জন্য ১০,০০০ টাকা বৃত্তি, আবেদনের সুযোগ এখনও খোলা ন

কারা পাবেন এই স্কলারশিপের সুবিধা? জেনে নিন যোগ্যতার খুঁটিনাটি

আবেদন করার আগে সবচেয়ে জরুরি হলো এর যোগ্যতার মাপকাঠিগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া। সামান্য ভুলের কারণে আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। আসুন, ধাপে ধাপে বিষয়টি বুঝি।

জাতিগত যোগ্যতা (Caste Eligibility)

এই স্কলারশিপ মূলত নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত। আবেদনকারীকে অবশ্যই নিম্নলিখিত যেকোনো একটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে:

  • তফসিলি জাতি (Scheduled Caste – SC)
  • তফসিলি উপজাতি (Scheduled Tribe – ST)
  • অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (Other Backward Classes – OBC)
  • অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণী (Economically Backward Class – EBC)
  • বিমুক্ত, যাযাবর এবং ಅರೆ-যাযাবর উপজাতি (Denotified, Nomadic and Semi-Nomadic Tribes – DNT)

আপনার কাছে অবশ্যই সরকার অনুমোদিত উপযুক্ত জাতিগত শংসাপত্র (Caste Certificate) থাকতে হবে।

পারিবারিক আয়ের সীমা (Family Income Limit)

এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। যেহেতু প্রকল্পটি আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলিকে সাহায্য করার জন্য তৈরি, তাই পারিবারিক আয়ের একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

  • SC/ST ছাত্রছাত্রীদের জন্য: পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার কম হতে হবে।
  • OBC/EBC/DNT ছাত্রছাত্রীদের জন্য: এই সীমা রাজ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত এটি বার্ষিক ২.৫ লক্ষ টাকার মধ্যেই থাকে।

আপনার পঞ্চায়েত, পৌরসভা বা জেলাশাসকের দপ্তর থেকে একটি বৈধ বার্ষিক আয়ের শংসাপত্র (Annual Income Certificate) তৈরি করে নিতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা (Educational Qualification)

এই স্কলারশিপটি ‘পোস্ট-ম্যাট্রিক’ অর্থাৎ মাধ্যমিক পাশের পরের পড়াশোনার জন্য।

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই মাধ্যমিক (Class 10) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
  • একাদশ শ্রেণী থেকে শুরু করে স্নাতক (BA, BSc, BCom), স্নাতকোত্তর (MA, MSc, MCom), ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, আইন, ডিপ্লোমা, বা যেকোনো স্বীকৃত পেশাদারী কোর্সের ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন।
  • দূরশিক্ষার (Distance Education) মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়।

স্কলারশিপে টাকার অঙ্ক কত? কী কী খরচ কভার হয়?

অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে, ঠিক কত টাকা পাওয়া যাবে? আগেই বলা হয়েছে, এর পরিমাণ ২৫,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। তবে এটি কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

১. রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা (Maintenance Allowance):

এই ভাতাটি দুটি ভাগে বিভক্ত—যারা হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে (Hostellers) এবং যারা বাড়ি থেকে যাতায়াত করে (Day Scholars)। আপনার কোর্সের ধরনের উপর ভিত্তি করে এটিকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।

  • গ্রুপ ১: ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, ম্যানেজমেন্ট, আইনের মতো উচ্চ পেশাদারী কোর্সের জন্য।
    • হস্টেলে থাকলে: প্রতি মাসে ₹১২০০
    • বাড়ি থেকে গেলে: প্রতি মাসে ₹৫৫০
  • গ্রুপ ২: ডিপ্লোমা বা অন্যান্য পেশাদারী কোর্স।
    • হস্টেলে থাকলে: প্রতি মাসে ₹৮২০
    • বাড়ি থেকে গেলে: প্রতি মাসে ₹৫৩০
  • গ্রুপ ৩: স্নাতক স্তরের সাধারণ কোর্স (যেমন BA, BSc)।
    • হস্টেলে থাকলে: প্রতি মাসে ₹৫৭০
    • বাড়ি থেকে গেলে: প্রতি মাসে ₹৩০০
  • গ্রুপ ৪: একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণীর মতো কোর্স।
    • হস্টেলে থাকলে: প্রতি মাসে ₹৩৮০
    • বাড়ি থেকে গেলে: প্রতি মাসে ₹২৩০

(এখানে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া হলো, টাকার অঙ্ক সামান্য পরিবর্তন হতে পারে)

২. বাধ্যতামূলক ফি-এর প্রতিদান (Reimbursement of Compulsory Fees):

আপনার কোর্সের টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি, লাইব্রেরি ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি-এর মতো সমস্ত বাধ্যতামূলক (Non-refundable) খরচ সরকার সরাসরি আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেবে।

