Durga Puja Timing 2024: ২০২৪ সালের দুর্গাপুজো আসছে অক্টোবর মাসে। এবারের পুজোর তারিখ ৮ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। মহালয়া হবে ৭ অক্টোবর। দুর্গাপুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান সন্ধিপূজা করতে হবে মাত্র ৪৮ মিনিটের মধ্যে। এই সময়ে দেবী চামুণ্ডা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন চণ্ড ও মুণ্ড অসুর বধ করার জন্য।
দুর্গাপুজো হিন্দু ধর্মের অন্যতম বড় উৎসব। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের হিন্দুরা এই উৎসব খুব ধুমধামের সঙ্গে পালন করে থাকেন। পুরাণ অনুযায়ী, এই সময় দেবী দুর্গা মহিষাসুর দৈত্যকে বধ করেছিলেন। তাই এই উৎসব অসৎ শক্তির উপর সৎ শক্তির বিজয়ের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।
• মহালয়া – ২ অক্টোবর, ২০২৪ (সোমবার)
• মহা পঞ্চমী – ৮ অক্টোবর, ২০২৪ (মঙ্গলবার)
• মহা ষষ্ঠী – ৯ অক্টোবর, ২০২৪ (বুধবার)
• মহা সপ্তমী – ১০ অক্টোবর, ২০২৪ (বৃহস্পতিবার)
• মহা অষ্টমী – ১১ অক্টোবর, ২০২৪ (শুক্রবার)
• মহা নবমী – ১২ অক্টোবর, ২০২৪ (শনিবার)
• বিজয়া দশমী – ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ (রবিবার)
সন্ধিপূজা হল দুর্গাপুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই পূজা করা হয় অষ্টমী তিথি শেষ হওয়া এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার সন্ধিক্ষণে। পুরাণ অনুযায়ী, এই সময়ে দেবী দুর্গা চামুণ্ডা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুরকে বধ করার জন্য। সন্ধিপূজা মোট ৪৮ মিনিট ধরে চলে। এই ৪৮ মিনিটের মধ্যে অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সন্ধিপূজার সময় দেবীকে ১০৮টি পদ্মফুল, ১০৮টি বেলপাতার মালা, ১০৮টি মাটির প্রদীপ, অলংকার, শাড়ি, জবাফুল, অসিদ্ধ চাল এবং একটি লাল ফল নিবেদন করা হয়। পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে এই পূজা সম্পন্ন করেন।
• মহালয়া: এদিন থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয়। সকালে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠান শোনার রীতি রয়েছে।
• ষষ্ঠী: এদিন থেকে পুজো শুরু হয়। দেবীর বোধন করা হয়।
• সপ্তমী: কলাবউ স্নান করানো হয়।
• অষ্টমী: কুমারী পুজো ও সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
• নবমী: মহাআরতি ও বলিদান অনুষ্ঠিত হয়।
• দশমী: বিসর্জন ও সিঁদুর খেলা হয়।
দুর্গাপুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। পুজোর সময় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্ডাল দর্শন, নতুন পোশাক পরা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
দুর্গাপুজোর অর্থনৈতিক প্রভাবও যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ সালে ঘোষণা করেছিলেন যে, রাজ্য সরকার প্রতিটি কমিউনিটি পুজো কমিটিকে ২৫,০০০ টাকা করে অনুদান দেবে। এছাড়া মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত পুজো কমিটিগুলিকে অতিরিক্ত ৫,০০০ টাকা দেওয়া হবে। এর ফলে রাজ্য সরকারের মোট ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল।
দুর্গাপুজোর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৯ সালে ভারত সরকার কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মনোনীত করেছিল।
দুর্গাপুজোর সময় পান্ডাল দর্শন একটি জনপ্রিয় কার্যক্রম। প্রতি বছর বিভিন্ন থিম নিয়ে অসাধারণ সব পান্ডাল তৈরি করা হয়। এগুলি দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করে। পান্ডালগুলি শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, শিল্পকর্মের দিক থেকেও অসাধারণ হয়ে থাকে।
দুর্গাপুজোর সময় খাবারের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভোগ প্রসাদ ছাড়াও নানা ধরনের মিষ্টি ও খাবার তৈরি করা হয়। পুলি পিঠা, পায়েস, লুচি-আলুর দম, ইলিশ মাছ, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদি এই সময়ের জনপ্রিয় খাবার।
শিরদাঁড়া দেখলেই ভয় পাচ্ছে তৃণমূল! পুজো মণ্ডপে মেরুদণ্ড প্রদর্শনে পুলিশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ
দুর্গাপুজো শুধু হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এটি সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্যের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বর্তমানে দুর্গাপুজো শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান সহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালিরা দুর্গাপুজো পালন করে থাকেন।
২০২৪ সালের দুর্গাপুজো আগামী বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ পান্ডাল দর্শন, পুজো অর্চনা, নতুন পোশাক পরা, খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠবেন। পাঁচ দিনের এই উৎসব শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।
তবে মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব এখনও সম্পূর্ণ কেটে যায়নি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো উদযাপন করা উচিত। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বারবার হাত ধোয়ার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সারাংশে, ২০২৪ সালের দুর্গাপুজো ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। সন্ধিপূজা করতে হবে মাত্র ৪৮ মিনিটের মধ্যে। এই পাঁচ দিনের উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক মিলনের একটি অনন্য উদাহরণ। আসুন আমরা সবাই মিলে আনন্দের সাথে এই উৎসব উদযাপন করি, সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও মাথায় রাখি।
মন্তব্য করুন