Duare Sarkar Ration Card Check Program: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকার’-এর মাধ্যমে এখন নাগরিকরা খুব সহজেই তাদের রেশন কার্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যাচাই করতে পারছেন। রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, দুয়ারে সরকার পোর্টালে গিয়ে নাগরিকরা তাদের রেশন কার্ডের স্ট্যাটাস, কার্ডের ধরন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, মাসিক বরাদ্দ খাদ্যশস্যের পরিমাণ ইত্যাদি সব তথ্য দেখতে পারবেন।
এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পৌরসভার ওয়ার্ড স্তরে শিবির আয়োজন করা হয়। সেখানে সরকারি কর্মচারীরা উপস্থিত থেকে নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করেন। রেশন কার্ড সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা বা অভিযোগ নিয়ে নাগরিকরা এই শিবিরে যেতে পারেন। তাছাড়া অনলাইনেও রেশন কার্ড চেক করার সুবিধা রয়েছে।
খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, “দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা নাগরিকদের কাছে সরকারি পরিষেবাগুলি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। রেশন কার্ড সংক্রান্ত সেবা এর মধ্যে অন্যতম। এখন থেকে কেউ যদি তার রেশন কার্ডের তথ্য জানতে চান বা কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তিনি খুব সহজেই তা করতে পারবেন।”
মোবাইল নম্বর দিয়ে রেশন কার্ড চেক: এক ক্লিকে জেনে নিন আপনার খাদ্য সুরক্ষার অধিকার!
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুয়ারে সরকার প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০.৫ কোটি মানুষ ৫.৬ লক্ষেরও বেশি শিবিরে উপস্থিত হয়েছেন। এর মধ্যে রেশন কার্ড সংক্রান্ত পরিষেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। খাদ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় রাজ্যে মোট ৯ কোটিরও বেশি মানুষ রেশন পাচ্ছেন। ২০,০০০ এরও বেশি দোকান থেকে এই খাদ্যশস্য বিতরণ করা হচ্ছে।
পদ্ধতি | বিবরণ |
---|---|
অনলাইন | দুয়ারে সরকার পোর্টালে গিয়ে রেশন কার্ড নম্বর দিয়ে চেক করা যাবে |
অফলাইন | নিকটস্থ দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে আবেদন করতে হবে |
মোবাইল অ্যাপ | ‘দুয়ারে সরকার’ অ্যাপ ডাউনলোড করে চেক করা যাবে |
হেল্পলাইন | ১৮০০৩৪৫০১১৭ নম্বরে ফোন করে জানা যাবে |
– কার্ডধারীর নাম ও ঠিকানা
– পরিবারের সদস্য সংখ্যা
– কার্ডের ধরন (AAY/PHH/SPHH)
– মাসিক বরাদ্দ খাদ্যশস্যের পরিমাণ
– নির্দিষ্ট রেশন দোকানের নাম ও ঠিকানা
– গত ৬ মাসের লেনদেনের হিসাব
– নতুন রেশন কার্ডের জন্য আবেদন
– বিদ্যমান কার্ডে নাম যোগ করা
– ঠিকানা পরিবর্তন
– রেশন দোকান পরিবর্তন
– ডুপ্লিকেট কার্ডের জন্য আবেদন
দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে রেশন কার্ড চেক করার সুবিধা নিয়ে নাগরিকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কলকাতার বাসিন্দা সুমিতা দাস বলেন, “আগে রেশন কার্ডের কোনো তথ্য জানতে হলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত। এখন ঘরে বসেই সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। এটা খুবই সুবিধাজনক হয়েছে।”
কোন রেশন কার্ডে কত খাদ্যশস্য পাবেন গ্রাহকরা? দেখে নিন আপডেটেট তথ্য
হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক অমল মণ্ডল জানান, “আমার রেশন কার্ডে কিছু ভুল তথ্য ছিল। দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে আবেদন করেছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি সেটা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এখন সঠিক পরিমাণে খাদ্যশস্য পাচ্ছি।”
তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বীরভূমের এক গ্রামবাসী জানান, তাদের এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ খুব দুর্বল। ফলে অনলাইনে রেশন কার্ড চেক করতে অসুবিধা হয়। এছাড়া বয়স্ক মানুষদের পক্ষে অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বয়স্কদের জন্য সহজ পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি পঞ্চায়েতে একজন করে কর্মী নিয়োগ করা হবে, যারা নাগরিকদের অনলাইন পরিষেবা ব্যবহারে সাহায্য করবেন।
দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে রেশন কার্ড চেক করার সুবিধা নাগরিকদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর ফলে স্বচ্ছতা বাড়বে, দুর্নীতি কমবে। সাধারণ মানুষ সহজে খাদ্য নিরাপত্তা পাবেন। এটি দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে।”
তবে তিনি সতর্কতাও দিয়েছেন। তার মতে, “শুধু অনলাইন পদ্ধতির উপর নির্ভর করলে চলবে না। গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। তাই অফলাইন পদ্ধতিও চালু রাখতে হবে।”
সামগ্রিকভাবে, দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে রেশন কার্ড চেক করার সুবিধা নাগরিকদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে সরকারি পরিষেবা আরও সহজলভ্য হয়েছে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা মোকাবিলা করতে হবে। ডিজিটাল ও অফলাইন উভয় পদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে এই প্রকল্পকে আরও কার্যকর করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।