ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দিল্লি (IIT-Delhi) যৌথভাবে একটি অত্যাধুনিক লাইটওয়েট বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরি করেছে যা সৈন্যদের ৩৬০-ডিগ্রি সুরক্ষা প্রদান করে। এই নতুন জ্যাকেটটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ABHED’, যা পলিমার এবং বোরন কার্বাইড সিরামিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ABHED জ্যাকেটগুলি বিভিন্ন ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (BIS) স্তরের জন্য ন্যূনতম ৮.২ কেজি থেকে ৯.৫ কেজি ওজনের মধ্যে রয়েছে। এই মডুলার ডিজাইনের জ্যাকেটগুলিতে সামনে ও পিছনে বর্ম রয়েছে যা সৈন্যদের সর্বাধিক সুরক্ষা প্রদান করে। ABHED জ্যাকেটগুলি ভারতীয় সৈন্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা তাদের শারীরিক গঠনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই জ্যাকেটগুলি মোট ৩৪০০ বর্গ সেন্টিমিটার এলাকা সুরক্ষিত করে এবং এতে শক্ত ও নরম বর্ম রয়েছে। ABHED জ্যাকেটগুলি BIS লেভেল ৫ ও ৬ উভয় স্তরের সুরক্ষা প্রদান করে, যা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বন্দুকের গুলি থেকেও সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
ভারতের নতুন বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সমর-২ এর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ডিসেম্বরে
DRDO-র ডিফেন্স ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড স্টোরস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট (DMSRDE) ইতিমধ্যে দেশের সবচেয়ে হালকা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরি করেছে যা ৭.৬২ x ৫৪ R API (স্নাইপার রাউন্ড) গুলি থেকে সুরক্ষা দেয়। এই জ্যাকেটটি BIS ১৭০৫১-২০১৮ মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ হুমকি স্তর ৬ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
DMSRDE-র উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, “এটি প্রথম মনোলিথিক সিরামিক জ্যাকেট যা স্নাইপার রাইফেল, লাইট মেশিন গান এবং শটগানে ব্যবহৃত ৭.৬২ x ৫৪ মিমি R (৭.৬২x৫৪R) রাইফেল কার্তুজ থামাতে পারে”। তিনি আরও জানান যে এই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটটি সম্প্রতি টার্মিনাল ব্যালিস্টিকস রিসার্চ ল্যাবরেটরি (TBRL), চণ্ডীগড়ে BIS ১৭০৫১-২০১৮ অনুযায়ী লেভেল ৬-এর কন্ডিশনিং প্রোটোকল টেস্টিং সফলভাবে পাস করেছে।
DMSRDE-র জ্যাকেটটি নতুন ডিজাইন পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নতুন উপাদান এবং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। জ্যাকেটের সামনের হার্ড আর্মার প্যানেল (HAP) একাধিক আঘাত (৬টি শট) ৭.৬২ x ৫৪ R API (স্নাইপার রাউন্ড) গুলি থেকে সুরক্ষা দেয়, উভয় ICW (ইন-কনজাংশন উইথ) এবং স্ট্যান্ডঅ্যালোন ডিজাইনে।
এরগোনোমিকভাবে ডিজাইন করা সামনের HAP মনোলিথিক সিরামিক প্লেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যার পিছনে পলিমার ব্যাকিং রয়েছে, যা অপারেশনের সময় পরিধানযোগ্যতা ও আরাম বাড়ায়। ICW হার্ড আর্মার প্যানেল (HAP) এবং স্ট্যান্ডঅ্যালোন HAP-এর এরিয়াল ঘনত্ব যথাক্রমে ৪০ কেজি/বর্গমিটার এবং ৪৩ কেজি/বর্গমিটারের কম। প্যানেলটি ৬০ মিলিমিটারের কম ইন্টারশট দূরত্বে লেভেল ৬ বুলেটের কমপক্ষে ৬টি রাউন্ড প্রতিহত করতে পারে।
অগ্নিবীরদের জন্য মোদি সরকারের বড় পদক্ষেপ, এবার আরো বেশি সুযোগ
DRDO চেয়ারম্যান এবং প্রতিরক্ষা R&D বিভাগের সচিব DMSRDE-কে “সর্বোচ্চ হুমকি স্তর থেকে সুরক্ষার জন্য এই সবচেয়ে হালকা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের সফল উন্নয়নের” জন্য প্রশংসা করেছেন।
ABHED জ্যাকেটের উন্নয়ন ভারতীয় সৈন্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এই জ্যাকেটগুলি তাদের অপারেশনাল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে কারণ এগুলি হালকা ওজনের এবং সর্বাধিক সুরক্ষা প্রদান করে। ৩৬০-ডিগ্রি সুরক্ষা সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে আরও নিরাপদ রাখবে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াবে।
এই উন্নয়ন ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্থানীয়ভাবে উন্নত এই প্রযুক্তি ভারতকে বিদেশী সরবরাহকারীদের উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে এবং দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াবে।
ABHED জ্যাকেটের উন্নয়ন DRDO এবং IIT-Delhi-এর মধ্যে সফল সহযোগিতার একটি উদাহরণ। এই ধরনের যৌথ প্রকল্পগুলি ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী প্রতিরক্ষা সমাধান তৈরির পথ খুলে দিতে পারে।
Dengue: ৫টি অবাক করা ঘরোয়া কৌশলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়াকে দিন চ্যালেঞ্জ!
তবে, এই জ্যাকেটগুলির দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা এবং বাস্তব পরিস্থিতিতে কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এছাড়াও, এই প্রযুক্তি ব্যাপক উৎপাদন ও বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, ABHED জ্যাকেটের উন্নয়ন ভারতীয় সৈন্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এটি শুধুমাত্র সৈন্যদের নিরাপত্তা বাড়াবে না, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতাও প্রদর্শন করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্ভাবনগুলি ভারতকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক খেলোয়াড় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।