সুতরাং, আপনার রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা এবং ফি প্রতিদানের অঙ্ক যোগ করলে মোট আর্থিক সহায়তার পরিমাণটি সহজেই বছরে ₹২৫,০০০ থেকে ₹৫০,০০০ বা তারও বেশি হতে পারে, বিশেষ করে পেশাদারী কোর্সের ক্ষেত্রে।

কীভাবে আবেদন করবেন? ধাপে ধাপে জেনে নিন পুরো প্রক্রিয়া

আবেদন প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ অনলাইন, তাই আপনাকে কোথাও দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। সাধারণত ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালে (National Scholarship Portal – NSP) এর জন্য আবেদন করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ওয়েসিস স্কলারশিপ পোর্টাল (Oasis Scholarship Portal) একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

(আবেদন করার পদ্ধতির একটি ফ্লো-চার্ট বা গ্রাফিকাল ছবি এখানে ব্যবহার করলে পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে)

আবেদন প্রক্রিয়াটি নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো:

  1. নতুন রেজিস্ট্রেশন: প্রথমে আপনাকে NSP বা আপনার রাজ্যের নির্দিষ্ট স্কলারশিপ পোর্টালে গিয়ে “New Registration” করতে হবে। এখানে আপনার নাম, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ দিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে।
  2. লগইন ও ফর্ম পূরণ: রেজিস্ট্রেশনের পর আপনি একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবেন। সেটি দিয়ে লগইন করে Dr BR Ambedkar Scholarship বা সমতুল্য পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রকল্পটি বেছে নিন। এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক আয়, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।
  3. নথি আপলোড: প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি (Documents) স্ক্যান করে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে (সাধারণত PDF বা JPG) আপলোড করতে হবে।
  4. চূড়ান্ত জমা (Final Submission): সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করে ফর্মটি চূড়ান্তভাবে জমা দিন। জমা দেওয়ার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন কপি প্রিন্ট করে নিজের কাছে রেখে দিন।
  5. ভেরিফিকেশন: আপনার আবেদনটি প্রথমে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল/কলেজ), তারপর জেলা এবং রাজ্য স্তরে যাচাই করা হবে। সমস্ত স্তরে অনুমোদিত হলেই স্কলারশিপের টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকবে।

    মিলবে ৪৮,০০০ টাকা ও ল্যাপটপ! Jagadish Chandra Bose Scholarship-এ আবেদন শুরু, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি

আবেদনের জন্য কোন কোন নথি হাতের কাছে রাখতেই হবে?

আবেদন করার সময় যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তার জন্য আগে থেকেই এই নথিগুলি স্ক্যান করে প্রস্তুত রাখুন:

  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • শেষ পরীক্ষার মার্কশিট বা সার্টিফিকেট (যেমন, মাধ্যমিকের মার্কশিট)।
  • সরকার অনুমোদিত জাতিগত শংসাপত্র (Caste Certificate)।
  • পারিবারিক বার্ষিক আয়ের শংসাপত্র (Income Certificate)।
  • আধার কার্ড (Aadhaar Card)।
  • ব্যাঙ্ক পাসবুকের প্রথম পাতার স্ক্যান কপি (যেখানে অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং IFSC কোড স্পষ্ট বোঝা যায়)।
  • বর্তমান কোর্সে ভর্তির প্রমাণ বা ফি প্রদানের রশিদ।
  • বাসস্থানের প্রমাণপত্র (Domicile Certificate)।

গুরুত্বপূর্ণ তারিখ: আবেদনের শেষ দিন কবে?

পোস্ট-ম্যাট্রিক স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত প্রতি বছর আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় এবং ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলে। তবে এই তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হতে পারে। তাই, জুলাই মাস থেকে নিয়মিত ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টাল (NSP) বা আপনার রাজ্যের পোর্টালে নজর রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।

শিক্ষাই হলো উন্নতির চাবিকাঠি। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা যেন কোনোভাবেই আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেই লক্ষ্যেই Dr BR Ambedkar Scholarship একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই স্কলারশিপ শুধুমাত্র একটি আর্থিক সহায়তা নয়, এটি সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক এবং লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি মাধ্যম। যদি আপনি যোগ্য হন, তবে দেরি না করে আজই প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করুন এবং আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন। আপনার সামান্য প্রচেষ্টা আপনার শিক্ষাজীবনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কোনো অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাইলে, নিচে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন।

About Author
Laboni Das

এখানে লাবনী দাশের জন্য একটি সম্ভাব্য Author Bio প্রস্তাব করছি: লাবনী দাশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি একজন উদীয়মান লেখিকা এবং সাংবাদিক, যিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমসাময়িক বিষয়ে লিখে থাকেন। তাঁর লেখায় সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ফুটে ওঠে। লাবনী নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে প্রবন্ধ, গল্প ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন।