DYFI leadership election: ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (DYFI)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির নেতৃত্বে বড় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে সংগঠন। বহরমপুরে ২১-২৩ জুন অনুষ্ঠিত ২০তম রাজ্য সম্মেলনের প্রাক্কালে নিশ্চিত হয়ে গেছে, বর্তমান সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় দায়িত্ব ছাড়ছেন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে সম্পাদক পদে ধ্রুবজ্যোতি সাহার নাম প্রায় চূড়ান্ত, আর সভাপতি পদে উঠে এসেছে পূর্ব বর্ধমানের অয়নাংশু সরকারের নাম।
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে DYFI-র রাজ্য সম্পাদক হিসেবে সংগঠনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ায় এবার তাঁকে যুব সংগঠনের দায়িত্ব ছাড়তে হচ্ছে। DYFI-র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বয়সসীমা ও দায়িত্বের ভার বাড়ার কারণে এই রদবদল প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
নতুন সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচন নিয়ে পার্টির অন্দরে বেশ কিছুদিন ধরেই জোর টানাপোড়েন চলছিল। বিশেষ করে বর্ধমান ও কলকাতা লবির মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট ছিল। বর্ধমান লবি চাইছিল অয়নাংশু সরকারকে সভাপতি এবং ধ্রুবজ্যোতি সাহাকে সম্পাদক পদে বসাতে। অন্যদিকে, কলকাতা লবির একাংশ কলতান দাশগুপ্তের নামও প্রস্তাব করেছিল সভাপতি বা সম্পাদক হিসেবে। তবে শেষ পর্যন্ত বর্ধমান লবির প্রভাবই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া, সংগঠনের নারী নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব নিয়েও অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। মীনাক্ষীর বিদায়ের পর নারী মুখ হিসেবে দীপ্সিতা ধরের নামও আলোচনায় আসে। যদিও তিনি দিল্লি শাখার সদস্য হওয়ায়, সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতার কারণে তাঁর নাম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
DYFI-র নেতৃত্ব বদলের এই প্রক্রিয়ায় পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা সহ একাধিক জেলা কমিটিতেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। পুরুলিয়াতে জেলা সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচন ঘিরে প্রকাশ্য বিরোধিতা দেখা গেলেও, শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর পড়েছে।
সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, DYFI-র বর্তমান সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা মীনাক্ষীর দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী এবং সংগঠনের রাজপথের লড়াইয়ে পরিচিত মুখ। তাঁর সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অন্যদিকে, অয়নাংশু সরকার তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত হলেও, বর্ধমান জেলার সংগঠনে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং সভাপতি পদে তাঁর নামই এগিয়ে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে DYFI-র সাংগঠনিক শক্তি কিছুটা কমেছে। রাজ্যে তাদের ভোটব্যাঙ্ক প্রায় শূন্য হলেও, রাজপথে আন্দোলন ও বক্তৃতায় সংগঠনের উপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান। মীনাক্ষীর নেতৃত্বে একাধিক গণআন্দোলন সংগঠিত হয়েছে, যা সংগঠনের পরিচিতি বাড়িয়েছে। তবে নেতৃত্ব বদলের এই মুহূর্তে, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নতুন নেতৃত্বের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করা, তরুণদের আকৃষ্ট করা এবং সিপিএমের যুব শাখা হিসেবে রাজ্য রাজনীতিতে আরও দৃঢ় অবস্থান তৈরি করা। DYFI-র ইতিহাসে বরাবর দেখা গেছে, নেতৃত্ব নির্বাচনে বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এবারও সেই ধারা বজায় থাকছে।
সবশেষে, বহরমপুরের সম্মেলনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষিত হবে বলে সূত্রের খবর। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ও পার্টির অভ্যন্তরীণ সমীকরণ দেখে অনুমান করা যায়, DYFI-র পরবর্তী সম্পাদক হচ্ছেন ধ্রুবজ্যোতি সাহা এবং সভাপতি হচ্ছেন অয়নাংশু সরকার। এই নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে সংগঠন কতটা এগোতে পারে, তা সময়ই বলবে।