দুর্গাপুজো ২০২৪: কলা বউ কি সত্যিই গণেশের বউ? জানলে অবাক হবেন আসল রহস্য!

Ganesh's wife myth: দুর্গাপুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল কলা বউ। বাঙালি সমাজে এই ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। কিন্তু কলা বউ নিয়ে রয়েছে নানা রকম মতভেদ ও রহস্য। অনেকেই মনে করেন যে…

Avatar

 

Ganesh’s wife myth: দুর্গাপুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল কলা বউ। বাঙালি সমাজে এই ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। কিন্তু কলা বউ নিয়ে রয়েছে নানা রকম মতভেদ ও রহস্য। অনেকেই মনে করেন যে কলা বউ হল গণেশের স্ত্রী। আবার অনেকে বলেন এটি আসলে দেবী দুর্গারই এক রূপ। আসুন জেনে নেওয়া যাক এর পিছনের আসল কাহিনী।

কলা বউ বা নবপত্রিকা হল নয়টি গাছের সমন্বয়ে তৈরি একটি প্রতীকী দেবী মূর্তি। এর মধ্যে কলা গাছটি প্রধান। সপ্তমীর দিন ভোরে এই কলা বউকে স্নান করানো হয় নদী বা পুকুরের জলে। তারপর তাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে সাজানো হয় নববধূর মতো। এরপর তাকে স্থাপন করা হয় গণেশের পাশে।কিন্তু কলা বউ কি সত্যিই গণেশের স্ত্রী? এ নিয়ে রয়েছে নানা মত। একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, একবার গণেশের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের আগে গণেশ বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর মা দুর্গা প্রচুর খাবার খাচ্ছেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় দুর্গা বলেন, “যদি তোর বউ আমাকে খেতে না দেয়?” এ কথা শুনে গণেশ একটি কলা গাছ কেটে এনে মাকে দিয়ে বলেন, “এই তোমার বউ”। এভাবেই নাকি কলা বউয়ের উৎপত্তি।কিন্তু এই গল্পটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

গণেশ মন্ত্রের অলৌকিক শক্তি: জীবনের সকল সমস্যার সমাধান এক মন্ত্রে!

বাস্তবে কলা বউ বা নবপত্রিকার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এর মূলে রয়েছে প্রকৃতি পূজার ধারণা। নয়টি উদ্ভিদকে একত্রে পূজা করার মাধ্যমে প্রকৃতির শক্তিকে আহ্বান করা হত। এই নয়টি গাছ হল – কলা, হলুদ, মানকচু, অশোক, জয়ন্তী, বিল্বপত্র, ডালিম, ধান ও অপরাজিতা লতা। এগুলি প্রত্যেকটি কোনো না কোনো দেবীর প্রতীক।পণ্ডিতদের মতে, নবপত্রিকা আসলে দেবী দুর্গারই এক রূপ। কৃত্তিবাসী রামায়ণে উল্লেখ আছে যে রাম নবপত্রিকা পূজা করেছিলেন। তাই এটি গণেশের স্ত্রী নয়, বরং দুর্গার প্রতীক। কলা বউকে গণেশের পাশে রাখা হয় কারণ গণেশ ১৮টি ঔষধি উদ্ভিদের সৃষ্টিকর্তা বলে মনে করা হয়।

বাংলার কিছু অঞ্চলে এখনও নবপত্রিকা পূজার প্রাচীন রূপ দেখা যায়। সেখানে কলা গাছের সাথে অন্য আটটি গাছের ডাল বেঁধে পূজা করা হয়। এটি মূলত ফসলের দেবী হিসেবে পূজিত হত। শরৎকালে ফসল কাটার আগে কৃষকরা এই পূজা করতেন ভালো ফসলের আশায়।কলকাতার বনেদি বাড়িগুলোতে একসময় নবপত্রিকা স্নান খুব জাঁকজমকের সাথে পালন করা হত। রানী রাসমণির স্বামী নবপত্রিকা স্নানের জন্য গঙ্গার দিকে একটি রাস্তাও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কালক্রমে মূর্তি পূজা বেশি প্রাধান্য পাওয়ায় নবপত্রিকার গুরুত্ব কিছুটা কমে গেছে।

গণেশ ঠাকুরের মূর্তি কোন দিকে রাখলে আসবে সৌভাগ্য?

তবে এখনও দুর্গাপুজোর অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে কলা বউ পূজিত হয়। সপ্তমীর ভোরে কলা বউ স্নান একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। অনেক জায়গায় পাল্কিতে করে কলা বউকে নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। স্নানের পর তাকে নববধূর মতো সাজিয়ে মণ্ডপে আনা হয় কলা বউয়ের তাৎপর্য নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি প্রকৃতির সাথে মানুষের যোগসূত্র স্থাপন করে।
নয়টি গাছের সমন্বয়ে তৈরি এই প্রতীকী দেবী মূর্তি প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে। এভাবে কলা বউ পূজার মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কলা বউ আসলে গণেশের স্ত্রী নয়। এটি দেবী দুর্গারই এক রূপ এবং প্রকৃতি পূজার প্রতীক। বহু প্রাচীন এই ঐতিহ্য আজও বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে। দুর্গাপুজোর সময় কলা বউ পূজার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির সাথে নিজেদের সম্পর্ককে নতুন করে স্মরণ করি।
About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম