নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজা: আমেরিকায় বাঙালি সংস্কৃতির জয়জয়কার

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের বিখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হলো দুর্গাপূজা। গত ৫ ও ৬ অক্টোবর দুদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে 'দ্য বেঙ্গলি ক্লাব, ইউএসএ'। এই ঐতিহাসিক আয়োজনে হাজার হাজার…

Avatar

 

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের বিখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হলো দুর্গাপূজা। গত ৫ ও ৬ অক্টোবর দুদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘দ্য বেঙ্গলি ক্লাব, ইউএসএ’। এই ঐতিহাসিক আয়োজনে হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালি ও আমেরিকান নাগরিক অংশগ্রহণ করেন।

টাইমস স্কোয়ারের মাঝখানে স্থাপিত হয় দুর্গা প্রতিমা। চারপাশে বিলবোর্ডে ফুটে ওঠে বাংলা লেখা ও ছবি। বাংলা গান বাজতে থাকে। পরম্পরাগত পোশাকে সেজে নাচতে থাকেন উপস্থিত মানুষজন। পুরো এলাকাটি যেন কলকাতার কোনো পুজোমণ্ডপে পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানের প্রথম দিন নবমী পুজো ও দ্বিতীয় দিন দশমী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গা স্তোত্র পাঠ, আরতি, অঞ্জলি প্রদান, সিঁদুর খেলাসহ সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ছিল নাচ-গান। বলিউড সঙ্গীতেও মেতে ওঠেন উপস্থিত সবাই।

এই আয়োজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে। একজন ব্যবহারকারী লেখেন, “এটা সত্যিই ঐতিহাসিক! প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজা টাইমস স্কোয়ারে, যা বাঙালি সংস্কৃতিকে নিউইয়র্ক শহরের কেন্দ্রস্থলে নিয়ে এলো। ভারতীয় প্রবাসীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং বিশ্বমঞ্চে ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী।”

Bangladeshi Minority Security: হুমকি ও আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে দুর্গাপূজা,সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

আরেকজন মন্তব্য করেন, “এটা ভারতীয়দের সফট পাওয়ার। নিউইয়র্কে এই উদযাপনের জন্য অভিনন্দন।”

প্রবাসী বাঙালিদের কাছে এই আয়োজন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “টাইমস স্কোয়ারে পুজো ছিল অবাস্তব, আকস্মিক, কোলাহলপূর্ণ এবং চমৎকার। আমি যা আশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশি।”

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত এই চত্বরে বাঙালি সংস্কৃতির এমন প্রকাশ অনেকের কাছেই অভাবনীয় ছিল। কিন্তু এর মাধ্যমে আমেরিকায় বসবাসরত বাঙালিরা নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াস দেখালেন। পাশাপাশি আমেরিকান সমাজের সামনে তুলে ধরলেন বাংলার লোকজ সংস্কৃতির এক ঝলক।

অনুষ্ঠানে ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টার আওয়াজে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। ধুনুচি নাচের তালে তালে দুলতে থাকেন উপস্থিত নারীরা। বাংলা গান ‘ঢাক বাজে কাসর বাজে’ গাইতে থাকেন সবাই। রঙিন শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠেন অংশগ্রহণকারীরা।

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার রুচিকা জৈন একটি ভিডিও শেয়ার করে বলেন, “ঐতিহ্যবাহী উৎসব, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং সম্প্রদায়ের মিলনের অনুভূতি নিয়ে আমরা এই প্রিয় উৎসবকে সম্মান জানাচ্ছি। নিউইয়র্ক সিটির হৃদয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিতে নিজেকে নিমজ্জিত করার এই অনন্য সুযোগ হাতছাড়া করবেন না!”

Bangladeshi Hindu: নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যান, সেনাপ্রধানের আশ্বাস হিন্দুদের, স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা?

দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। মূলত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, আসাম, ওড়িশা, ত্রিপুরাসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এই উৎসব বিশেষভাবে পালিত হয়। তবে বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি সম্প্রদায় এই উৎসব পালন করে থাকেন।

দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মাধ্যমে শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য সবকিছুর সমন্বয় ঘটে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়।

টাইমস স্কোয়ারে এই আয়োজনের মাধ্যমে আমেরিকার মূল ধারার মানুষের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি পৌঁছে গেল। অনেক আমেরিকান নাগরিক প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা দেখার সুযোগ পেলেন। একজন আমেরিকান দর্শক মন্তব্য করেন, “এটা একটা দারুণ অনুষ্ঠান। যারা বাঙালি নন তারাও এই সংস্কৃতি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।”

বাংলাদেশের একজন প্রবাসী বলেন, “আমেরিকায় থাকলেও আমরা আমাদের সংস্কৃতি ভুলিনি। টাইমস স্কোয়ারে দুর্গাপূজা আমাদের সেই প্রমাণ দিল। এটা আমাদের জন্য গর্বের।”

এই ঐতিহাসিক আয়োজন শুধু প্রবাসী বাঙালিদের জন্যই নয়, সমগ্র ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্যও গর্বের। এর মাধ্যমে বিশ্বের সামনে ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য তুলে ধরা হলো। পাশাপাশি আমেরিকার মতো দেশে ভারতীয় সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও প্রমাণিত হলো।

বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এভাবে দুর্গাপূজা আয়োজন করতে পারা নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্বায়নের যুগে সংস্কৃতির সীমানা আর কোনো দেশের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়।

তবে এই আয়োজন যে শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল তা নয়। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তৈরি হলো। আমেরিকানরা জানতে পারলেন বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। আবার প্রবাসী বাঙালিরাও নিজেদের শিকড়ের সাথে যুক্ত থাকার সুযোগ পেলেন।

এই ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতে আরও বেশি হবে বলে আশা করা যায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হবে, যা বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামগ্রিকভাবে, টাইমস স্কোয়ারে দুর্গাপূজার এই আয়োজন ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি প্রমাণ করে যে, সংস্কৃতি কোনো ভৌগোলিক সীমানায় আবদ্ধ নয়। বরং এটি মানুষের মনে মনে বাস করে এবং যেখানেই মানুষ যায়, সেখানেই তার সংস্কৃতি নিয়ে যায়। আমেরিকার বুকে বাঙালি সংস্কৃতির এই বিজয় নিঃসন্দেহে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।

 

About Author
Avatar

আন্তর্জাতিক খবরের সর্বশেষ আপডেট, গভীর বিশ্লেষণ এবং বিশ্বের প্রভাবশালী ঘটনাবলীর বিস্তারিত প্রতিবেদন পেতে আমাদের International Desk-এ আসুন। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, রাজনৈতিক গতিবিধি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে এই পাতাটি আপনার একমাত্র গন্তব্য।